রিজার্ভ ১৮শ কোটি ডলার, সার্কে দ্বিতীয় বাংলাদেশ

 

রিজার্ভ ১৮শ কোটি ডলার, সার্কে দ্বিতীয় বাংলাদেশ

বিশেষ প্রতিনিধি | আপডেট: ২১:০৮, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৩

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বা রিজার্ভ আবারও নতুন রেকর্ডে বা উচ্চতায় অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে সংরক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আজ বৃহস্পতিবার ১৮০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এ নিয়ে চলতি বছরে কয়েক দফায় শত কোটি ডলার করে রিজার্ভ বেড়েছে।

বর্তমানের রিজার্ভ দিয়ে দেশের প্রায় ছয় মাসের আমদানি-ব্যয় মেটানো যাবে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান এখন দ্বিতীয়তে। প্রথম অবস্থানে রয়েছে ভারত। ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার পাওয়া তথ্য অনুসারে ভারতের রিজার্ভ ২৯ হাজার ৫৭০ কোটি ডলার। তার পরই বাংলাদেশ। আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান। স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের তথ্য অনুসারে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানের রিজার্ভ হচ্ছে ৮৫২ কোটি ডলার।

মূলত, আমদানি-ব্যয় কমার পাশাপাশি রপ্তানি-আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি থাকায় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে বিদেশ থেকে বেসরকারি খাত প্রায় ২০০ কোটি ডলারের যে ঋণ এনেছে, এতেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর থেকে চাপ কমেছে। তবে পরিশোধের সময় কিছুটা চাপ আসতে পারে।

দেশে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, এখন অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছেই পর্যাপ্ত ডলার রয়েছে। কারও কারও সংরক্ষণ সীমাও অতিক্রম করছে। তারা ডলার বিক্রি করছে। কিন্তু, ক্রেতা কম। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংককে নিয়ম অনুসারে ডলার কিনতে হয়েছে ব্যাংকের কাছ থেকে।

দেশে কয়েক মাস ধরে অবরোধ-হরতালের সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা এসেছে। এমনিতেই প্রায় দুই বছর ধরে মুদ্রাবাজারে ডলারের তেমন চাহিদা নেই। টাকা দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। মূল্যমান খোয়াচ্ছে ডলার। বলা হয়, টাকা শক্তিশালী হলে প্রবাসী-আয় (রেমিট্যান্স) ও রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মধ্য মেয়াদে এই দুপক্ষই নিরুত্সাহিত হয়। যে কারণে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে ডলারের মূল্যমান ধরে রাখার একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাজারভিত্তিক ব্যবস্থা হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটা প্রচ্ছন্ন তত্পরতা থাকে ডলারের মূল্য ধরে রাখার।

বছর দুয়েক আগে এ পরিস্থিতি ছিল না। তখন ডলারের জন্য হাহাকার ছিল। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) মাধ্যমে জ্বালানি তেল আমদানি করতে ডলার জোগান দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছিল রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে। বাংলাদেশ ব্যাংকও নানা বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে আসছিল। আইডিবির কাছ থেকে শেষমেশ একটা বড় সহায়তা মেলে। আগে ১০০ কোটি ডলারে একটা ঋণ সুবিধার ব্যবস্থা ছিল। এখন তা ২৫০ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে যে পরিমাণ অর্থ জ্বালানি কিনতে ব্যয় হবে, আইডিবি তা পরিশোধ করবে। আর ছয় থেকে নয় মাস পর সেগুলো পরিশোধ করতে হচ্ছে।

আবার সমসাময়িক সময়ে সার্বিক বৈদেশিক বিনিময় পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকেও সরকার ১০০ কোটি ডলার ঋণ নেয়, যার চারটি কিস্তির অর্থ ইতিমধ্যেই রিজার্ভে এসে জমা হয়েছে।

কিন্তু, এখন কেউ আর ডলার চায় না। যে সময়টা ডলারের জন্য হাহাকার ছিল, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বাড়ছিল। একই সঙ্গে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুত্ প্রকল্প চালুর একটা তোড়জোড় পড়ে যায়। যার চাপ গিয়ে পড়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। এই বিদ্যুত্ প্রকল্পের জন্য হঠাত্ করে জ্বালানি তেলের চাহিদাও বাড়ে, যার জোগান দিতেও বেশি আমদানি করতে হয় বিপিসিকে। এখন তার পরিমাণ না কমলেও বৃদ্ধির হার নেই। কিন্তু, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমেছেও।

সব মিলে সার্বিক আমদানি-ব্যয় কমেছে। ব্যয় কমেছে দুভাবে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য কমে যাওয়ায় আমদানি কমেছে, আবার পরিমাণেও কমেছে আমদানি। জুলাই-অক্টোবর সময়ে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৪৭ এবং জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে আমদানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। তবে জুলাই-নভেম্বর সময়ে প্রবাসী-আয় বা রেমিট্যান্সে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ১৪ শতাংশ।

দেশের ব্যাংক খাতে বেশকিছু আর্থিক কেলেঙ্কারি ধরা পড়ার পর এখন যেসব লেনদেন হচ্ছে তা প্রকৃত লেনদেন। জালিয়াতকারীরা কোনো ধরনের ভুয়া লেনদেন দেখাতেও ভয় পাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাতেও আমদানি-ব্যয় কমছে।

এ পরিস্থিতিতে ডলারের চাহিদা না থাকায় মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ৭৭ দশমিক ৭৫ টাকায়। গত ছয় মাসে ডলারের বিপরীতে টাকা ৩ শতাংশের বেশি মূল্যমান সঞ্চয় করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) কাজী ছাইদুর রহমান রিজার্ভ বৃদ্ধির কারণ উল্লেখ করে প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, রপ্তানিতে একটা ভালো প্রবৃদ্ধি আছে। অন্যদিকে অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমেছে। খাদ্যপণ্য আমদানিও নেই। এখন যা আমদানি হচ্ছে তা প্রকৃত চাহিদা। এতে রিজার্ভ বাড়ছে।