রফতানি বাণিজ্যে নতুন সংযোজন

খবরটা চমকে ওঠার মতো হলেও অবিশ্বাস্য নয়। বাংলাদেশ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ রফতানি করা হচ্ছে এ রকম রিপোর্ট দেখলে সহজে কারো বিশ্বাস হতে চাইবে না। কারণ বাংলাদেশের শিল্পভিত্তি তেমন সবল নয়। পাকিস্তান আমলে কিছু লাইট শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছিল। পাট, টিনি, সিগারেট, টেক্সটাইল, লেদার, মেশিন-টুলস ও জাহাজ মেরামত কারখানা যার মধ্যে ছিল উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ হওয়ার পর তৈরি পোশাকশিল্পের বিকাশ হয়েছে। রফতানি পণ্যের তালিকায় আগে ছিল পাট, পাটজাত দ্রব্য, চা-চামড়া। এখন নতুন যোগ হয়েছে তৈরি পোশাক, জনশক্তি, সিরামিক, ওষুধ, প্লাস্টিক ইত্যাদি। কৃষি ও কুটিরশিল্পের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের চিরায়ত পরিচিতি ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। আর এই পরিচিতি বদলে দিতে বিরাট ভূমিকা রাখবে অস্ত্র ও গোলাবারুদ রফতানি। শুধু তাই নয়, অস্ত্র ও গোলাবারুদ ক্রয় খাতে বাংলাদেশের যে ব্যয় হতো তা এখন হ্রাস পাবে। আত্মরক্ষার প্রশ্নে বাংলাদেশ নতুন আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে। কারণ, বাইরে থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ কিনতে গেলে সেই দেশের ওপর নির্ভরশীল থাকার প্রশ্ন এসে পড়ে। অন্যান্য জটিলতাও থাকে, যা সমর বিশেষজ্ঞরাই ভালো বুঝবেন। বিশ্বের উন্নত কিছু দেশ সমরাস্ত্রের বাণিজ্যে শীর্ষস্থান অধিকার করে রেখেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জামানি, অস্ট্রিয়া, ইতালি, বেলজিয়াম, রাশিয়া, চীন অস্ত্র ব্যবসায় অগ্রগামী দেশ। বিশ্বের মোট অস্ত্রবাণিজ্যের শতকরা ৪৭ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধবিমান, রণতরী, ট্যাঙ্ক, ট্যাঙ্কবিধ্বংসী কামান, ক্ষেপণাস্ত্র ইত্যাদি সমরাস্ত্র উত্পাদন ও বিপণনে উন্নত দেশগুলো একচেটিয়া কর্তৃত্ব ভোগ করছে। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশ কিছু হালকা অস্ত্র ও গোলাবারুদ রফতানি করে যদি অস্ত্র রফতানিকারক দেশের তালিকায় নাম তুলতে পারে তবে তাকে অবশ্যই অগ্রযাত্রার লক্ষণ হিসেবে দেখতে হবে।
আমরা আগেও বলেছি, আবারও বলছি— বাংলাদেশকে আত্মরক্ষায় স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে। জলে-স্থলে এবং অন্তরীক্ষে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে অপরাজেয় শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এটা দেশের স্বাধীন সত্তা, জনগণের নিরাপত্তা ও সার্বিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য। আমরা দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, ক্ষুধা ও পশ্চাত্পদতাকে সাময়িকভাবে স্বীকার করতে পারি। কিন্তু দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অরক্ষিত রাখার ঝুঁকি নিতে পারি না। দেশ হিসেবে আমরা আকার-আয়তনে ছোট হতে পারি। কিন্তু জাতি হিসেবে আমরা ছোট নই। ষোলো কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই দেশটি তার সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠে বিশ্বে অবশ্যই একটা মর্যাদার আসন খুঁজে নেবে। সেই লক্ষ্যেই দেশকে এগিয়ে যেতে হবে।
আশার কথা যে, সমরাস্ত্র ও গোলাবারুদ তৈরিতে আমরা প্রতিবেশী চীন ছাড়াও ইউরোপের অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, জার্মানি, ইতালি এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো রাষ্ট্রের সহযোগিতা পেয়েছি। এখন পণ্য হিসেবে সমরাস্ত্রের বিপণন নির্ভর করবে সম্পূর্ণ সরকারি মেশিনারির ওপর। বেসরকারি ব্যবসায়ীদের এ ব্যাপারে কিছু করণীয় নেই। অস্ত্রের বাণিজ্য সর্বদা জি-টু-জি অর্থাত্ সরকারের সঙ্গে সরকারের মধ্যেই নিষ্পন্ন হয়ে থাকে। আমরা এক্ষেত্রে সাফল্য দেখার অপেক্ষায় রইলাম।