দেশের বিদেশি মুদ্রার মজুদ (রিজার্ভ) আরো উঁচু অবস্থানে পৌঁছেছে। গতকাল সোমবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় দুই হাজার ১০৩ কোটি ডলার। এর আগে গত ১০ এপ্রিল প্রথমবারের মতো রিজার্ভ দুই হাজার কোটি ডলার অতিক্রম করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দাবি রপ্তানি আয় বৃদ্ধি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ ইতিবাচক ধারা রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ এই মাইলফলক অতিক্রম করেছে, যা পাকিস্তানের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।
তিনি আরো বলেন, এই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় সাত মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। তবে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভের পরিমাণ কিছুটা কমে যেতে পারে।
বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বেশি থাকলে আমদানি দায় মেটানো সহজ হয়। সাধারণত একটি দেশের তিন মাসের আমদানি দায় মেটানোর মতো অর্থ রিজার্ভে থাকতে হয়। না হলে আমদানি দায় মেটানোর জন্য দেশটিকে অন্য দেশ থেকে ঋণ করতে হয়।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান রিজার্ভ সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারতের রিজার্ভ ৩১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার, পাকিস্তানের এক হাজার ৩০০ কোটি ডলার।
মূলত গত বছর থেকে রিজার্ভ ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে। তখন মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়ায় ডলারের ব্যবহার কম হচ্ছিল বলে রিজার্ভ বাড়ছিল। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ৭ মে রিজার্ভ প্রথমবারের মতো এক হাজার ৫০০ কোটি ডলার অতিক্রম করে।
একই বছরের ১৯ ডিসেম্বর রিজার্ভ দাঁড়ায় এক হাজার ৮০০ কোটি ডলার। একইভাবে চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ এক হাজার ৯০০ কোটি ডলার অতিক্রম করে। গত ১০ এপ্রিল রিজার্ভ দুই হাজার কোটি ডলার অতিক্রম করেছে।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ‘সামষ্টিক অর্থনীতি ও বিনিয়োগ : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যেও রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহতভাবে বেড়েছে। একই সঙ্গে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করায় খাদ্য আমদানিও আগের তুলনায় কম হচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ একের পর এক রেকর্ড অর্জন করছে।
এর আগে পদ্মা সেতু নির্মাণে রিজার্ভ ব্যবহারের বিষয়ে নিশ্চয়তা দিয়ে গভর্নর ড. আতিউর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অন্য ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার পাইয়ে দিতে সহায়তার পাশাপাশি রিজার্ভ থেকে ডলার জোগান দেওয়ার পরিকল্পনা বাংলাদেশ ব্যাংকের আছে।’