দেশে মোবাইল ফোনের গ্রাহক সংখ্যা সাড়ে ১১ কোটি ছাডিয়েছে। গত এপ্রিলের হিসেবে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের আরও প্রায় ৫০ লাখ সিম বিক্রি হলেও সেগুলো বন্ধ রয়েছে। দেশে মোবাইল গ্রাহক বাড়ায় তথ্য যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিপ্লব ঘটেছে। বাংলাদেশের মতো এত দ্রুত মোবাইল গ্রাহক অন্য কোন দেশেই বাড়েনি। দেশে মোবাইল গ্রাহক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যাও বেড়েছে। বর্তমানে দেশে আড়াই কোটির বেশি মোইবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক রয়েছে।
বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, ২০০৭ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত দেশে সাড়ে তিন কোটি গ্রাহক থেকে বেড়ে ২০১৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সাত বছরে বাংলাদেশে এখন মোবাইল ফোনের গ্রাহক সাড়ে ১১ কোটির বেশি। এই সিমগুলো সক্রিয় (এ্যাক্টিভ সিম) গ্রাহক রয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ১২তম শত মিলিয়ন সক্রিয় মোবাইল ফোন গ্রাহকের দেশ। বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের আর মাত্র ১১টি দেশে শত মিলিয়ন সক্রিয় মোবাইল ফোন গ্রাহক রয়েছে। ১১টি দেশ হচ্ছেÑ চীন (একমাত্র বিলিয়ন গ্রাহক), ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, জাপান, জার্মানি, ফিলিপিন্স এবং নাইজিরিয়ায়।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) এক কর্মকর্তা জানান, এ বছর মার্চ পর্যন্ত দেশের সক্রিয় মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১০ কোটি ৯৮ লাখ ৭১ হাজার। এক শ’ মিলিয়ন গ্রাহকের জন্য এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। এপ্রিলের মাঝামাঝি দেড় শ’ মিলিয়ন মোবাইল ফোন গ্রাহক অতিক্রম করেছে। জুন মাস পর্যন্ত মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা আরও বেড়েছে। এই হিসেব এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশে এত দ্রুত মোবাইল গ্রাহক বাড়বে তা আগে থেকে অনুমান করা যায়নি। তবে এটা ভাবা গেছে, ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হিসেবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মোবাইল পৌঁছে যাবে। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে দেশে সাড়ে ১১ কোটি সক্রিয় মোবাইল গ্রাহক এই শিল্পের জন্য একটি বড় অর্জন। ১৬ কোটি মানুষের দেশের প্রায় ৭৬ ভাগ মোবাইল নেটওয়ার্কের মধ্যে চলে এসেছে। এতে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। সমাজ ও রাষ্ট্রে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক কর্মকা- অব্যাহত থাকলেও মোবাইল খাতের ক্রমবর্ধমান উন্নতি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে দেখা হচ্ছে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও এই শিল্পের বিকাশ দেশের মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ৪৬ লাখের বেশি। ২ কোটি ৭৩ লাখ গ্রাহক নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে বাংলালিংক, এয়ারটেল আড়াই কোটি গ্রাহক নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। ২ কোটি ১৬ লাখ ৯০ হাজার গ্রাহক নিয়ে চতুর্থ স্থানে আছে মোবাইল অপারেটর কোম্পানি রবি। চতুর্থ অবস্থানে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অপারেটর টেলিটক। একমাত্র থ্রিজি সুবিধা দেয়ার ফলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই অপারেটরের গ্রাহক সংখ্যা দ্রুত বেড়েছ। অপরদিকে পাঁচটি অপারেটরের গ্রাহক সংখ্যা বাড়লেও সিটিসেলের গ্রাহক গত তিন মাসে ২৬ হাজার কমেছে। অথচ এই মোবাইল অপারেটর দেশের সবচেয়ে পুরনো। বর্তমানে সিটিসেলের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছ ১৩ লাখ ২৫ হাজারে।
সূত্র জানিয়েছে, ১৯৯৬ সাল থেকে বাংলাদেশ প্রথম ভিস্যাটের মাধ্যমে ইন্টারনেটে ব্যবহার শুরু হয়। তখন প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেটের জন্য ব্যয় হতো ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু সে সময় সরকারীভাবে বিটিসিএল কোন ব্যান্ডউইথড বিক্রি করত না। বর্তমানে বিটিসিএল সারা দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস দিয়েছে। এর বাইরে ম্যাঙ্গো টেলিকম ব্যান্ডউইথথ বিক্রি করছে। তবে দফায় দফায় ব্যান্ডউইথের দাম কমলেও গ্রাহক পর্যায়ে এর কোন প্রভাব পড়েনি। সব ধরনের ইন্টারনেটের দাম কমানোর ফলে দেশে ইন্টারনেটের গ্রাহক বাড়ছে। দেশে ২০০৪ সালে মোবাইল ইন্টারনেট চালু হয়। তখন প্রতি মেগাবাইট পার সেকেন্ড (এমবিপিএস) ব্যান্ডউইথের দাম ৭২ হাজার টাকা ছিল। পর্যায়ক্রমে ব্যান্ডউইথের দাম ৭২ হাজার টাকা থেকে দাম কমাতে কমাতে এখন ২ হাজার ৮ শ’ টাকা করা হয়েছে। এতে গ্রামের গ্রাহকরাও এখন মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন।
তথ্য প্রযুক্তিবিদরা বলেন, দেশে টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের অগ্রগতি হওয়ায় দেশের তরুণ প্রজম্ম তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রেখে যাচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যবহার এখন প্রতিটি মানুষের কাছে অপরিহার্য বিষয় হিসেবে বিবেচনা হচ্ছে। দাবি উঠেছে বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকে মৌলিক অধিকারের আওতায় আনতে হবে। অন্ন,বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার মতোই ইন্টারনেট এখন মানুষের অধিকার হয়ে উঠেছে। স্কুল- কলেজের ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করার সুবিধা থাকলে আরও দ্রুত এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধিত হবে। ভারতের যুব সমাজ ইন্টারনেটকে কাজে লাগিয়ে প্রতিবছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার (মার্কিন) আয় করছে। অথচ বাংলাদেশে ব্যান্ডউইথের দাম বেশি ও গতি কম থাকায় হাজার হাজার মেধাবী তরুণ এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সরকারের দেয়া সুবিধা থাকলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে আরও সুযোগ দেয়ার দাবি করা হয়েছে।