নিরক্ষর নারীরা নিজেরাই নিজেদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে_ এমন প্রতিবেদন সংবাদমাধ্যমে কদাচিৎ দেখা যায়। অক্ষরজ্ঞানহীন এসব নারী যখন সামাজিক সেবামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি রূপায়ণ করেন এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে স্বাবলম্বী হন, তখন গর্বে বুকটা ভরে ওঠে। তখন আমরা আশায় বুক বাঁধি যে, আমাদের নারীরাও একদিন পুরুষের সঙ্গে সমানতালে পা ফেলে এগিয়ে যাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে। তবে সে পথ যে কুসুমাস্তীর্ণ নয় সে কথা এ দেশের পিছিয়ে থাকা নারীদের চেয়ে কে বেশি জানে! রোববার সমকালে ‘গাইবান্ধার নারীদের স্কুল’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি এ দেশের নারীর শুধু ক্ষমতায়নই নয়, সব কুসংস্কার ও কূপমণ্ডূকতা থেকে মুক্ত করে নারীকে একজন মুক্ত মানুষ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা করার পথে আলোকবর্তিকা যেন। অক্ষরজ্ঞানহীন নারীরা প্রথমে সংগঠিত হয়েছিলেন নিজেদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার প্রয়োজনে। সময়ের পরিক্রমায় এদের সংগঠন দেখল, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার কাজের পাশাপাশি এমন অনেক কাজ আছে যেগুলোতে সম্মিলিত উদ্যোগ নিলে পরিবার ও সমাজেরই লাভ। তাই তার বাল্যবিয়ে, বহু বিয়ে ও নারী নির্যাতন রোধ করার উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি নলকূপ পাকাকরণের মতো সামাজিক কাজেও হাত লাগিয়ে একের পর এক সাফল্য পেয়ে চলেছেন। এভাবেই কর্মচঞ্চল, স্বাবলম্বী ও সমাজের সেবামূলক কাজে হাত লাগানো অধিকারসচেতন নারীরা দেখলেন, তাদের নিজেদের পাওনা পুরোপুরি বুঝে নিতে হলে শিক্ষার্জন ছাড়া তা সম্ভব নয়। তাই তারা গ্রহণ করলেন নিজেদের শিক্ষিত করার কর্মসূচি। তাদের এই শিক্ষার উদ্যোগে উপজেলা প্রশাসন, এলাকার শিক্ষা অনুরাগী মানুষ ও শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা সশ্রদ্ধ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছেন। কলেজে পড়ে এমন দুই তরুণী বিনা পারিশ্রমিকে সংগঠনের ৩০ নারীকে পড়ানোর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে আরও অনেকে এই শিক্ষা কার্যক্রমে স্বেচ্ছায় অংশ নেবেন। এই উদ্যোগের সাফল্যগাথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে। শিক্ষা ও অধিকারবঞ্চিত অন্য নারীরাও স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি নিজেদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য শিক্ষার্জনের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারবে। এভাবে অনুপ্রাণিত নারীর জীবন থেকে অন্ধকার ঘুচে যাবে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র পাবে কুসংস্কারমুক্ত অধিকারসচেতন নারীকে। গাইবান্ধার নিরক্ষর নারীদের স্কুল সেই অনাগত উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ করছে যেন।