সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ: ২০ কোটি ডলারের বিশ্ব তহবিল গঠন ও পরিচালনায় বাংলাদেশ

তৌহিদুর রহমান ॥ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে ২০ কোটি মার্কিন ডলারের (প্রায় এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা) আন্তর্জাতিক একটি তহবিল গঠন ও পরিচালনা কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বের ৩৫টি দেশ ইতোমধ্যেই এ তহবিল গড়ে তোলার বিষয়ে একমত হয়েছে। ‘গ্লোবাল কম্যুনিটি এনগেজমেন্ট এ্যান্ড রেজিলেন্স ফান্ড’ (জিসিইআরএফ) নামে এ তহবিল গঠন ও পরিচালনার লক্ষ্যে আগামী জুন মাসে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় চূড়ান্ত বৈঠক ডাকা হয়েছে। বাংলাদেশ এ বৈঠকে যোগ দেবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বিশ্ব সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনের লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর কাউন্টার টেরোজিম ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় একটি আন্তর্জাতিক তহবিল গঠন করা হবে। এরপর এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আরও দুইটি বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২১ ফেব্রুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ বিষয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে আগামী জুন মাসে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় একটি বৈঠকের মাধ্যমে এ তহবিল গঠন করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক মাহফুজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় এখন তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করার লক্ষ্যে ২০ কোটি মার্কিন ডলারের একটি আন্তর্জাতিক তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ তহবিল গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান তহবিল গঠনে অংশ নিতে পারবে। এ তহবিল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধ কার্যক্রমে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে বলেও তিনি জানান।
সূত্র জানায়, গ্লোবাল কম্যুনিটি এনগেজমেন্ট এ্যান্ড রেজিলেন্স ফান্ড (জিসিইআরএফ) গঠনের লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইতোমধ্যেই তিন দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনটি বৈঠকেই অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। জিসিইআরএফ গঠন প্রক্রিয়ায় সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্ক। এ তহবিল গঠনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অংশ নিচ্ছে। ইতোমধ্যেই ৩৫টি দেশ এ তহবিল গঠনে একমত হয়েছে। তবে কোন দেশের শুধু সরকার নয়, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানও এ তহবিল গঠনে অংশ নিতে পারবে। এ তহবিল গঠনের বিষয়ে জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান সহায়তা দেবে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা আনতে এ তহবিল ব্যয় করা হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে এ তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে। তহবিল পরিচালনার জন্য একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হবে। এ স্টিয়ারিং কমিটির নিকট স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে বিভিন্ন প্রকল্প প্রস্তাবনা জমা দেবে। এসব প্রকল্পের মেয়াদ হবে ছয় মাস থেকে এক বছরব্যাপী। তাদের প্রকল্প বিবেচনায় নিয়ে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, চলচ্চিত্র নির্মাণ, সভা-সমাবেশ ইত্যাদি প্রকল্পের মাধ্যমে এ তহবিল থেকে অর্থ দেয়া হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানকে অর্থ দেয়া হবে, সেসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নিয়মিত তদারকি করা হবে। জিসিআরএফ থেকে প্রকল্প প্রস্তাবনার বিষয়ে একটি গাইড লাইন ইতোমধ্যেই তৈরি করেছে। বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে এই তহবিল দেয়া হবে। তবে সরকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানও এই তহবিল পাওয়ার জন্য বিবেচিত হবে।
জিসিইআরএফ তহবিল বরাদ্দের ক্ষেত্রে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় তৃণমূল পর্যায়ে জনসচেতনতা গঠনের লক্ষ্যে যুবসমাজকে প্রাধান্য দেয়া হবে। যেসব সংগঠন ও সংস্থা জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় যুব সমাজের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছে, তারা অগ্রাধিকার পাবে। জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার নেতৃত্বকেও গড়ে তুলতে এ তহবিল ব্যয় করা হবে। একই সঙ্গে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদেরকে এ তহবিল থেকে সহায়তা দেয়া হবে।
সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচীতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই যুক্ত হয়েছে। তবে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী জিসিইআরএফ তহবিল গঠন কার্যক্রম একেবারের নতুন একটি উদ্যোগ। সন্ত্রাস প্রতিরোধে অনেক কর্মসূচী নেয়া হলেও বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস বিরোধী তহবিল গঠনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এখন জিসিইআরএফ তহবিল গঠন ও পরিচালনা কার্যক্রমে শুরু থেকেই বাংলাদেশ অন্যতম পথিকৃত হিসেবে কাজ করছে।
সূত্র জানায়, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা বলে অভিহিত হলেও বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী-জঙ্গী গোষ্ঠী তৃণমূল জনগোষ্ঠীকে বিভ্রান্ত করে থাকে। তারা তৃণমূল জনগোষ্ঠীর মধ্যে থেকেই কর্মী সংগ্রহ করে সংগঠন পরিচালনা করে। আবার অনেক সময় তৃণমূল জনগোষ্ঠীর মধ্যেই জঙ্গউ নেতারা আশ্রয় নিয়ে থাকেন। সে কারণে তৃণমূল জনগোষ্ঠীর মধ্যেই সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই এ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় বিশ্বের ত্রিশটি দেশের সমন্বয়ে ২০১১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গ্লোবাল কাউন্টার টেরোরিজম ফোরাম গঠন করা হয়। এ ফোরাম গঠনের পর গত বছর সন্ত্রাস প্রতিরোধে এ জিসিইআরএফ নামে আন্তর্জাতিক তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আগামী জুন মাসে সুইজারল্যান্ডে এ তহবিল গঠন চূড়ান্ত হবে।