মাইলফলক সাফল্যঃ এবার সমুদ্রসীমা সুসংহত করা হোক

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে আরো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতের (পিসিএ) এই রায়ে বঙ্গোপসাগরের প্রায় ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই অংশটি নিয়ে প্রায় চার দশক ধরে ভারতের সঙ্গে দেনদরবার চলে আসছিল। কিন্তু আলাপ-আলোচনায় সমাধান না আসায় অবশেষে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হয়। দীর্ঘ চার বছর ৯ মাস আইনি লড়াইয়ের পর পাওয়া গেল আপিল অযোগ্য এই রায়। এখন এই বিশেষ এলাকায় মৎস্য, খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ, খনন, উত্তোলন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা থাকল না। এর আগে ২০১২ সালে সমুদ্র আইন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের (ইটলস) রায়ে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে যে দীর্ঘ বিরোধ চলে আসছিল, তারও অবসান ঘটে।

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সম্ভাব্য যে গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে, তাকে মোট ২৮টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭টিতে মিয়ানমার ও ১০টিতে ভারত তাদের মালিকানা দাবি করে আসছিল। মাত্র একটি বিরোধহীন ব্লক বাংলাদেশের ছিল। মিয়ানমারের দাবি করা ১৭টি ব্লকের মালিকানা আগেই বাংলাদেশের হয়েছে। এখন ভারতের দাবি করা বাকি ১০টি গ্যাসক্ষেত্রেও বাংলাদেশের মালিকানা আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠা পেল। ফলে বাংলাদেশ এখন ২৮টি ব্লকেই গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে যেতে পারবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, বঙ্গোপসাগরের এই বিশাল এলাকা এবং এতে থাকা বিপুল সম্পদে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠার মতো এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে স্বাধীনতা-পরবর্তী চার দশকেও বাংলাদেশের কোনো সরকারই যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়নি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট ক্ষমতায় আসার পরপরই ২০০৯ সালে মিয়ানমার ও ভারতের দাবির বিরুদ্ধে পৃথক আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হয় বাংলাদেশ। এ ছাড়া এই রায়ের ভিত্তিতেই এখন মহীসোপানের সীমানা নির্ধারণ বিষয়ক জাতিসংঘ কমিটিতে বাংলাদেশের মহীসোপান সীমানা নির্ধারিত হবে। তাতে ৪৬০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপান এলাকারও অধিকারী হতে পারে বাংলাদেশ। সেই এলাকাও বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে পারবে। স্বাধীনতা-পরবর্তী চার দশকে বাংলাদেশের যত গুরুত্বপূর্ণ অর্জন রয়েছে, নিঃসন্দেহে এই দুটি অর্জন তার অন্যতম। দেশবাসীর সঙ্গে কালের কণ্ঠও এই সাফল্যে আনন্দিত।

স্থলসীমার মতোই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে একটি দেশের জলসীমা। এই অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি কেন এত দিন আমাদের রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনাকারীদের কাছে গুরুত্ব পেল না, তা আমাদের বোধগম্য নয়। বর্তমান সরকারকে যারা ভারতঘেঁষা বলে চিত্রিত করতে চায়, তারাও কখনো বাংলাদেশের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় এমন সাহসিকতার পরিচয় দিতে পারেনি। সংগত কারণেই বর্তমান সরকারের কাছে এই সাহসী উদ্যোগের জন্য জাতি কৃতজ্ঞ থাকবে। একইভাবে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনসহ অন্য যেসব ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে আমাদের বিরোধ রয়েছে, সেসব ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ তার ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় যথাযথ পদক্ষেপ নেবে- এমনটাই প্রত্যাশিত। ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেই বাংলাদেশকে তার ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষায় এগিয়ে যেতে হবে।