হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ চলতি বছরের (২০১৪) মধ্যেই এক হাজার ২৪৯ মেগাওয়াটের ১৩টি বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করবে সরকার। এর মধ্যে সরকারী ২২৫ এবং বেসরকারীভাবে এক হাজার ২৪ মেগাওয়াটের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জন্য ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে বিদ্যুত ও জ্বালানি খাত সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছেন।
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত সরকারী বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে ৯৭ শতাংশ এবং একই সময়ে বেসরকারী বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১৬৯ শতাংশ। দ্রুত অর্থনেতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বিচিত্রমুখী সরকারী, বেসরকারী এবং সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বমূলক বিনিয়োগের জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন ও তাকে স্থায়ী ভিত্তি প্রদানের পূর্বশর্ত হিসেবে সরকার বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতকে আজ যে জায়গায় নিয়ে গেছে, তাকে টেকসই করা গেলে ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বলে আমার বিশ্বাস।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় ২০১২ সালে ৯৫১ মেগাওয়াট, ২০১৩ সালে এক হাজার ১৬৩ মেগাওয়াট (যার মধ্যে ৫০০ মেগাওয়াট আমদানি অন্তর্ভুক্ত) ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। চলতি ২০১৪ সালের মধ্যে সরকারী খাতে দুটি বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপিত হবে। এর একটি হচ্ছে সিরাজগঞ্জ ১৫০ মেগাওয়াট (রূপান্তর) বিদ্যুত কেন্দ্র। এটি থেকে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়া যাবে। ইতোমধ্যেই এর ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের জুনের মধ্যেই এটির কাজ শেষ করবে এনডব্লিউপি জিসিএল। অন্যটি আশুগঞ্জ ২২৫ মেগাওয়াট সিসিপিপি এসসি জিটি ইউনিট বিদ্যুত কেন্দ্র। এটি থেকে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়া যাবে। ইতোমধ্যেই এ বিদ্যুত কেন্দ্রের ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই বাকি কাজ শেষ করবে এপিএস সিএল।
বেসরকারী খাতের ১১টি বিদ্যুত কেন্দ্র হচ্ছে, নাটোর, রাজশাহী ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র। এখান থেকে পাওয়া যাবে ৫২ মেগাওয়াট বিদ্যুত। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এ কেন্দ্রটি চালু হয়েছে। মেঘনাঘাট ৩০০-৪৫০ মেগাওয়াট সিসিপিসি (দ্বিতীয় ইউনিট) ডুয়েল ফুয়েল এসসি জিটি ইউনিট বিদ্যুত কেন্দ্র। এটি থেকে ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়া যাবে। চলতি বছরের মে মাস থেকে জিটি টেস্ট রানে চলছে। ঘোড়াশাল, নরসিংদী ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র। এটি থেকে পাওয়া যাবে ১০৮ মেগাওয়াট বিদ্যুত। চলতি মাস থেকে এটিও টেস্ট রানে চলছে। বারাকা-পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র। চলতি বছরের মে মাস থেকে এটি টেস্ট রানে চলছে। গগননগর, নারায়ণগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র। এখান থেকে পাওয়া যাবে ১০২ মেগাওয়াট বিদ্যুত। ইতোমধ্যেই এ কেন্দ্রটির ৯৫ শতাংশ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই এটির পুরো কাজ শেষ হবে। পটিয়া, চট্টগ্রাম ১০৮ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র। ইতোধ্যেই এটির ৮৫ শতাংশ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের জুলাই এর মধ্যে এটি বাস্তবায়ন কাজ শেষ হবে।
কাঠপট্টি, মুন্সীগঞ্জ ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র। এখান থেকে ৫৩ মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়া যাবে। ইতোমধ্যেই এ কেন্দ্রটির ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের আগস্টের মধ্যেই এটির নির্মাণকাজ শেষ হবে। মেঘনাঘাট ৩০০-৪৫০ মেগাওয়াট সিসিপিপি (দ্বিতীয় ইউনিট) ডুয়েল ফুয়েল বিদ্যুত কেন্দ্র। এখান থেকে পাওয়া যাবে ১১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত। এটি জিটি টেস্ট রানে চলছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই এ কেন্দ্রটি স্থাপনের কাজ শেষ হবে। আলিরটেক, নারায়ণগঞ্জ ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র। এখান থেকে পাওয়া যাবে ৫৩ মেগাওয়াট বিদ্যুত। ইতোমধ্যেই এটির ১৮ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন কাজ শেষ হবে। নবাবগঞ্জ ৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র। ইতোমধ্যেই ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বসিলা, কেরানীগঞ্জ ১০৮ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র (এলসি পাওয়ার)। ইতোমধ্যেই এটির ৩২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই বাকি কাজ শেষ হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সূত্র জানান, বর্তমানে বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ১০ হাজার ৩৪১ মেগাওয়াট, যার মধ্যে সরকারী খাতে ৫ হাজার ৯৬২ মেগাওয়াট, বেসরকারী খাতে ৩ হাজার ৮৭৯ মেগাওয়াট এবং বিদ্যুত আমদানি ৫০০ মেগাওয়াট। সরকারী খাতে বেশকিছু বিদ্যুত কেন্দ্র পুরাতন হওয়ায় স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। ফলে বর্তমানে বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা গত এপ্রিল মাসে হয়েছে ৯ হাজার ৭২৭ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছিল, ২০০৯ সালে ছিল ৪ হাজার ৯৩১ মেগাওয়াট।