সাড়ে ১১ লাখ নতুন গ্রাহক বিদ্যুত সুবিধা পাবে

পল্লী বিদ্যুত সম্প্রসারণ প্রকল্পসহ ৬টি চট্টগ্রাম উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৮৩৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৫ হাজার ৪৪১ কোটি ৫৪ লাখ এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ২ হাজার ৩৯৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় পরিকল্পনা সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সারা দেশের মানুষকে বিদ্যুত সুবিধা দেয়ার জন্যই পল্লী বিদ্যুত সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সাড়ে ১১ লাখ নতুন গ্রাহক বিদ্যুত সুবিধা পাবে। আমরা চাই দেশের সব এলাকায় বিদ্যুত পৌঁছে যাক এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়ে যাক। তিনি বলেন সিটি কর্পোরেশনগুলো যাতে জনবান্ধব হয় এবং সিটি কর্পোরেশনগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, উন্নত ড্রেনেজ সুবিধা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা যাতে বাস্তবায়িত হয় এবং সেই সঙ্গে যাতে করে ওয়াইফাইসহ আইসিটি সুবিধা জনগণ পায় সে জন্যই এই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।

অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণ ঢাকা বিভাগীয় কার্যক্রম-২, পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণ চট্টগ্রাম-সিলেট বিভাগীয় কার্যক্রম-২, পল্লী বিদ্যুত সম্প্রসারণ রাজশাহী-রংপুর বিভাগীয় কার্যক্রম, ইনক্লুসিভ সিটি গবর্নেন্স প্রজেক্ট (আইসিজিপি)-২, নরসুন্দা নদী পুনর্বাসন কিশোরগঞ্জ পৌরসভাসংলগ্ন এলাকা উন্নয়ন (২য় সংশোধিত) এবং অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) শক্তিশালীকরণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প।

প্রকল্পগুলোর বিস্তারিত সম্পর্কে জানা গেছে, গ্রামীণ এলাকার অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুত সুবিধা দিতে পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণ ঢাকা বিভাগীয় কার্যক্রম-২, পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগীয় কার্যক্রম-২ এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণ চট্টগ্রাম-সিলেট বিভাগীয় কার্যক্রম-২ প্রকল্প ৩টির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৭শ’ ১৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সম্পূর্ণ সরকারী অর্থায়নে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড জুলাই, ২০১৪ থেকে জুন ২০১৮ এর মধ্যে এগুলো বাস্তবায়ন করবে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের আওতায় দেশের ৭২টি পল্লী বিদ্যুত সমিতির মধ্যে ৫৭টি সমিতি এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে। ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের ৪৩টি জেলায় এ তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।

একনেক সভায় জানানো হয়, ২০২০ সালের মধ্যে দেশের সব গ্রামে বিদ্যুত পৌঁছে দিতে হলে মোট ৩ লাখ ২৬ হাজার ২৬৩ কিলোমিটার বিদ্যুত বিতরণ লাইন থাকতে হবে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে প্রয়োজনীয় ৯৪ লাখ ৫৪৯ কিলোমিটার লাইনের মধ্যে ৭১ হাজার ৫০০ কিমি. বিদ্যুত বিতরণ লাইন ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। অনুরূপভাবে, রাজশাহী-রংপুর বিভাগে প্রয়োজনীয় ৮৪ হাজার ১৫৩ কিমি. লাইনের মধ্যে ৬১ হাজার ৩৭৬ কিমি. বিদ্যুত বিতরণ লাইন ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে এবং চট্টগ্রাম-সিলেট বিভাগে প্রয়োজনীয় ৭৭ হাজার ৪২৭ কিমি. লাইনের মধ্যে ৬৬ হাজার ৩০০ কিমি. বিদ্যুত বিতরণ লাইন ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। সভায় জানানো হয় এই ৫ বিভাগে অবশিষ্ট ৫৬ হাজার ৯৫৩ কিমি. লাইনের মধ্যে অন্য ২টি প্রকল্পের আওতায় ৩৩ হাজার ৬১৯ কিমি. লাইন নির্মাণের সংস্থান রয়েছে। অনুমোদিত প্রকল্প ৩টি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই ৫টি বিভাগে ২৬ হাজার ১৯০ কিমি. নতুন বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ করা হবে এবং ২ হাজার ৮১০ কিমি. বৈদ্যুতিক লাইন নবায়ন/পুনর্বাসন করা হবে।

ইনক্লুসিভ সিটি গবর্নেন্স প্রজেক্ট (আইসিজিপি) শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ২ হাজার ৪৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) জুলাই ২০১৪ থেকে জুন ২০২০ এর মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। মোট প্রকল্প বরাদ্দের মধ্যে সরকারী তহবিলের ৫শ’ ৪৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য হিসেবে জাইকা ২ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেবে। দেশের ৪টি নতুন সিটি কর্পোরেশন নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, রংপুর ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। সভায় জানানো হয় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে নির্ধারিত ৫টি সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি এবং মৌলিক নাগরিক সেবাসমূহের পরিবৃদ্ধি করা হবে। সিটি কর্পোরেশন সমূহের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধার সৃষ্টি হবে বলেও সভায় জানানো হয়। প্রকল্পের আওতায় সিটি কর্পোরেশনের অধীনে বিভিন্ন দফতরের মধ্যে ইনক্লুসিভ ধারণা প্রবর্তনের মাধ্যমে নাগরিকদের সেবার মানকে মানসম্পন্ন ও বেগবান করা হবে। ই-গবর্নেন্স, হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণের সফটওয়্যার স্থাপন, চলমান কম্পিউটার কার্যক্রম ও জনসেবায় ক্ষুদে বার্তা পদ্ধতিও এ প্রকল্পের আওতায় করা হবে বলেও সভায় জানানো হয়।