খালি খেলে জ্বালা, ব্যঞ্জনেতে ভালা’-এরই নাম মরিচ। মরিচ কেউ খালি খালি খেলে নাকের পানি চোখের পানিতে একাকার দশা হয়। কিন্তু মাছ-মাংস ছাড়াও মুখরোচক তরকারি বা নির্দিষ্ট কিছু খাবার মুখেই তোলা যাবে না যদি মসলা হিসেবে নির্দিষ্ট মাত্রায় মরিচ দেয়া না হয়। এটা আমাদের দেশের যুগ- যুগান্তরের খাদ্যাভ্যাস। আর সেই কারণেই কিশোরগঞ্জের কৃষকরা বিভিন্ন খাদ্যশস্য আবাদের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ মরিচের আবাদও করে থাকেন।
এখন মরিচের মৌসুম শেষ হবার পথে। ফলে প্রতিটি কৃষি এলাকাতেই এখন জমি থেকে আধাপাকা মরিচ আহরণ করে শোকানোর দৃশ্য চোখে পড়বে। বাড়ির উঠানে, জমির খলায় বা প্রতিরক্ষা বাঁধের সমতল ঢালে বিছানো লাল মরিচের রঙিন আভায় যেন প্রকৃতিও উদ্ভাসিত হয়ে আছে। কৃষকরাও এসব মরিচে যেমন সারা বছর নিজের চাহিদা মেটান, আবার হাজার হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করে আর্থিকভাবেও লাভবান হন।
কিশোরগঞ্জে শীতকালীন এবং খরিপ মৌসুমে মরিচের আবাদ করা হয়ে থাকে। তবে শীতকালীন আবাদই বেশি হয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক নির্মল কুমার সাহা জানান, এবার জেলায় শীতকালীন মরিচের আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৬শ’ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৮৬১ মেট্রিক টন। খরিপ মৌসুমের কাঁচামরিচ বর্ষার সময় ৩শ’ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হয়। আর শীতকালীন কাঁচামরিচ ভরা মৌসুমে বিক্রি হয় ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি।
কিশোরগঞ্জের ১৩টি উপজেলাতেই প্রচুর পরিমাণ মরিচের আবাদ হয়ে থাকে। তবে সর্বাধিক মরিচের আবাদ হয় তাড়াইল, পাকুন্দিয়া, কটিয়াদী, হোসেনপুর, করিমগঞ্জ, বাজিতপুর এবং সদর উপজেলায়। তবে ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম এবং নিকলী উপজেলা হাওর অধ্যুষিত হবার কারণে এখানে তুলনামূলক মরিচের আবাদ কম হয়। তারপরও এসব হাওর উপজেলায়ও এখন মরিচ শোকানোর দৃশ্য দেখলে মনে হবে যেন সর্বত্র লাল গালিচা পাতা রয়েছে। এ এক মনোরম দৃশ্য।
মৌসুমের প্রথম থেকে মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত কৃষকরা জমির কাঁচামরিচ তুলে বাজারে বা পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। আর মৌসুমের শেষ দিকে জমির মরিচ দ্রুত পরিপক্ব হয়ে পাকতে শুরু করে। তখন এসব আধাপাকা মরিচ আহরণ করে শোকানো হয়। কৃষকরা সাধারণত মরিচ ভালোভাবে শুকিয়ে এগুলো পলিথিনের বস্তায় ভরে বাড়িতে সংরক্ষণ করে রাখেন। যখন বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায় তখন সেগুলো বিক্রি করেন। এখন বাজারে নতুন শুকনো মরিচের সরবরাহ বেশি বলে আস্ত শুকনো মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি। তবে বছরের অন্যান্য সময় ২শ’ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হয়। অনেক কৃষক আছেন যারা প্রতি বছর জমির শুকনো মরিচ বিক্রি করে নতুন করে জমি কেনেন বা পত্তন রাখেন। আবার পরিবারের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চাহিদাও তারা পূরণ করেন মরিচের টাকায়।
কারণ মরিচ বিক্রি করে তাদের হাতে একটা ভালো অঙ্কের থোক টাকা আসে। এ বছর অনুকূল আবহাওয়ায় মরিচের ভালো ফলন পেয়ে কৃষকরাও বেশ খুশি।