দেশে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে স্ট্রবেরি চাষ। এর মাধ্যমে অনেক বেকার ও তরুণ যুবক তাদের বেকারত্ব ঘোচাচ্ছে। শুধু চাষই নয়, এর চারা উৎপাদন ও বিক্রি করে করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকেই। কৃষি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন সরকারি সহায়তা পেলে সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে এই স্ট্রবেরি বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব। সারাবিশ্বে জনপ্রিয়, স্ট্রবেরির মতো ফল চাষে সাফল্য, দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
অনাবাদী, পতিত ও কৃষি জমিতে মৌসুম ভিত্তিতে অতি সুস্বাদু পুষ্টিকর স্ট্রবেরি ফল চাষ করে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার লাখ লাখ কৃষকের ভাগ্যবদলের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। উত্তরাঞ্চলের পাশাপাশি খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য এলাকায় ও অনেকে স্ট্রবেরি চাষ করেছেন। অনেকেই পরীক্ষামূলকভাবে এ ফল চাষ করে ভালো লাভের মুখ দেখেন। এ চাষে করে ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়ে বাণিজ্যিকভাবে আবাদে নেমে পড়েন। অতি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল হওয়ায় চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। এতে স্ট্রবেরি চাষ করে প্রথম বছরেই লাখ টাকা আয় করছেন চাষিরা।
নওগার মশরপুরের মাহবুবুর রহমান। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে কৃষির ওপর নির্ভর করেই নিজের ভাগ্য বদলানোর কথা ভাবেন তিনি। তাই চাকরির পিছে না ঘুরে ২০০৮ সালে নামেন স্ট্রবেরি চাষে। পাঁচ কাঠা জমিতে চাষ শুরু করলেও এবছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ বিঘায়। প্রথম বছর প্রায় এক লাখ টাকা আয় করা মাহবুবা এ বছর ৩ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চারা রোপণের দেড় মাস পর গাছে স্ট্রবেরি ফল ধরা শুরু করে। এদেশের আবহাওয়া উপযোগী হওয়ার কারণে এ দেশে এটা সহজেই চাষ করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সরকারিভাবে স্ট্রবেরি সংগ্রহ ও রপ্তানি করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হলে আরো অনেক যুবক তাদের বেকারত্ব ঘোচাতে পারবেন এর মাধ্যমে। পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতির চাকাকেও সুসংহত ও গতিশীল করা সম্ভব হবে।
এর জন্য প্রশিক্ষণ ও ক্ষুদ্র প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে স্টবেরি চাষে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প চালু করা প্রয়োজন। বহির্বিশ্বের জাপান, চীন, ভারত, অস্ট্রেলিয়ার মতো এদেশের কৃষকরাও প্রতি বছর স্টবেরি রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণ বৈদশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার পাগলা গ্রামের কৃষক হসিবুল হাসান গত বছর ২০ শতক জমিতে প্রথম স্ট্রবেরি চাষাবাদ করেন। তার ২০ শতক জমিতে সব মিলিয়ে চাষাবাদে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। আর জমি থেকে প্রায় এ এক লাখ ২০ হাজার টকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেন। এ বছর দ্বিগুণ জমিতে স্ট্রবেরি আবাদ করেন তিনি। তার সাফল্যও দেখে এলাকার অনেকেই তার মতো স্ট্রবেরি চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৬ হাজার চারা লাগানো যায়। এতে খরচ হয় প্রায় দেড় লাখ টাকা। ছয় মাসের মধ্যে চাষ ও ফসল তোলা যায়। প্রতি বিঘায় প্রায় দেড় হাজার কেজি ফল পাওয়ায় যায়। ১ কেজি স্ট্রবেরি ২৫০ টাকা হিসেবে বিঘাপ্রতি আয় হয় পৌনে ৪ লাখ টাকা।
বিদেশে রপ্তানির বিপুল সম্ভাবনাময়ী এই ফল বিশ্বব্যাপী ব্যাপক কদর থাকলেও বাংলাদেশে এই ফলের ব্যাপকভিত্তিতে ইতিবাচক প্রচারণা না থাকায়, কৃষকদের প্রশিক্ষণের সুব্যবস্থা না করায় এবং ক্ষুদ্রঋণ চালু না করায় উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ব্যাপকভিত্তিতে স্ট্রবেরি চাষ সম্ভব হচ্ছে না। কৃষকেরা স্থানীয় পাইকারদের কাছে থেকে ১০ টাকা পিছ স্ট্রবেরির চারা কিনে কার্তিক মাসের প্রথম দিকে জমিতে রোপণ করেন। গাছে ৬০ দিনের মধ্যেই ফল আসে। বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদগণের মতে, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে স্ট্রবেরি চাষে উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও অন্য ফসলের চেয়ে এই স্ট্রবেরি ফলের চাষাবাদ করা সম্ভব।
কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, স্ট্রবেরি পশ্চিমা দেশের জনপ্রিয় একটি ফল। বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতে বাংলাদেশেও দেশের শষ্যভা-ারখ্যাত এলাকা উত্তরাঞ্চলে উন্নত জাতের স্ট্রবেরি চাষের মাধ্যমে এ অঞ্চলের লাখ লাখ কৃষক তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেন। ইতোমধ্যেই মাগুরা, যশোর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, মেহেরপুরসহ বেশ কিছু এলাকায় স্ট্রবেরি ফল চাষ করে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। এজন্য সরকারিভাবে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ ও পৃষ্ঠপোষকতা অতীব জরুরি বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
এদিকে ঢাকার বিভিন্ন সুপার মার্কেটে বিদেশ থেকে আমদানি হয়ে আসা স্ট্রবেরি প্রতি কেজির মূল্য ১ হাজায় বিক্রি হয়। এদেশের সব অঞ্চলেই স্ট্রবেরি চাষ করা সম্ভব। স্ট্রবেরি অত্যন্ত লাভজনক ফসল হওয়ায় এর চাষ করে শত শত কৃষক ও বেকার যুবক স্বাবলম্বী হতে পারে। একই সঙ্গে আমদানি বাবদ খরচ হওয়া বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। এজন্য প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকরি বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা।