বাংলাদেশ-ভারত-ভুটানের মধ্যে আমদানি রফতানি বাড়বে

অবকাঠামো সুবিধা বাড়ছে তামাবিল স্থলবন্দরের

আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতে তামাবিল স্থলবন্দর উন্নয়ন করা হচ্ছে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯ কোটি ২৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এ বিষয়ে নেয়া উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের মধ্যে আমদানি-রফতানিযোগ্য পণ্য সামগ্রীর গুদামজাত সুবিধাসহ হ্যান্ডলিং সুবিধা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বা তামাবিল স্থলবন্দরের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে উন্নত এবং সহজে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হবে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাই এ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সিলেটের তামাবিল শুল্ক স্টেশনকে ২০০১ সালে স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ঢাকা ও সিলেট শহর থেকে এর দূরত্ব যথাক্রমে ৩শ’ কিলোমিটার ও ৬০ কিলোমিটার। তামাবিল স্থলবন্দরের বিপরীতে ভারতীয় ল্যান্ড কাস্টম (এলসি) স্টেশনের নাম ডাউকি। এটি মেঘালয় রাজ্যের পশ্চিম খাসিয়া জেলায় অবস্থিত। ডাউকি এলসি স্টেশনকে সম্প্রতি ভারত সরকার ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট (আইসিপি) হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং এর মান উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে।
অন্যদিকে তামাবিল স্থলবন্দরে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের কোন স্থাপনা বা অবকাঠামো নেই। তবে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনের কিছু অফিস আছে। এই স্থলবন্দর দিয়ে প্রধানত কয়লা, চুনাপাথর ও ফল আমদানি করা হয় এবং প্রসাধন সামগ্রী, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও ইট রফতানি করা হয়। তাছাড়া প্রতিবছর প্রায় ১০ হাজার যাত্রী তামাবিল-ডাউকি সীমান্ত দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। বন্দর কর্তৃপক্ষের কোন স্থাপনা না থাকায় আমদানিকারকরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভাড়া করা জায়গায় আমদানিকৃত মালামাল সংরক্ষণ ও লোডিং-আনলোডিংয়ের কাজ করে থাকেন। আমদানিকৃত মালামাল প্রি-ট্যাক্সেশনের মাধ্যমে আমদানি করা হয়ে থাকে এ স্থলবন্দর দিয়ে। কিন্তু স্থলবন্দরের সুবিধা বিশেষ করে ওয়েব্রিজ ও ওয়েয়িং স্কেল না থাকায় আমদানি-রফতানিকৃত পণ্যের সঠিক ওজন পরিমাপ করতে না পারায় সরকার প্রচুর পরিমাণ শুল্ক হতে বঞ্চিত হচ্ছে।
সূত্র জানায়, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে এ বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালু রয়েছে। তামাবিল স্থলবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হলে ভারতের মেঘালয়সহ ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, আসাম ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সম্প্রসারিত হবে। এ জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত একটি কমিটি তামাবিল স্থলবন্দরসহ মোট ৫টি স্থলবন্দর এবং ভারতের ডাউকিসহ মোট ৪টি এলসি স্টেশন সরেজমিন পরিদর্শন করে এগুলোর উন্নয়নে ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে একটি প্রতিবেদন পেশ করে। ওই প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী তামাবিল স্থলবন্দর উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের আওতায় ইনফ্রাসট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফেসিলিয়েশন কোম্পানি (আইআইএফসি) কর্তৃক ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তামাবিল স্থলবন্দরের প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। ওই প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে প্রতিবছর ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যার পরিমাণ এখন আরও অনেক বেশি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম জানান, ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বাংলাদেশ এবং প্রতিবেশী দেশসমূহের মধ্যে সহজ ও উন্নত আমদানি-রফতানি কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে স্থলবন্দরসমূহের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। যা প্রস্তাবিত তামাবিল স্থলবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে, দশ দশমিক ২৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ, এক লাখ নয় হাজার ৩৩০ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, দুই হাজার ৫০০ মিটার বাউন্ডারি ওয়াল তৈরি, আট হাজার ১৮০ বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ, ২৭ হাজার বর্গমিটার ওপেন স্ট্যাক ইয়ার্ড নির্মাণ, ৭৪৪ বর্গমিটার ওয়্যারহাউস নির্মাণ, এক হাজার ৩৪৯ বর্গ মিটার অফিস, ডরমেটরি ও ব্যারাক ভবন নির্মাণ, দুই হাজার মিটার ড্রেন নির্মাণ, দুটি ওয়েব্রিজ ও দুটি ১০০ মেট্রিকটন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ওয়েহিং স্কেল সংগ্রহ করা, পাঁচটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ, কম্পিউটার ফটোকপি ও জীপসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র ক্রয় করা হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অর্থবছর ভিত্তিক অর্থ বরাদ্দ চাহিদা দেয়া হয়েছে, চলতি অর্থবছরে ১৯ কোটি ৪৫ লাখ ৫ হাজার টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩০ কোটি ৫৭ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৯ কোটি ২৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা।