বাদাম চাষে আর্থিক স্বচ্ছলতা

মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার পূর্ব পাশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়া মধুমতি নদীর পাড়ে জেগে ওঠা চরে বাদাম চাষ করে অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছেন কৃষকরা। এর ফলে ওই এলাকার কৃষকদের ভাগ্যের পরিবর্তন এসেছে।
দেখা গেছে, মধুমতির বুক জুড়ে উঠতে থাকে বিস্তীর্ণ চর। প্রতি বছরই এই দুর্গম চরে পলি পড়ে ফসল চাষের উপযোগী হয়ে হঠে। তারা সেখানকার বালুময় জমিতে বাদাম চাষ করে।
এ বছর নদী তীরবর্তী উপজেলার পলাশবাড়ীয়া ইউনিয়নের ঝামা, আড়মাঝি, দেউলী, যশোবন্তপুর, কালিশংকরপুর, সদর ইউনিয়নের জাঙ্গালীয়া, কাশিপুর, ধুলজুড়ী, মুরাইল, রায়পাশা, ভোলানাথপুর, পাচুড়িয়া, রুইজানী, দীঘা ইউনিয়নের পাল্লা, শিরগ্রাম, চরপাড়া, বাবুখালী ইউনিয়নের চরছেলামতপুর ২০টি গ্রামে জেগে উঠা চরে এখন অর্থকরী ফসল বাদামের আবাদ হয়েছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে , এ বছর এসব এলাকার ৩ হাজার হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। যা থেকে ৮০ হাজার মণ বাদাম উৎপন্ন হবে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৭ কোটি টাকা।
মধুমতির করাল গ্রাসে উপজেলার ১০ হাজার নদী তীরবর্তী কৃষকরা সর্বস্ব হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছিলো। কিন্তু মধুমতির বুকে বিস্তীর্ণ এলাকায় চর জেগে ওঠায় বাদাম চাষ করে তারা আবার নতুন করে বাচার স্বপ্ন দেখছে। এসব চরে বাদাম চাষের কারণে নদীভাঙ্গা মানুষের চোখে মুখে স্বস্তি দেখা দিয়েছে এবং পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে তাদের জীবনযাত্রায়। নদীর চরে তিন হাজার হেক্টর আবাদি জমিতে এখন বাদামসহ নানা ফসলের চাষ সম্প্রসারিত হয়েছে।
কৃষি অফিসের দেয়া তথ্য মতে, পানি আটকে থাকে না এমন দোআঁশ মাটিতে বাদাম চাষ ভাল হয়। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের পর নদীর পানি হ্রাস পেলে চর জাগে। বর্ষায় ঘোলা পানির সাথে পলি পড়ে মাটি উর্বর হয়। অগ্রহায়ণ মাসে কৃষকরা বাদামের বীজ রোপণ করে এবং জ্যৈষ্ঠ মাসে বাদাম উত্তোলন করা হয়। প্রতি বিঘা জমিতে ৫-৬ কেজি বাদাম বীজ রোপণ করতে হয়। এ চাষে সেচ ও সারের তেমন প্রয়োজন হয় না।
এক বিঘা জমিতে ৯-১০ মণ পর্যন্ত বাদাম উৎপাদন হয়। ইতোমধ্যে হাটবাজারগুলোতে নতুন বাদাম উঠতে শুরু করেছে। শ্রেণী ভেদে প্রতি মণ বাদাম ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন দেশি ও বহুজাতিক কোম্পানি বাদাম দিয়ে নানা খাদ্য পণ্য তৈরী করে বাজারজাত করায় বাদামের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে গেছে। কৃষক পাচ্ছে নায্য মূল্য। উপজেলার ঝামা গ্রামের আছাদুজ্জামান, হরেকৃষ্ণপুরের মন্টু মিয়া, আড়মাঝি গ্রামের আজিজার রহমান ও দেউলী গ্রামের আব্দুল হামিদ ও দাউদ মোল্যা বাদাম চাষ করে নিঃস্ব থেকে এখন স্বচ্ছল কৃষক।
কৃষকরা জানান, নদীর চরে বাদাম চাষ করে ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তাদের পাশাপাশি বাদামের জমিতে কাজ করে এ উপজেলার প্রায় ১০ হাজার মানুষের জীবনে এনে দিয়েছে স্বচ্ছলতা ও বেঁচে থাকার নতুন স্বপ্ন।
চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রতি বছর মহম্মদপুরের বিভিন্ন হাটে বাদাম কিনতে আসেন ব্যাপারী শাহজাহান মোল্যা। তিনি জানান, এ এলাকার বাদামের মান উন্নত। দামও অপেক্ষাকৃত কম। তার মতো অনেক ব্যাপারীই এ এলাকার হাটগুলো থেকে নিয়মিত বাদাম কিনতে আসেন।
মহম্মদপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন আহম্মেদ জাানান, উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে অর্থকরী ফসল বাদামের ব্যাপক চাষ হচ্ছে। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় পাশাপাশি লাভবান হওয়ায় দিন দিন এলাকার কৃষকরা এ ফসল আবাদের দিকে ঝুঁকছে। এ বছর বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বাদাম চাষীদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। মধুমতি মহম্মদপুরের অংশের পাশাপাশি নদী তীরবর্তী ও পারের ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারি, আলফাডাঙ্গা ও নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার চরাঞ্চলেও একই সাথে বাদামের চাষ হচ্ছে।