অন্ধকারাচ্ছন্ন আমাদের এই সব অঞ্চলের বহু জায়গায় সৌরবিদ্যুত আলো দিচ্ছে

বিদ্যুত উন্নয়নের প্রধান ভিত্তি। বিদ্যুত উদ্ভাবিত হওয়ার পর তাকে কাজে লাগিয়ে মানুষ যত উন্নতি করেছে তার তুলনা হয় না। উন্নয়নের প্রধান ভিত্তি হচ্ছে এটি। নানাভাবে নানা পন্থায় উৎপাদিত হচ্ছে বিদ্যুত। তবে এখন পর্যন্ত বিদ্যুত উৎপাদনের যে কটি জনপ্রিয় মাধ্যম মানুষ উদ্ভাবন করেছে তার প্রধানটিই হচ্ছে সৌরবিদ্যুত। সৌর বিদ্যুতের কথা মানুষের খুব বেশিদিন আগে জানা ছিল না। পরবর্তীকালে বিজ্ঞানীরা এই মাধ্যমটি উদ্ভাবন করেছেন এবং সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যবস্থার কাজও শুরু হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে কয়েকটি ক্ষেত্রে এই সৌরবিদ্যুত সীমিত মাত্রায় উৎপাদিত হতো, বর্তমানে তা ব্যাপকতর হয়েছে এবং নানা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই পদ্ধতি। বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন ভবিষ্যতের বিদ্যুত উৎপাদনের প্রধান মাধ্যমই হবে সৌর পদ্ধতিতে। উন্নত বহু দেশ আগামীতে সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশেও এই বিদ্যুত উৎপাদন ব্যবস্থা বেশ কিছুদিন আগে চালু হয়েছে। এতে যথেষ্ট সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। এখনও বিদ্যুতের অভাব রয়েছে আমাদের দেশে। বহু গ্রামে বিশেষ করে চরাঞ্চলে প্রচলিত বিদ্যুত ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হয়নি। অন্ধকারাচ্ছন্ন আমাদের এই সব অঞ্চলের বহু জায়গায় সৌরবিদ্যুত আলো দিচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে ঘরে ঘরে জ্বলছে বাতি, চলছে ফ্যান, টিভি, ফ্রিজ, আলোকিত হচ্ছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, জনপদ। উল্লেখ করা যেতে পারে, বর্তমানে দেশের প্রায় ৩৫ লাখ বাড়ি সৌরবিদ্যুত ব্যবস্থার আওতায় এসে গেছে এবং এর উপকারভোগী ২ কোটি মানুষ। ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের যে লক্ষ্য ধার্য হয়েছে তার ১০ শতাংশ এই সৌরশক্তি থেকে যোগান দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
সম্প্রতি পাওয়া গেল আর একটি চমকপ্রদ তথ্য। সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে সুপেয় পানি পাচ্ছে ৫ শতাধিক পরিবার। বৃহস্পতিবার সহযোগী এক দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল বৃষ্টির পানি। এক পর্যায়ে সেখানে গড়ে ওঠে পিএসএফ তথা পুকুরের পানি শোধনের ব্যবস্থা। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অল্প হওয়ায় পানির পুরোপুরি চাহিদা মিটছিল না।
এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ মোরেলগঞ্জের এডিপি নিরাপদ পানির অপ্রতুলতা দূর করতে পরিবারভিত্তিক বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ট্যাঙ্ক বিতরণ করাসহ পিএসএফ নির্মাণ করে। ওই সংস্থার উদ্যোগে ও অর্থায়নে মোরেলগঞ্জ উপজেলা চত্বরে নির্মিত হয়েছে একটি আধুনিকমানের সোলারচালিত পন্ডসেন্ট ফিল্টার (পুকুরের পানি স্বয়ংক্রিয় উপায়ে ছেঁকে বিশুদ্ধকরণ) যা প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০০ পরিবারের দৈনন্দিন নিরাপদ পানির চাহিদা মেটাতে সক্ষম হচ্ছে। ২০০৭ সালে মোরেলগঞ্জ উপজেলা সিডরে বিধ্বস্ত হওয়ার পর এই এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনকল্পে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ রিলিফ ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। পরবর্তীতে ২০১০ সালে মোরেলগঞ্জ এডিপি কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেয়। পিছিয়ে পড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সংস্থা বিভিন্নমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তারই অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য প্রকল্পের আওতায় নিরাপদ পানির অপ্রতুলতা দূর করতে প্রায় ৮০০ পরিবারের মধ্যে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য পানির ট্যাঙ্ক ও পরীক্ষামূলকভাবে একটি সোলারচালিত পিএসএফ নির্মাণ করে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, ভবিষ্যতের বিদ্যুতই হচ্ছে সৌরবিদ্যুত। সৌরবিদ্যুতের ব্যাপারে কিছু পরিকল্পনা নেয়া হলেও এবং তাতে এরই মধ্যে অনেকখানি সুফল পাওয়া গেলেও এখনও এই ক্ষেত্রটিকে পুরোপুরি কাজে লাগানো যায়নি। আরও বড় বড় সৌরবিদ্যুত প্রকল্প গ্রহণ করা দরকার। আরও ব্যাপক পরিকল্পনা এ ক্ষেত্রে দরকার। বলা হয়, এই প্রকল্পের খরচ বেশি। দেশের সাধারণ মানুষ যাতে এর পর্যাপ্ত সুবিধা নিতে পারে সেই লক্ষ্যে সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের সরঞ্জাম বা ব্যবস্থার খরচ কমানো প্রয়োজন। মানুষের হাতে যত সহজে ও সস্তায় এই ব্যবস্থার সুবিধা পৌঁছবে ততই উপকৃত হবে মানুষ, উপকৃত হবে দেশ, গতিশীল হবে দেশের অর্থনীতি।