শফিকুল ইসলাম জুয়েল
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ রফতানি করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাণিজ্য ও কূটনীতিসহ অন্যান্য আইনে কোনো বাধা না থাকলে খুব শীঘ্রই শুরু হবে রফতানি প্রক্রিয়া।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি করতে তৈরি করা হয়েছে অত্যাধুনিক বিডি-০৮ রাইফেল ও বিভিন্ন ধরনের গোলাবারুদ। এগুলো উত্পাদন করেছে বাংলাদেশ স্বশস্ত্র বাহিনী বিভাগ পরিচালিত জয়দেবপুর সমরাস্ত্র কারখানা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানার কমান্ডেন্ট মেজর জেনারেল আনোয়ারুল মোমেন বর্তমানকে বলেন, ‘অস্ত্র ও গোলাবারুদ রফতানির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি মিলেছে। আইনি, কূটনীতিক ও বাণিজ্যিক দিক পর্যালোচনায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ইতিবাচক মতামত দিলেই অস্ত্র ও গোলাবারুদ রফতানির চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। এখন অস্ত্র ও গোলাবারুদ বিক্রির বাজার ও ক্রেতা খুঁজছি আমরা। এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত ‘অস্ত্র বাণিজ্য মেলায়’ অংশ নেয়ারও পরিকল্পনা করছি।’
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘অস্ত্র ও গোলাবারুদ রফতানি ইতিবাচক উদ্যোগ। নিজস্ব চাহিদা পূরণের পর অতিরিক্ত অস্ত্র বিদেশে রফতানি করা যুক্তিযুক্ত। আমার জানা মতে, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে অস্ত্র ও গোলাবারুদ রফতানির বাজার রয়েছে।’ এই নিরাপত্তা বিশ্লেষকের পরামর্শ— অস্ত্র ও গোলাবারুদ রফতানির ক্ষেত্রে জি টু জি (সরকার হতে সরকার) পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। এদিকে আইন, স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর আর্মড ফোর্সেস ডিভিশানের চিঠির প্রেক্ষিতে রফতানি সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন ও বাণিজ্যিক দিক পর্যালোচনা করছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়। তারা মতামত জানিয়ে দ্রুত চিঠি দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আফ্রিকা মহাদেশসহ বাংলাদেশি কর্মীদের অবস্থান করা শান্তি মিশনের বিভিন্ন দেশে অস্ত্র রফতানির সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে কূটনৈতিক তত্পরতার মাধ্যমে অস্ত্র ও গোলাবারুদ বিক্রি করে বাণিজ্যিক সুবিধা নিতে পারে বাংলাদেশ। এ ছাড়া অস্ত্র ক্রয় প্রক্রিয়া থেকেও মোটা অংকের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতে পারবে বাংলাদেশ।
জানা গেছে, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে এখন ভারত ও পাকিস্তান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অস্ত্র ও গোলাবারুদ রফতানি করে আসছে। তৃতীয়তম দেশ হিসেবে এখন বাংলাদেশ অস্ত্র ও গোলাবারুদ রফতানি ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, সমরাস্ত্র কারখানা ১৯৬৮ চীন সরকারের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭০ সালের ৬ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয় এ প্রতিষ্ঠান। মুক্তিযুদ্ধের পর সংস্কার করা হয় সমরাস্ত্র কারখানাটি। ১৯৮২-৮৩ অর্থবছরে আধুনিকতার কাজ শুরু হয়, চলে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রা আড়াই হাজার রাইফেল এবং ১৫ মিলিয়ন ইউনিট গোলাবারুদ। ২০০৪-০৫ অর্থবছরে রাইফেল বিডি-০৮ প্রস্তুতের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যা সফলতা পায় ২০০৮ সালে।
সমরাস্ত্র কারখানার মেশিনারি উত্পাদন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করছে চীন। এর বাইরেও রয়েছে অস্ট্রিয়া, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, জার্মানী ও ইতালীর সহায়তা। প্রতিষ্ঠানটি কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে পরিচালিত স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। যার অবস্থান এখন ঈর্ষণীয়।
বর্তমানে সমরাস্ত্র কারখানার অধীন একটি ছোট অস্ত্র কারখানা, একটি ছোট গোলাবারুদ কারখানা, একটি গ্রেনেড কারখানা, একটি কামান গোলাবারুদ ফ্যাক্টরি এবং অস্ত্র তৈরির উপাদান কারখানা পরিচালিত হচ্ছে।