বছরের প্রথম দিনে প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী আজ পালিত হচ্ছে পাঠ্যপুস্তক উত্সব। প্রথম থেকে নবম-দশম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া দেশের সব শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যের বোর্ডের পাঠ্যবই বিতরণ করা হবে আজ। নতুন শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৫২ হাজার ৩৭৪ জন শিক্ষার্থীর হাতে ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯২৩টি বই বিতরণের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের প্রস্তুতি শেষ করেছে। ইতোমধ্যেই নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রায় ৯৫ ভাগ বই ছাপিয়ে স্কুলপর্যায়ে বিতরণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার গণভবনে বিভিন্ন শ্রেণির শিশু-কিশোরদের হাতে নতুন পাঠ্যবই তুলে দিয়ে এ উত্সবের উদ্বোধন করেছেন। শিক্ষামন্ত্রী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আজ সকাল ১০টায় রাজধানীর মতিঝিল সরকারি বালক বিদ্যালয় মাঠে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করে কেন্দ্রীয়ভাবে পাঠ্যপুস্তক উত্সব পালন করবেন। এবার মোট ৩৩ কোটি বইয়ের মধ্যে প্রাথমিকের প্রায় সাড়ে ১১ কোটি এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রায় ২১ কোটি বই রয়েছে। তবে জীবনে প্রথম স্কুলে যাওয়া প্রাক্-প্রাথমিকের শিশুশ্রেণির শিক্ষার্থীরা আজ এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবে। স্কুলে ভর্তি হলেও তারা আজ বই পাবে না। বই হাতে পাওয়ার জন্য তাদেরকে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং পাঠ্যবই ছাপাকারকরা এমন তথ্যই জানান।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সহ-সভাপতি মো. তোফায়েল খান বলেন, সবার সঙ্গে বই পাওয়ার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে এই শিশুদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। এ বিষয়টি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এনসিটিবি কেউই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেনি। অথচ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে এমন ঘটনা ঘটত না।
তিনি বলেন, দুয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে প্রাক্-প্রাথমিকের বইগুলো ছাপানোর দায়িত্ব দেওয়ার কারণেই সেগুলো আটকে গেছে। এদিকে আজ জামায়াতের হরতাল থাকায় পাঠ্যপুস্তক উত্সব কিছুটা বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল বলেছেন, যেকোনো বাধা উপেক্ষা করে ১ জানুয়ারি দেশের প্রতিটি স্কুলে পাঠ্যপুস্তক উত্সব হবে। আমরা সব ছাত্রছাত্রীর হাতে বই তুলে দিয়ে দেব।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ এবং তথ্য কর্মকর্তা রবীন্দ্রনাথ রায় জানান, ২০১৫ শিক্ষাবর্ষে প্রাক্-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শ্রেণির সম্ভাব্য ২ কোটি ২৯ লাখ ছাত্রছাত্রীর মাঝে বিতরণের জন্য ১১ কোটি ৪৩ লাখ ১৩ হাজার ৫৬৩টি পাঠ্যবই ছাপানো হয়েছে। এ ছাড়া প্রাক্-প্রাথমিক শ্রেণির জন্য ৬৭ লাখ ৫২ হাজার পাঠ্যবই ছাপানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকের শতভাগ পাঠ্যবই বিদ্যালয় পর্যায়ে পৌঁছানো হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের আওতাধীন সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, বাহরাইন, লিবিয়া, সৌদি আরব, ইতালি, কুয়েত ইত্যাদির বিদ্যালয়গুলোতে সরবরাহের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কূটনৈতিক ব্যাগের মাধ্যমে পাঠ্যবই পাঠানো হচ্ছে। এ বছর প্রকৃত ছাত্রছাত্রীদের হাতে পাঠ্যবই সরবরাহের লক্ষ্যে বই নেওয়া সব শিক্ষার্থীর ছবি তুলে সিডিতে সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে বর্তমান সরকার বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ শুরু করেছে। গত পাঁচ বছরে প্রায় ১২৩ কোটি ১৯ লাখ বই বিতরণ করা হয়েছে। মো. তোফায়েল বলেন, পাঠ্যবইয়ের কাগজ ও গুণগত মান আরও উন্নত করা গেলে জাতিসংঘ, ইউনিসেফ, ইউএনডিপি ইত্যাদি আন্তর্জাতিক সংস্থার অর্থায়নে যেসব বই ছাপিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিতরণ করা হয় তাতে বাংলাদেশও অংশগ্রহণ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারত। এ জন্য বাড়তি কোনোকিছুর প্রয়োজন নেই। শুধু পাঠ্যবই ছাপানোর সময় যে দরপত্র আহ্বান করা হয় তাতে যে মানের কথা উল্লেখ থাকে সেটা নিশ্চিত করা গেলেই এ কাজ পাওয়া সম্ভব। কিন্তু মান নিয়ন্ত্রিত না হওয়ার কারণে দেশের ছেলেমেয়েরা যেমন বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি আমরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ পাচ্ছি না।