কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলা একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করিয়াছে। সম্প্রতি এই উপজেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় ২০টি পয়েন্টে স্থাপন করা হইয়াছে সিসি ক্যামেরা। ক্যামেরাগুলিকে সার্বক্ষণিক সচল রাখিয়া পুলিশ মনিটরিং করিতেছে। থানার ওসি নিয়মিত ইহার দেখভাল করিতেছেন। সিসি ক্যামেরায় শনাক্ত করিয়া পুলিশ অপরাধীদের গ্রেফতার করিতেছে। ফলে দেবিদ্বার শহরে অপরাধের মাত্রা কমিয়া গিয়াছে বহুলাংশে। সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ফিরিয়া আসিয়াছে শান্তি ও স্বস্তি। এই উদ্যোগে অপরাধীরা ভীত-সন্ত্রস্ত হইয়া গা-ঢাকা দিয়াছে। আর ব্যবসায়ী মহলসহ শান্তিকামী এলাকাবাসী সন্তোষ প্রকাশ করিয়াছেন।
জানা যায়, এক সময় দেবিদ্বার উপজেলা অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়। সন্ত্রাসীদের হামলা ও ভাঙচুরে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হইয়া পড়িয়াছিল। বাড়িয়া গিয়াছিল চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য। বৃদ্ধি পাইয়াছিল ছিনতাইকারীদের উত্পাত। বখাটেরা রাস্তায় রাস্তায় স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের উত্ত্যক্ত করিত। সিএনজি, মোটরসাইকেল প্রভৃতি চোরদের অপতত্পরতা বাড়িয়া গিয়াছিল। এইভাবে নানা অন্যায়-অপরাধের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাইয়াছিল। এই প্রেক্ষিতে সামাজিক প্রতিরোধ হিসেবে স্থানীয় ব্যবসায়ী মহল ও সচেতন নাগরিক কমিটি গঠিত হয়। তাহারা প্রেসার গ্রুপ হিসাবে কাজ করে। তাহাদের চাপে ও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইহা লইয়া স্থানীয় সংসদ সদস্য ওসির সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে ওসি ব্যবসায়ীদের লইয়া উপরোক্ত উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ইহাতেই কাজ হইয়াছে এবং বর্তমানে উপজেলা সদরের সর্বত্র শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করিতেছে। এখন অপরাধী পাকড়াওসহ অবৈধ, বেপরোয়া গতির ও সন্দেহভাজন যানবাহন তল্লাশি করিয়া সহসা ব্যবস্থা গ্রহণেও পুলিশ সক্ষম হইতেছে। সামাজিক তথা সামষ্টিক উদ্যোগে যে অনেক বড় বড় সমস্যার সমাধান দ্রুত ও সহজে সম্ভব, দেবিদ্বারের জনগণ তাহার স্বাক্ষর রাখিতেছেন। দেবিদ্বারের এই আদর্শ সারাদেশেই ছড়াইয়া পড়ুক, এমনটিই কামনা করি আমরা।
আধুনিক সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার করিয়া অনেক অসাধ্য সাধন করা হইতেছে। যদিও প্রযুক্তির কতিপয় নেতিবাচক দিক রহিয়াছে, তথাপি ইহার উপকারিতার দিকটিই অধিক গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তির সদ্ব্যবহারে অপরাধীরা অপরাধ করিয়া হাতেনাতে ধরা পড়িতেছে যাহা সর্বদিক দিয়া ইতিবাচক। তবে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সুবিধা পাইতে হইলে ইহার পশ্চাতের মানুষগুলিরও সক্রিয়তা ও আন্তরিকতা থাকা প্রয়োজন। প্রয়োজন প্রশাসনেরও একান্ত সহযোগিতা ও সমর্থন। সর্বোপরি সম্মিলিত প্রতিরোধ, উদ্যোগ ও সামাজিক শাসনের প্রয়োজনীয়তাও অনস্বীকার্য। আমাদের সমাজে একসময় ছোটখাটো দ্বন্দ্ব ও বিরোধ নিরসনে গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করিতেন। পরিবারের কোন সদস্যের মান-অভিমান বা পারস্পরিক তিক্ততা দূর করিতে মুরব্বিরা আগাইয়া আসিতেন। এখন সেই অভিভাবকত্ব অনেকাংশে নাই বলিলেই চলে। ফলে সমাজে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হইতেছে যাহা সামাজিক কাঠামোকে দুর্বল ও ভঙ্গুর করিয়া তুলিতেছে। দুর্বৃত্ত ও সন্ত্রাসীরা ইহারই সুযোগ গ্রহণ করিতেছে এবং আইনের শাসনের অভাবে আরও বেপরোয়া রূপ ধারণ করিতেছে। এই দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে দেবিদ্বার আমাদের আলোর পথ দেখাইতেছে। এজন্য প্রথমেই দরকার সামাজিক উদ্যোগ ও প্রতিরোধ। সামাজিক শক্তির উদ্বোধন একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসাবে ক্রমশ:বিকাশ লাভ করিবে বলিয়াই আমাদের ধারণা।