ভোজ্যতেলের বাজারে জায়গা করে নিচ্ছে রাইস ব্রান

বর্তমানে ভোজ্যতেলের মোট চাহিদার প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশই আমদানি করতে হয়। তবে এ আমদানিনির্ভরতার বিকল্প হতে পারে দেশে উৎপাদিত চালের কুঁড়া থেকে তৈরি ভোজ্যতেল। বর্তমানে এ ধরনের তেলের ব্যবহার বাড়ছে। বছরে তেল বিক্রির পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৪৪ হাজার টন; যা দেশের মোট চাহিদার প্রায় ১১ শতাংশ। আস্তে আস্তে ভোজ্যতেলের বাজারে জায়গা করে নিচ্ছে এটি। অন্যদিকে রফতানিও বাড়ছে।

ধানের তুষ ও চালের লালচে পরিত্যক্ত অংশ কুঁড়া বা রাইস ব্রান। কুঁড়া থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করার পর তা থেকে একজাতীয় তেল তৈরি করা হয়। এরপর তা পরিশোধন করে তৈরি করা হয় রাইস ব্রান অয়েল। কৃষি অধিদপ্তরের এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, অটোমিলের প্রতি কেজি রাইস ব্রান থেকে ২৫ থেকে ২৭ শতাংশ, সেমি অটোর প্রতি কেজি রাইস ব্রান থেকে ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ এবং সাধারণ চাল কল হতে উৎপন্ন প্রতি কেজি রাইস ব্রান থেকে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ হারে তেল উৎপাদন করা যায়। দেশে প্রায় ১৭ হাজার চাল কল থেকে বছরে উৎপাদিত মোট চালের কুঁড়ার পরিমাণ প্রায় ৪৭ লাখ টন; যা থেকে প্রায় ৭ লাখ টন তেল উৎপাদন সম্ভব। যা দিয়ে চাহিদার প্রায় ৫০ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব। এ মুহূর্তে চালের কুঁড়া থেকে ভোজ্যতেল উৎপাদন করছে ৫টি প্রতিষ্ঠান। পাবনার রশিদ অয়েল মিল হোয়াইট গোল্ড অয়েল নামে, শেরপুরের এ্যামারেল্ড অয়েল মিল স্পন্দন অয়েল নামে, ধামরাইয়ের কেবিসি এগ্রো প্রোডাক্ট, বগুড়ার মজুমদার প্রোডাক্টস স্বর্ণা তেল নামে এবং যশোরের পিওর গোল্ড অয়েল মিল নামে তেল উৎপাদন করছে। এ ছাড়া খুব শিগগির বাজারজাতকরণের অপেক্ষায় রয়েছে রংপুরের গ্রিন অয়েল মিল লিমিটেড এবং জামালপুরের মোহাম্মদ আলী অয়েল মিল লিমিটেড। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনকারী এ ৫টি মিলের মোট দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ৬৫০ থেকে ৭০০ টন হলেও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে দৈনিক ৪০০ থেকে ৪৫০ টনের বেশি উৎপাদন করছে না। রশিদ অয়েল মিলের ন্যাশনাল সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ম্যানেজার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজার থেকে অধিক দামে ব্রান রাইস কিনতে হচ্ছে বলেই উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না।
ভারতে এই ব্রান রাইস রপ্তানি হওয়ার কারণে দেশের বাজারে এর দাম চড়া। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় তারা কম দামে তেল বাজারজাত করতে পারছে না। এডিবল অয়েলের তুলনায় দাম একটু বেশি হওয়ায় ক্রেতারা দ্রুত আগ্রহী হচ্ছেন না দেশে উৎপাদিত রাইস ব্রান অয়েলের দিকে।
মজুমদার প্রোডাক্টসের সেলস এবং মার্কেটিং হেড রহমতুজ্জামান বাবু সমকালকে বলেন, বর্তমানে ১ লিটার রাইস ব্রান অয়েলের বাজার মূল্য ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। সরকার যদি ব্রান রাইস ভারতে রপ্তানি বন্ধ করে দিলে দেশের বাজারে এর দাম কমবে এবং উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় ক্রেতাদের বর্তমান মূল্যের থেকে লিটারে আরও ১৫ থেকে ২০ টাকা কমে সরবরাহ করতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কেন রাইস ব্রান অয়েল : কৃষি অধিদপ্তরের গবেষণায় দেখা যায়, পরিশোধিত বিশুদ্ধ রাইস ব্রান অয়েল বাজারের অন্যান্য তেলের তুলনায় অধিকতর স্বাস্থ্যসম্মত। রাইস ব্রান অয়েলের স্মোক পয়েন্ট ৪৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে এই তেল বাজারের অন্যান্য তেলের তুলনায় কম চিটচিটে এবং সবচেয়ে কম কোলেস্টেরল সম্পন্ন। এটি অতিরিক্ত মেদ কমাতেও সাহায্য করে।