বাংলাদেশের জিডিপিতে অভিবাসী শ্রমিকদের অবদান শতকরা ১০ ভাগ। গত একযুগ আগেও তাদের এই অবদান ছিল মাত্র ৫ ভাগ। অভিবাসী শ্রমিকদের গুরুত্বপূর্ণ এই অবদানের কারণেই গত সোমবার রূপসী বাংলা হোটেলে ‘২০১৫-পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডায় অভিবাসন’ সংক্রান্ত এক বৈশ্বিক বিশেষজ্ঞ সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত আস্থার সঙ্গে বলেছেন, ‘আমাদের আলোচনার কেন্দ্রে থাকতে হবে অভিবাসীদের অধিকারের বিষয়টি। তাদের শুধু অর্থনৈতিক কার্যক্রম বা উত্পাদনের উপাদান হিসেবে দেখলে চলবে না। মানুষ হিসেবে গণ্য করতে হবে। অন্যান্য নাগরিকের মতো তাদের জন্যও সব সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বান বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে অবশ্যই যথার্থ ও সময়োচিত বিবেচিত হওয়ার দাবি রাখে। দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি সুদৃঢ় করার প্রত্যয়ে অভিবাসী কর্মীরা আত্মীয়-পরিজন ছেড়ে বিদেশ-বিভুঁইয়ে যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, সেই অবদানকে মূল্যায়ন করার উদ্দেশ্যেই প্রধানমন্ত্রীর এ আহ্বান।
আজ বিশ্বের প্রায় ২৫ কোটি অভিবাসী বিভিন্ন দেশে কাজ করেন, বসবাস করেন এবং ভ্রমণ করেন। অভিবাসীরা নিজ দেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে আর্থিক উন্নয়নে অবদান রাখেন। দেশে ফেরার সময় তারা কাজ ও জীবনের যেসব অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং ধ্যানধারণা নিয়ে ফিরে আসেন, তার মাধ্যমেও তারা নিজ দেশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে থাকেন। বাংলাদেশের মতো দেশে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য দরকার সুষ্ঠু পরিকল্পনা, উন্নত দেশগুলোর সার্বিক সহযোগিতা। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ২০১২-১৩ অর্থবছরে অভিবাসী শ্রমিকরা যোগ করেছেন প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার। বিগত কয়েক বছর ধরে জাতীয় অর্থনীতিতে অভিবাসীদের এই অবদান সামনের সারিতে। প্রতিবছরই বিদেশে কাজ করতে যাওয়া এই শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে বিশ্বের ১৫৯টি দেশে ৮৭ লাখ ১৭ হাজার বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক কর্মরত। কর্মরত এসব অভিবাসী শ্রমিকের ডিসেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৪৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার। বর্তমানে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৮ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সর্বাধিক। রেকর্ড পরিমাণ এই রিজার্ভের পিছনে বড় ভূমিকা রয়েছে অভিবাসী শ্রমিকদের। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যআয়ের দেশে পরিণত করতে বাংলাদেশের বড় ভরসার জায়গা হচ্ছে পোশাক রপ্তানি, অভিবাসী শ্রমিক ও কৃষি খাতের অব্যাহত সাফল্য।