বিশ্বের প্রথম সৌরচালিত হেলিকপ্টার উদ্ভাবনে যুক্ত বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. হাসান শহীদ ও তার প্রধান প্রকল্প সহকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শাকির আহমেদকে আমরা অভিবাদন জানাই। গবেষণা প্রকল্পে যুক্ত বিভিন্ন দেশের অন্যান্য বিজ্ঞানীকেও আমাদের শুভেচ্ছা। আমরা বিশ্বাস করি, উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের বিজ্ঞানীদের এই মেলবন্ধন এ ধরনের আরও উদ্ভাবনে উৎসাহিত করবে। কেবল বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় নিজেদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখেননি; তারা দেশের মুখও আন্তর্জাতিক পরিসরে উজ্জ্বল করেছেন। আমরা জানি, বিজ্ঞান ও গবেষণায় বাংলাদেশের রয়েছে সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু, সত্যেন বোস, মেঘনাদ সাহার মতো বিজ্ঞানী উনিশ ও বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বকে পথ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশের আরেক বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম তোষা ও দেশি পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন করেছেন সম্প্রতি। এর মধ্য দিয়ে পাটের জাত উন্নয়ন ও বালাইনাশের ক্ষেত্রে বিশ্বের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। বাংলাদেশে বসে তিনি বিশেষ ধরনের ছত্রাক নিয়ে যে উদ্ভাবন করেছেন, তাও এখন উন্নত বিশ্বের পরম আকাঙ্ক্ষা। এবার বঙ্গ-বরেণ্য বিজ্ঞানীদের তালিকায় যুক্ত হলেন হাসান শহীদ ও শাকির আহমেদ। ডিসকভারির মতো বৈশ্বিক সম্প্রচার মাধ্যমে তাদের এই উদ্ভাবনের খবরের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের নামও ছড়িয়ে পড়েছে প্রান্তান্তরে। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির সাত শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে ২০১১ সালে গবেষণা প্রকল্পটি সূচিত হয়। তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পান ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবহারিক পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক ড. হাসান শহীদ। তিনিই তৈরি করেন টেকনিক্যাল মডেল। যুক্ত হন আরও পাঁচ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে গবেষণার প্রধান সহকারীর দায়িত্ব পান ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত বাংলাদেশি শাকির আহমেদ। শেষ পর্যন্ত চলতি বছরের মার্চ মাসে সাফল্য আসে। কোনো ধরনের ব্যাটারি বা জ্বালানি ছাড়াই শুধু সৌরশক্তি দিয়ে গবেষণাগারে আধা মিনিট ওড়ানো সম্ভব হয় কপ্টারটিকে। এই উদ্ভাবন ‘প্রুফ অব কনসেপ্ট’ অর্জন করে গত জুন মাসে। সংবাদমাধ্যম তখন জানতে পারে। বলা হচ্ছে, সূর্যালোকে আকাশে অনেক সময় ধরে অন্য কোনো জ্বালানি ছাড়াই এটি উড়তে পারবে। রাতে বা মেঘাচ্ছন্ন আকাশে ওড়ার জন্য ব্যাটারির সাহায্য নিতে হবে। সে ব্যাটারিও চার্জ করা যাবে কপ্টারের সৌর প্যানেল থেকে। যান্ত্রিক-অযান্ত্রিক দ্বিচক্রযানের জন্যও যে দেশ বহুলাংশে আমদানিনির্ভর, তার দুই সন্তান পরিবহনের উচ্চতর প্রযুক্তি নিয়ে সর্বশেষ ও চৌকসতম গবেষণায় সাফল্য অর্জন করেছেন_ এটা অনন্ত গর্বের। তাদের অর্জনে বাংলাদেশের আরও শিক্ষার্থী ও বিজ্ঞানী এ ধরনের গবেষণা প্রকল্পে উৎসাহিত হবেন_ সন্দেহ নেই। অস্বীকার করা যাবে না যে, নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও গত শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত আমাদের দেশে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি যে অনুরাগ ও অর্জন ছিল, গত কয়েক দশকে তা অনেকখানি মিইয়ে এসেছিল। জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ এই খাতের বিস্তৃতি ও মান নিয়ে হতাশাজনক চিত্রই পাওয়া যাচ্ছিল। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এসব সাফল্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে নিশ্চয়ই। রাজনীতিকদের চোখ খুলে দিতে এবং বিজ্ঞানের প্রতি অনুরাগ বিস্তৃত করতে সৌরচালিত কপ্টারের উদ্ভাবন কাজে দেবে_ আশা করা যায়। আমরা দেখেছি, সামাজিক ও অর্থনেতিক নানা সূচকে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন রাজনীতি তার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না। কয়েক দশকের বিরতির পর বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারেও সাফল্যের প্রবাহ যখন শুরু হয়েছে, তখন রাজনীতিকরাও বৈশ্বিক মান ও মনন অর্জনে সচেষ্ট হবেন_ আশা করা যায়। তাতে রাজনীতির মান কেবল বাড়বে না; বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণার প্রতিও সহায়তা বাড়বে।