অবকাঠামো ও কৃষি খাতের ৪টি প্রকল্প অনুমোদন

অবকাঠামো ও কৃষি খাতের চারটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। নতুন এ চার প্রকল্প বাবদ ব্যায় ধরা হয়েছে এক হাজার ৭৭২ কোটি টাকা।

রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ প্রকল্পগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়। একনেক সভাশেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, এ প্রকল্পগুলো মোট ব্যয়ের মধ্যে এক হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা আসবে সরকারি খাত থেকে। বাকি অর্থ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যবস্থা করা হবে।
সভায় ‘আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত দ্বৈত রেল লাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেল লাইনের মান্নোয়ন’ শীর্ষক ৫ হাজার ৮৩৩ কোটি ৭০ লাখ টাকার প্রকল্পটি উত্থাপিত হলেও তা অনুমোদিত হয়নি। একনেক সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটিতে প্রস্তাবিত রেললাইনটি মিটার গেজের পরিবর্তে ডুয়েল গেজে নিয়ে আসার জন্য নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী রেল মন্ত্রণালয়কে নতুন প্রস্তাব নিয়ে আসার জন্য দুই সপ্তাহের সময়সীমাও বেঁধে দেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে রেললাইন ডুয়েল গেজে রূপান্তরের নির্দেশনা দিয়ে বলেন, এখন থেকে কোন রেললাইন আর মিটারগেজে তৈরি করা হবে না। প্রধানমন্ত্রী এ সময় চট্রগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের কাজ শুরুর তাগিদ দেন। প্রকল্পটিতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক (ইআইবি) প্রকল্প সাহায্য হিসেবে অর্থায়ন করার কথা ছিল।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে চট্রগ্রাম জোনের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। বাস্তবায়নকাল জুলাই ২০১৪ হতে জুন ২০১৮। প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে সরকার এক হাজার ৬৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৬ কোটি ৮ লাখ টাকা অর্থায়ন করা হবে। বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করবে।
পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ও চাঁদপুর জেলায় বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬৪ কোটি ১১ লাখ টাকা। প্রকল্পটির ব্যায়ের পুরো অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। বাস্তবায়নকাল জুলাই ২০১৪ হতে জুন ২০১৯।
মঙ্গলবারের একনেক সভায় অনুমোদিত আরেকটি প্রকল্প হলো সমন্বিত কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩ কোটি টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। বাস্তবায়নকাল জুলাই ২০১৪ হতে জুন ২০১৯।
এছাড়া, নড়াইল জেলার সদর উপজেলাধীন পুরাতন ফেরীঘাট সংলগ্ন চিত্রা নদীর উপর ১৪০ মিটার ব্রিজ এবং ১৪০ মিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এদিন। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। বাস্তবায়নকাল জুলাই ২০১৪ হতে জুন ২০১৬।
বর্তমান সরকারের আমলে এ পর্যন্ত ২২টি একনেক সভায় ১১৬টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলোর প্রাক্কলিত ব্যয় এক লাখ ২ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ৩৩ হাজার ৬৮ কোটি টাকা, সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য হিসেবে ৬৪ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা অর্থায়ন করা হচ্ছে।
এদিকে, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের একনেক সভায় মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩১টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ বাবদ মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৮ হাজার ৫১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার ১৬ হাজার ১৩৬ কোটি, প্রকল্প সাহায্য ৩৯ হাজার ৬৭৩ কোটি এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে দুই হাজার ২৪২ কোটি টাকা অর্থায়ন করা হচ্ছে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম.এ. মান্নান, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রমুখ।