বাংলাদেশের কৃষক নিজেদের উদ্যোগেই কৃষিতে কীটনাশকের ব্যবহার ক্রমাগত কমিয়ে আনছেন। গত পাঁচ বছরে এর ব্যবহার ২২ শতাংশ কমেছে বলে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
কীটনাশকের ব্যবহার ক্রমাগত হরাস পাওয়ার ক্ষেত্রে কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ক্রপ প্রোটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিপিএ) অবদান অনস্বীকার্য।
কয়েক বছর আগেও ফসল সুরক্ষায় কীটনাশকের অবাধ ব্যবহারেই আস্থা ছিল কৃষকের। পরিবেশের ওপর এর বিরূপ প্রভাব, জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি, বাড়তি খরচ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতার বিষয়টি ছিল উপেক্ষিত।
প্রকাশিত এ খবরে বলা হয়েছে, কৃষকদের সেই প্রবণতা এখন হরাস পাচ্ছে। কৃষকদের মধ্যে সচেতনতাও বাড়ছে। ফলে কমছে কীটনাশকের ব্যবহার।
দেশে কীটনাশক আমদানি হয় মূলত চীন, ভারত, সিঙ্গাপুর ও জার্মানি থেকে। কৃষি মন্ত্রণালয় ও বিসিপিএর তথ্যে দেখা যায়, ২০০৮-এ সব মিলিয়ে দেশে কীটনাশক আমদানি হয় ৪৮ হাজার ৬১০ টন। কিন্তু গত বছর কমে আমদানি দাঁড়ায় ৩৭ হাজার ৭৮১ টন। অর্থাৎ পাঁচ বছরে দেশে কীটনাশক আমদানি কমেছে ২২ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০০৮ সাল থেকেই কীটনাশকের ব্যবহার ক্রমাগত কমে আসছে।
এই হরাস পাওয়ার প্রধান কারণ হলো, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (আইপিএস) নামে একটি প্রকল্পের বিভিন্ন কর্মসূচি ২০১৩ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়ে আসছে। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমেই মূলত প্রাকৃতিকভাবে পোকা দমনে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। কৃষিতে কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে এ প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
এ প্রক্রিয়াটি আরও এগিয়ে নিতে হবে। কারণ খবর অনুযায়ী দেশের মাত্র ২০ শতাংশ কৃষকের কাছেই বালাই ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম এখন পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। মাত্র ২০ শতাংশ কৃষকের সচেতনতা বা আইপিএস কর্মসূচিতে নিয়ে আসাটাই কৃষিতে ক্ষতিকর কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ করার জন্য যে যথেষ্ট নয় সেটা অবশ্যই সংশ্লিষ্টরা জানেন।
একটি বিষয় মনে রাখা দরকার, কীটনাশকের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে দেড় শতাধিক দেশি ও বহুজাতিক কোম্পানি। বহুজাতিক কোম্পানির মুনাফার শিকার যেন বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষক না হন সে ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয় ও পরিবেশবাদীদের ভূমিকা রয়েছে। পরিবেশ নিয়ে কাজ করছে এমন এনজিওগুলোও এখানে ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
কীটনাশকের ব্যবহার ও অপব্যবহার নিয়েও যথেষ্ট বিভ্রান্তি রয়েছে। যা নিয়ে কৃষিবিজ্ঞানী ও সচেতন মানুষ চিন্তিত। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার একটা নিজস্ব প্রক্রিয়া রয়েছে। তাকে গ্রহণ করতেই হবে এবং মানতে হবে। গত এক দশক ধরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা গেছে, শস্য ক্ষেত্রে এ পর্যন্ত ৬০৭ জাতের পোকা পাওয়া যায়। এর মধ্যে মাত্র ৩৮ শতাংশ ফসলের জন্য ক্ষতিকর। বাকি সব পতঙ্গই সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ফসলের উপকার করছে। এরা ক্ষতিকর পোকা খেয়ে যা পরজীবী ও পরভোগী হিসেবে ফসলের উপকার করে। সুতরাং অতি উৎসাহে ঢালাওভাবে কীটনাশক প্রয়োগ পরিবেশের জন্যই মারাত্মক ক্ষতিকর। এ বিষয়টিই আইপিএস কৌশলে কৃষকদের সচেতন করার বিষয়টি গুরুত্ব পেতে হবে। যাতে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর প্ররোচনায় কৃষক বিভ্রান্ত না হন।
একইসঙ্গে শুধু শস্যই নয়, বিভিন্ন ফল-ফলাদি উৎপাদনে ব্যাপকভাবে যে ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে তাও বন্ধ করতে হবে।