প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ গঠন করেছে। এর মাধ্যমে সাররদেশে হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক এবং আইসিটি ইনকিউবেটর তৈরির প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, গাজীপুর, যশোর, সিলেট ও রাজশাহীতে হাইটেক পার্ক স্থাপনের কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক বিভাগীয় শহর ও জেলায় হাইটেক পার্ক স্থাপন করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চার দিনের ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৪’ সম্মেলন ও মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। তিনি তার ডিজিটাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে চার দিনের এ মেলার উদ্বোধন করেন। খবর বাসস, বিডিনিউজের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে বাংলাদেশ সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাবে।
‘নতুন প্রজন্মকে তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে তার সরকার স্কুলে কম্পিউটার শিক্ষা চালু, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠা, কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন ও ভ্রাম্যমাণ আইটি ল্যাব চালু করেছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন ও
নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করতে তার সরকার দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল সংযোগের উদ্যোগ নিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশে বাংলাদেশের তৈরি সফটওয়্যার ও আইটি সেবা রফতানির মাধ্যমে বর্তমানে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা ২০২১ সালের মধ্যে সফটওয়্যার ও আইটি সেবা রফতানি করে এ আয় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে চাই। তিনি এ লক্ষ্য অর্জনে সরকার ও বেসরকারি খাতকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৪ সম্মেলন ও মেলা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করবে। ডিটিজাল বাংলাদেশ গড়ার দৃপ্ত পথে এ উদ্যোগ মানুষকে আরও সম্পৃক্ত করবে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আইসিটি বিভাগ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) ও ন্যাশনাল ট্রেড বডি ফর সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসের যৌথ উদ্যোগে এ মেলার আয়োজন করে।
এতে সভাপতিত্ব করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। বিশেষ অতিথি ছিলেন একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। সম্মানিত অতিথি ছিলেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব কামালউদ্দিন আহমেদ।
আরও বক্তৃতা করেন বেসিসের সভাপতি শামীম আহসান। স্বাগত বক্তৃতা দেন সম্মেলনের প্রধান প্রকল্প কর্মকর্তা রাসেল টি আহমেদ। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ খাতে বিনিয়োগের জন্য প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। খাতটিকে থার্স্ট সেক্টর হিসেবেও ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত সফটওয়্যার ও আইটি ব্যবসাকে আয়করমুক্ত রাখা হয়েছে। সফটওয়্যার আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট মওকুফ করা হয়েছে। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ঋণসহ ইকুইটি এন্টারপ্রেনিয়রশিপ ফান্ডের ব্যবস্থা চালু রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে স্যামসাং গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপন করছে। গুগল, মাইক্রোসফট ও ডেলের মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে তাদের অফিস স্থাপন করেছে। আমরা তাদেরকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানাই।
তিনি বলেন, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে স্বকর্মসংস্থানের জন্য তার সরকার লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এর আওতায় ইতিমধ্যে ১৪ হাজার ৭০০ জন আউটসোর্সিংয়ের প্রশিক্ষণ লাভ করেছেন। বর্তমানে প্রায় ৫ লাখ মানুষ আউটসোর্সিংয়ে নিয়োজিত আছেন। তারা ঘরে বসে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার জনপ্রশাসনকে প্রযুক্তিভিত্তিক সেবা প্রদানে সক্ষম করে তুলেছে। জেলা প্রশাসনে এ জন্য কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ভিত্তিক ই-সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যন্ত সব সরকারি অফিসকে একটি সরকারি নেটওয়ার্কের আওতায় সংযুক্ত করার কাজ চলছে। জাতীয় ই-তথ্য কোষ থেকে জনগণ কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন সেবাবিষয়ক তথ্য পাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে তার সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের ক্ষমতায়নে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায়। ইউনিয়ন তথ্য সেবাকেন্দ্রগুলো এ লক্ষ্যেই গড়ে তোলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আগামী দিনের পরিকল্পনা উপস্থাপন হচ্ছে এবারের এই ডিজিটাল আসরে। তিনটি পৃথক মেলা_ সফট এক্সপো, ই-গভর্ন্যান্স ও মোবাইল ইনোভেশন এক্সপোর সেতুবন্ধ হচ্ছে এই ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৪’। মেলায় কমার্স জোন, বিপিও ফোরাম, ডেভেলপারস ফোরাম ও আউটসোর্সিং ফোরামের নানা উদ্ভাবনী উদ্যোগের পসরা নিয়ে হাজির হয়েছে তরুণরা।
শিল্প, শিক্ষা, বিনিয়োগকারী ও বহুজাতিক সফটওয়্যার বিক্রেতা, আইসিটি কোম্পানি, আন্তর্জাতিক আইসিটি সংস্থা, স্থানীয় সফটওয়্যার উন্নয়ন সংস্থার প্রায় ২০০ স্টল রয়েছে এ মেলায়।