ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, লোকবল নিয়োগ, মুনাফা বৃদ্ধি, অটোমেশন, অনলাইন সম্পন্ন, কমছে শ্রেণীকৃত ঋণ
নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও এগিয়ে যাচ্ছে রূপালী ব্যাংক লিমিটেড। ব্যবসা বৃদ্ধির পাশাপাশি ডিপোজিট, মুনাফা, আমদানি-রফতানি বাড়ছে। শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাড়ছে নতুন নতুন শাখা। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের নেতৃত্বে দক্ষ জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে ব্যাংকটিতে। ফলে অভ্যন্তরীণ ও বাণিজ্যিক পরিবর্তন এসেছে ব্যাংকের। দিন পরিবর্তন হয়েছে রূপালীর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি সমন্বিত এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনায় সম্পদের গুণগতমান বৃদ্ধির ফলে রূপালী ব্যাংকের এই সাফল্য।
রূপালী ব্যাংকের অগ্রগতি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান বলেন, এক সময় নিম্নমানের ব্যাংকের উদাহরণ হিসেবে রূপালী ব্যাংককে ধরা হতো। কারণ রূপালী ব্যাংকের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. ফরিদ উদ্দিন অতীতের সকল সমস্যা কাটিয়ে ব্যাংকটিকে টেনে ওপরে তুলছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে প্রায় সকল ্িবষয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। এখন এটি সরকারী ও বেসরকারী অন্য ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যে কোন বিষয়ে প্রতিযোগিতা করতে পারে। এছাড়া এটি বর্তমানে একটি মডেল ব্যাংকের ভূমিকা পালন করছে। যে কোন ব্যাংক এটিকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে বেছে নিতে পারে।
জানা গেছে, ২০১০ সালে রূপালী ব্যাংকের মোট আমানত ছিল ৯ হাজার ১১২.৩৮ কোটি টাকা। ২০১১ সালে মোট আমানতের পরিমাণ ১০ হাজার ৭২৩.৪০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এর প্রবৃদ্ধির হার ১৭.৬৮ শতাংশ। ২০১২ সালে এর পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ৬৫৯.৮৮ এবং ২০১৩ সালের আমানত দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা। আমানতের পাশাপাশি ঋণ ও অগ্রিমও বাড়ছে। ২০১০ সালে ব্যাংকের ঋণ ও অগ্রিম ছিল মোট ৬ হাজার ৬০৪.৯০ কোটি টাকা। ২০১০ সালে ব্যাংকের শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ ৭৯০.২৭ কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে ১১.৯৬ শতাংশ। রিকভারি স্পেশালিস্ট নিয়োগ এবং ঋণ আদায় কার্যক্রম জোরদার ও গতিশীল করার মাধ্যমে ২০১১ সালে শ্রেণীকৃত ঋণ কমে ৩১০.৭৮ কোটি টাকা হয়। তবে ২০১২ সালে এর পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২৬২.৭৯ হলেও ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে শ্রেণীকৃত ঋণ কমে ১০ হাজার ৫৩.৯১ কোটি টাকা।
২০১০ সালের তুলনায় বৈদেশিক রেমিটেন্স ৬.৫০% বৃদ্ধি পেয়ে ২০১১ সালে ২১১৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০১২ সালে রেমিটেন্স এসেছে ২ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা। আর ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে এসেছে ২ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা।
২০১০ সালে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার পরিমাণ ছিল ২৪৪.৬৯ কোটি টাকা। ২০১১ সালে পরিচালন মুনাফা ৪৭.১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৬০.৩৬ কোটি টাকা হয়েছে। ২০১০ সালে রূপালী ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার প্রদানের মাধ্যমে জেড ক্যাটাগরি থেকে এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হয়েছে ব্যাংকটি। ২০১১ সালের ৩৬০.৩৬ টাকা, ২০১২ সালে ৩৭০.৪৬ এবং ২০১৩ সালে মুনাফার এ ধারা অব্যাহত রয়েছে।
জানা যায়, ১৯৮০ সালের পর রূপালী ব্যাংকের নতুন কোন শাখা খোলা হয়নি বরং একীভূত করার মাধ্যমে শাখার সংখ্যা কমানো হয়েছিল। তবে ২০১১ সালে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ১১টি নতুন শাখা খোলা হয়েছে। করপোরেট শাখার সংখ্যা ১৩টি থেকে ৫৫টিতে নিয়ে আসা হয়েছে। ২০১২ সালে শাখা খোলা হয়েছে ৩টি এবং ২০১৩ সালে খোলা হয়েছে ২২টি। সর্বশেষ ২০১৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ৪টি শাখা খোলা হয়েছে। বর্তমানে রূপালী ব্যাংকের মোট ৫৩২টি।
গ্রাহকদের আধুনিক ব্যাংকিং সেবা প্রদানের লক্ষ্যে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ১৩১টি শাখায় অনলাইন ব্যাংকিং চালু করা হয়েছে। ২০১৪ সালের মধ্যে আরও ১৫১টি শাখায় অনলাইনের আওতায় আসবে বলে রূপালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে রূপালী ব্যাংকের ৩৮টি এটিএম বুথ চালুু হয়েছে। ব্যাংকের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য ২০১১ সালে শূন্যপদে ১০১ জন সিনিয়র অফিসার এবং ৭০২ জন অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ২০১১ সালে বিভিন্ন গ্রেডে মোট ১ হাজার কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। এক্সিলাটেরেটেড প্রোমোশনসহ পারফর্মন্স বেজড প্রোমোশন পলিসি প্রণয়ন করা হচ্ছে। ২০১৩ সালে অফিসার ৫০১ জন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আরও প্রায় ৫০০ জন সিনিয়র অফিসার নিয়োগ দেয়া হবে। এটি প্রক্রিয়াধীন। রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহমদ আল কবির বলেন, একটি সময় রূপালী ব্যাংক ইমেজ সঙ্কটে ভুগছিল। এটি ভঙ্গুর ব্যাংক হিসেবে সবার কাছে পরিচিত ছিল। দক্ষ লোকবল ছিল না। ব্যবসা ছিল না। লোকসানী ব্যাংক ছিল এটি। কিন্তু আমি ব্যাংকের হাল ধরার পরে সরকার ও ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় ভঙ্গুর দশা থেকে ব্যাংকটিকে একটি শক্ত ও লাভজনক অবস্থানে নিয়ে আসি। ব্যাংকে সামগ্রিক কর্মকা-ে অনেক পরিবর্তন এসেছে। দিন পরিবর্তন হয়েছে রূপালী ব্যাংকের।
এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ব্যাংকের মূল সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে পর্যায়ক্রমে সমাধান করার চেষ্টা করি। প্রথমে ব্যবসা বৃদ্ধির পাশাপাশি লোকবল নিয়োগ, অটোমেশন, কম্পিউটারাইডজ পদ্ধতি চালু, নতুন শাখা খোলা, উন্নত গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করা, শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়, ঋণ বিতরণ, নতুন শাখা খোলার পাশাপাশি ব্যাপক সংস্কার করি। – রহিম শেখ