যশোরে উৎপাদিত হচ্ছে ১৬০ কোটি টাকার গুড়

যশোরে পাটালি গুড়ের ব্যবসা এখন জমজমাট।

পৌষের শীতে যশোরে খেজুর গুড় পাটালির ব্যবসা জমে ওঠে। পাড়া-মহল্লায় ফেরি করে বিক্রি হয় এসব পাটালি। আবার খাজুরা অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামেও বিক্রি হয় সুগন্ধময় নোলেন পাটালি। বর্তমানে যশোর থেকে কার্টন বোঝাই হয়ে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে পাটালি গুড়। তবে শতভাগ খাটি পাটালি পাওয়া এখন মুশকিল। বেশির ভাগ পাটালিতে মেশানো হচ্ছে চিনি। এত কিছুর পরও প্রতিবছর শীত মৌসুমে যশোরে উৎপাদিত হচ্ছে ১৬০ কোটি টাকার পাটালি। পিঠা-পায়েসের পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতিতে এই পাটালি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ঐতিহাসিক সতীশ চন্দ্র মিত্রের ‘যশোর খুলনার ইতিহাস’ গ্রন্থসূত্রে জানা যায়, একসময় যশোর অঞ্চলের প্রধান কৃষিপণ্য ছিল খেজুরের গুড়। ১৯০০-০১ সালে পুরো বঙ্গে খেজুর চিনি উৎপাদিত হয়েছে ২১ লাখ ৮০ হাজার ৫৫০ মণ। এর মধ্যে কেবল যশোরেই উৎপাদিত হয়েছে ১৭ লাখ ৯ হাজার ৯৬০ মণ, যার দাম ছিল সেই আমলে ১৫ লাখ টাকা। এই গুড় আমেরিকা-ইউরোপে রপ্তানি হয়েছে। খেজুর গাছের জন্যই অষ্টাদশ শতাব্দীতে যশোরের গ্রামগঞ্জে গুড় তৈরির হাজার হাজার কারখানা গড়ে ওঠে।
১৯৪৭ সালের আগ পর্যন্ত কারখানাটি চালু ছিল। পরে আখের চিনির কাছে এই কারখানার পতন ঘটে। আরো জানা যায়, পুরো বঙ্গদেশের নলেন গুড়ের সন্দেশের ৯৯ শতাংশ গুড় যশোর থেকেই সরবরাহ হতো। উপমহাদেশের বিখ্যাত কলকাতার ভিমনাগের সন্দেশ তৈরি হয়েছে যশোরের নলেন গুড় দিয়েই। এখন যশোরের সব মিষ্টির দোকানে তৈরি হচ্ছে নলেন গুড়ের সন্দেশ। কিন্তু সেই নলেন গুড়ের সুগন্ধ আর পাওয়া যাচ্ছে না।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, খেজুর গুড়ে মেশানো হচ্ছে চিনি। বর্তমানে এক কেজি পাটালি যশোরের হাটবাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা। তরল খেজুর গুড় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। তারা ৫০ টাকা কেজি চিনি কিনে খেজুর রসের সঙ্গে মিশিয়ে ভেজাল খেজুর গুড় তৈরি করছে। লালচে রঙের দেখতে এই গুড় বাড়িতে কয়েক দিন রেখে দিলে সাদা হয়ে যায়। এর ঘ্রাণ, স্বাদ নেই বললেই চলে। এই পাটালি ইটের মতো শক্ত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যশোরে বর্তমানে ১৬ লাখ খেজুরগাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে গড়ে ১৩ কেজি করে গুড় হয়। তাতে দেখা যায়, বছরে ২০ হাজার ৮০০ টন গুড় উৎপাদিত হয়। গড়ে ৮০ টাকা কেজি ধরা হলে ২০ হাজার টন গুড়ের দাম ১৬০ কোটি টাকা। যশোরের বড়বাজারে পাটালি বিক্রি করার সময় কথা হয় মিঠুন হোসেনের সঙ্গে। তাঁর বাড়ি এনায়েতপুর গ্রামে। এই গ্রামের পাটালির সুনাম রয়েছে। মিঠুন বলেন, ‘বেশি লাভের জন্য এখন অনেকেই চিনি মিশিয়ে পাটালি তৈরি করছে। চিনির পাটালির ভেতরে দানা থাকবে। পাটালি হবে শক্ত। আর খাটি পাটালি হবে নরম। ভেতরে দানা থাকবে না। পাটালি দিয়ে সুগন্ধ বের হবে।’ বড়বাজারের পাইকারি পাটালির ব্যবসায়ী মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডু বলেন, ‘আমরা গুড়ে চিনি মেশাই না। গৃহস্থ চাষিরা বাড়ি থেকেই চিনি মিশিয়ে আমাদের কাছে গুড় বিক্রি করে। তাতে আমাদের করার কিছু থাকে না।’