পঞ্চগড়ের কমলা অতুলনীয়

আট বছর ধরে পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কমলা চাষ হচ্ছে। গড়ে উঠেছে ছোট-বড় শতাধিক বাগান। বাড়ির আঙিনা ও পতিত জমিতেও কমলা চাষ হচ্ছে। এখানকার কমলা আকার, রঙ ও স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়। চাষি, কৃষি বিভাগ ও বিশেষজ্ঞরা এ কমলাকে ভারতের দার্জিলিংয়ের কমলার সঙ্গে তুলনা করছেন। প্রতিটি গাছে ২০০ থেকে ৫০০ পর্যন্ত কমলা ধরেছে। কমলার রঙে রঙিন হয়ে আছে বাগানগুলো। হয়েছে বাম্পার ফলন। অনেকে কমলা বিক্রি করতে শুরু করেছেন। ফলে চাষির মুখে এখন সোনালি হাসি।

পঞ্চগড়ের মাটি ও জলবায়ু কমলা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। স্বল্প খরচ ও পরিশ্রমে অধিক মুনাফা হওয়ায় কমলা চাষের পরিধি দিন দিন বেড়েই চলেছে। জেলার পাঁচ উপজেলায় প্রায় ৭৩ হেক্টর জমিতে কমলার চাষ করা হয়েছে। গড়ে উঠেছে ছোট, বড় ও মাঝারি ধরনের শতাধিক বাগান। কেউ বা বাড়ির আঙিনার খোলা জায়গায় কমলার বাগান করেছেন। এসব বাগানে কমলা গাছের সংখ্যা প্রায় ৪১ হাজার। প্রতিটি গাছে ২০০ থেকে ২৫০টি কমলা ধরেছে। চলতি মৌসুমে পঞ্চগড় জেলায় প্রায় ২০০ মেট্রিক টন কমলা উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। প্রায় সাত হাজার কৃষককে কমলা চাষের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। পঞ্চগড়ের কমলা অত্যন্ত সুস্বাদু ও রসালো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার কমলার ফলনও ভালো হয়েছে। বর্তমানে পঞ্চগড়ের কমলা স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রফতানি হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখন কমলার আবাদ সম্প্রসারণ হচ্ছে। প্রথমদিকে শখের বশে চাষকৃত কমলা গাছের ফলন দেখে অনেক চাষিই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কমলার বাগান করেছেন। সালাউদ্দিন প্রধান, অচিন্ত্য কুমার কারকুন, বাচ্চু মিয়া, হাবীব প্রধান, সাজেদুর রহমানসহ জেলায় শতাধিক সফল কমলা চাষি সাত থেকে ১০ বছর ধরে কমলা উৎপাদন করে আসছেন। কমলা আমদানি হ্রাস ও এর আবাদ বৃদ্ধি, পুষ্টি চাহিদা মেটানো ও কৃষকের আয়-বৃদ্ধির জন্য সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় ২০০৭ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আওতায় ‘কমলা উন্নয়ন প্রকল্প’ হাতে নেয়। এ প্রকল্পের আওতায় পঞ্চগড়ের সদর, বোদা, আটোয়ারী ও তেঁতুলিয়া উপজেলায় কমলার চাষ শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করে ট্রেনিং দিয়ে বিনামূল্যে কমলার চারা বিতরণ করা হয়। এরপর থেকেই কমলা চাষে এগিয়ে আসেন চাষিদের বিরাট অংশ। বর্তমানে কমলা চাষে সফল কৃষককে দেখাদেখি ক্ষুদ্র চাষিও কমলা চাষে এগিয়ে এসেছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর প্রকল্পের অধীনে শতাধিক বাগান ও বসতবাড়ির আশপাশে প্রায় ৪১ হাজার কমলার গাছ রোপণ করা হয়। চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ২০০ মেট্রিক টন কমলার উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী মৌসুমে উৎপাদন কয়েক গুণ বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা এলাকার কমলা চাষি হাবিবুন নবী প্রধান জানান, তিনি প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে কমলার বাগান করেছেন। তিন বছর ধরে এসব বাগান থেকে ফল উত্তোলন করছেন। গত বছর প্রায় ১ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছেন। এবার তার দ্বিগুণ টাকায় কমলা বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন তিনি।

তার মতোই আরেক চাষি সালাউদ্দিন প্রধান। তার বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা বড়বাড়ি গ্রামে। তার বাগানে চার শতাধিকের বেশি কমলা গাছ রয়েছে। তিনি জানান, কমলা একটি লাভজনক ফসল। পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে আমি এসব বাগানের কমলা বিক্রি করে আসছি। প্রতি বছর ২ থেকে আড়াই লাখ টাকার কমলা বিক্রি করছি। আমাদের কমলা সাইজে বড় ও অত্যন্ত রসালো। এসব কমলা বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। বাড়ি থেকেই পাইকাররা কমলা কিনে নিয়ে যান।