জাপানের সঙ্গে ৯,১৯৬ কোটি টাকার পাঁচ ঋণ চুক্তি সই

মহেশখালীতে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণসহ ৫ প্রকল্প

জাপান বিদ্যুৎ খাতসহ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ৯ হাজার ১৯৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা ঋণ সহায়তা দেবে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) মাধ্যমে এ ঋণ প্রদান করবে জাপান। ০.০১ শতাংশ হারে ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৪০ বছরে জাপানের ঋণ পরিশোধ করতে হবে। গতকাল সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এ-সংক্রান্ত এক চুক্তি সই হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মোহাম্মদ মেজবা উদ্দিন ও জাইকার প্রধান নির্বাহী মিকিও হাতাদাহ চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন।

চুক্তি সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোইকি নিনানি ও জাইকার প্রেসিডেন্ট আকিহিকো তানাকা।

৯ হাজার ১৯৬ কোটি ১৩ লাখ টাকার পাঁচ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে তিন হাজার ১৫৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ছাড়াও কয়লা আমদানির জন্য একটি জেটি নির্মাণ, বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, প্রকল্পের জন্য সড়ক ও সেতু নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া স্থানীয় জনগণের জীবনমান উন্নয়নে ওই টাকা ব্যয় করা হবে। এ প্রকল্পের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২০২২ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে বলে মনে করছে সরকার।

এ ছাড়া অন্য চার প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, এক হাজার ৭৯৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ন্যাচারাল গ্যাস ইফিসিয়েন্সি প্রজেক্ট, দুই হাজার ৩৩২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ইনক্লুসিভ সিটি গভর্ন্যান্স প্রজেক্ট, এক হাজার ১৬০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে হাওর ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড লাইভহুড ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট এবং ৭৫৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে স্মল অ্যান্ড মার্জিনাল সাইজ ফারমার্স অ্যাগ্রিকালচারাল  প্রোডাক্টিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট অ্যান্ড ডাইভারসিফিকেশন ফিন্যান্সিং প্রজেক্ট।

ন্যাচারাল গ্যাস ইফিসিয়েন্সি প্রজেক্টের আওতায় ধনুয়া থেকে এলেঙ্গা এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড় থেকে নলকা পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। নরসিংদী গ্যাসফিল্ড ও তিতাস গ্যাসফিল্ডে কম্প্রেশার স্থাপন এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের আবাসিক এলাকার জন্য প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন করা হবে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকা দেবে মোট ব্যয়ের ৬৫ শতাংশ।

ইনক্লুসিভ সিটি গভর্ন্যান্স প্রজেক্টের আওতায় রয়েছে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, রংপুর, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সংস্থাটি দেবে ৮১ শতাংশ বা দুই হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ জুলাই ২০১৪ থেকে জুন ২০২০ সাল পর্যন্ত।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনায় অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য হাওর ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড লাইভহুড ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকা দেবে ৫৮ শতাংশ বা এক হাজার ১৬০ কোটি টাকা।

স্মল অ্যান্ড মার্জিনাল সাইজ ফারমার্স অ্যাগ্রিকালচার প্রোডাক্টিভিটি ইম্প্রুভমেন্ট অ্যান্ড ডাইভারসিফিকেশন ফিন্যান্সিং প্রজেক্টের আওতায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের ঋণ সহায়তা প্রদান, কৃষি উৎপাদন ও বহুমুখী নিশ্চিতকরণ ও কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং পশুসম্পদ পরিপালনে ঋণ সহায়তা প্রদান করা হবে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮২১ কোটি টাকা, যার মধ্যে জাইকা দেবে মোট ব্যয়ের ৯২ শতাংশ।  টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৭৫৪ কোটি। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ধরা হয়েছে।

Source