অর্থনৈতিকভাবে পাকিস্তানের চেয়ে ভাল অবস্থানে বাংলাদেশ: গভর্নর

স্বাধীনতার আগে পূর্ব পাকিস্থানের অর্থনীতি নাজুক অবস্থানে ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অন্যতম লক্ষ্য ছিল এ নাজুক অর্থনৈতিক থেকে মুক্ত হওয়া। আজ আমরা অর্থনৈতিকভাবে মুক্ত হয়েছি। পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিকভাবে অনেক ভাল অবস্থানে আছে ব লে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার আগে পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ আর শাসনের কারণে নাজুক হয়ে পড়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতি। সেই সময় পূর্ব পাকিস্তানের আয় পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা হতো। এর ফলে পশ্চিম পাকিস্তানের তখন দ্রুত উন্নতি হলেও পূর্ব পাকিস্তান দূর্বল থেকে দূর্বলতর হয়ে পড়ে। আর এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্যই বাঙ্গালি জাতি বঙ্গবন্ধুর নের্তৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। এখন অন্য কারও শোষণ-বঞ্চনা নেই। একটু ধীরে হলেও নিজেদের কর্মকান্ডের সুফল আমরা পাচ্ছি। এখন অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ।
তিনি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কিছু অর্থনৈতিক দিক তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের বয়স আজ ৪৩ বছর। এই ৪৩ বছরে অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানবসম্পদ উন্নয়নসূচকে এক সময় অনেক এগিয়ে থাকা পাকিস্তানকে অনেক ক্ষেত্রেই আজ পেছনে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ। গত অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। সেখানে পাকিস্তানের রপ্তানি আয় ছিল ২ হাজার ৪৫০ কোটি ডলার। বাংলাদেশ রেমিট্যান্স পেয়েছে এক হাজার ৪০০ কোটি ডলার, পাকিস্তান পেয়েছে ৯০০ কোটি ডলার। বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন পাকিস্তান আমলের ৯৬ লাখ টন থেকে বেড়ে এখন ৩ কোটি ৬০ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের পণ্য আমদানি ব্যয়ও পাকিস্তানের চেয়ে অনেক কম। এক্ষেত্রে, বাংলাদেশ ব্যয় করে ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার আর পাকিস্তান ব্যয় করে ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি পাকিস্তানের যেখানে ২০ বিলিয়ন ডলার সেখানে বাংলাদেশের মাত্র ৭ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আছে এক হাজার ৯২০ কোটি ডলার আর পাকিস্তানের রিজার্ভ আছে ৯৬০ কোটি ডলার। রিজার্ভের এ হার প্রায় দ্বিগুণ। বাংলাদেশের বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে এ দেশের ৬ মাসের বেশি সময়ের আমদানি দায় মেটানো সম্ভব। আর পাকিস্তানের রিজার্ভ দিয়ে দেশটির তিন মাসেরও আমদানি দায় মেটানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিও হারও ছাড়িয়ে গেছে পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধিকে। বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬.২ শতাংশ আর পাকিস্তানের ছিল ৩.৬ শতাংশ। তাছাড়া, সঞ্চয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ সূচকেও পাকিস্তানকে বাংলাদেশ হার মানিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ক্ষমতায় না যেতে পেরে এক শ্রেণির লোক পাগলের মতো প্রলাপ করছে উল্লেখ করে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষ আজ ভাল অবস্থানে আছে। মানুষের এই ভাল থাকাটা এক শ্রেণির লোকের পছন্দ হচ্ছে না। তাই তারা নতুন ইস্যু নিয়ে আজ ইতিহাসকে বিকৃত করছে। এই অপশক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ৭৫ পরবর্তী ২১ বছর ক্ষমতায় থেকে আবার পাকিস্তানি রাষ্ট্র কায়েম করতে চেয়েছে। তাদের এ আশা কোনোদিন পূর্ণ হবে না বলে জানান তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু পরবর্তী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য অনেক চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহপাক তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে এবং স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি নেছার আহমেদ ভূঁঞার সভাপতিত্বে এ সময় অন্যদের মধ্যে আলোচনা করেন ওয়াল্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য ড. আব্দুল মান্নান চৌধুরী, বাংলাদেশ ভারত সম্মিলিত পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুল বারি, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী প্রমুখ।