দেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসন না হওয়ায় অর্থনৈতিক মন্দা কাটেনি। তবে শেয়ারবাজারে চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে। ব্যক্তিশ্রেণীর সাধারণ বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ভূমিকা রাখায় শেয়ারের চাহিদা বাড়ছে। এতে সূচকের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। আগের দিনের ধারাবাহিকতায় গতকালও উভয় শেয়ারবাজারে সব ধরনের সূচকের পরিমাণ বাড়ে। আর লেনদেন পরিস্থিতিরও উন্নতি হয়।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, শেয়ারবাজারে বড় মূলধনি ব্যাংকিং খাতের শেয়ারের দর গতকালও সংশোধন হয়। পাশাপাশি এদিনও জীবন বীমা খাতের শেয়ার থেকে মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতা ছিল। তবে এক খাতের দর পতন হলেও অন্যান্য খাতের শেয়ারের চাহিদা বাড়ায় বাজারে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। অধিকাংশ শেয়ারের দর বাড়ায় গতকালও সব ধরনের সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখী। আগের দিনের ধারাবাহিকতায় জ্বালানি ও প্রকৌশল খাতের শেয়ারের দর বাড়ায় প্রায় ২ শতাংশ বাড়ে ডিএসই-৩০ মূল্যসূচক।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে মতবিরোধ নিরসনে কূটনৈতিক চাপ বাড়লেও পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন হচ্ছে না। এরই মধ্যে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়াই নির্বাচনকালীন মন্ত্রিপরিষদ গঠন করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিগগিরই রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উদ্ভুত রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় ব্যাংকগুলোয় নতুন বিনিয়োগ কমছে। ঋণ দিতে না পারায় ব্যাংকে অলস টাকার পরিমাণ বাড়ছে। স্বাভাবিক ব্যবসার সুযোগ কমে যাওয়ায় কিছু অর্থ শেয়ারে বিনিয়োগ হচ্ছে, যা শেয়ারবাজারে লেনদেন বাড়াতে সাহায্য করছে। গতকাল দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয়েছে ৫৭৯ কোটি ৯৬ লাখ ২৫৫ টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৮১ কোটি টাকা বেশি। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) কেনাবেচা হয় ৫৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড, যা আগের দিনের চেয়ে ৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বেশি।
স্টক এক্সচেঞ্জের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিনিয়োগ সংস্থা আইসিবি এবং বাণিজ্যিক ব্যাংক জনতা, সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংকের মালিকানাধীন মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার ক্রয়চাপ বাজারকে ঊর্ধ্বমুখী রাখতে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। একই সঙ্গে প্রধান কয়েকটি মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউস থেকেও সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার কেনাবেচা বেড়েছে বলে জানা গেছে।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৬৬ শতাংশ শেয়ারের দর বৃদ্ধিতে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের কার্যদিবসের চেয়ে ২৩ পয়েন্ট বেড়ে ৪২৭৯.৪২ পয়েন্টে এবং ডিএস-৩০ মূল্যসূচক ২৭.৯৩ পয়েন্ট বেড়ে ১৪৮৯.৬১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য শেয়ারবাজার সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৫৭ শতাংশ শেয়ারের দর বৃদ্ধিতে সার্বিক মূল্যসূচক ৬০ পয়েন্ট বেড়ে ১৩২৬৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
দিন শেষে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গতকাল ডিএসইতে ২৮৭ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯২টির দর বেড়েছে, কমেছে ৭৩টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২২টির দর। অন্য শেয়ারবাজার সিএসইতে এদিন লেনদেন হওয়া ২২৫ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১৩০টির দর বেড়েছে, কমেছে ৭৩টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২২টির দর।
ডিএসইর খাতওয়ারি লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা যায়, এদিন ব্যাংকিং খাতের লেনদেন হওয়া ৩০ কোম্পানির মধ্যে ২০টির দর কমেছে, বেড়েছে ৭টির এবং বাকিগুলোর ছিল অপরিবর্তিত। এছাড়া মিউচুয়াল ফান্ড খাতে ছিল মিশ্রাবস্থা। বিপরীতে অন্য সবগুলো খাতের প্রায় সিংহভাগ শেয়ারের দর বেড়েছে। এদিন জ্বালানি, প্রকৌশল, সিরামিক্স, সিমেন্ট, ভ্রমণ ও অবকাস খাতের একটি কোম্পানির শেয়ারদরও কমেনি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে প্রকৌশল খাতের শেয়ার দর। গতকাল গড়ে এ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর বেড়েছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। দর বৃদ্ধির ধারায় পরের অবস্থানে রয়েছে সিরামিক (২ দশমিক ৭ শতাংশ), জ্বালানি খাত (২ দশমিক ৪ শতাংশ), ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (১ দশমিক ৮ শতাংশ), বস্ত্র এবং ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের (১ দশমিক ৭ শতাংশ) উল্লেখযোগ্য।
এদিকে শেয়ারবাজারে লেনদেনের পরিমাণ বাড়লেও ব্যাংকিং খাতে কমেছে। গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের মাত্র ১২ শতাংশ হয়েছে এ খাতে। যদিও আগের দিন তা ছিল ১৯ শতাংশ। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতকালও খাতওয়ারি লেনদেনে শীর্ষে রয়েছে বস্ত্র খাত। এ খাতের লেনদেন হওয়া ২৮ কোম্পানির মোট ১২৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ২২ শতাংশ। এর পরের অবস্থানে ছিল জ্বালানি খাতের ৮৬ কোটি ৬২ লাখ টাকার, প্রকৌশল খাতের ৭১ কোটি টাকা উল্লেখযোগ্য।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) প্রধান ১০টি কোম্পানি হলো— জেনারেশন নেক্সট, মেঘনা পেট্রেলিয়াম, আরএন স্পিনিং, পদ্মা অয়েল, বেঙ্গল উইন্সডোর, সামিট পূর্বাচল, সিএমসি কামাল, বাংলাদেশ সাবমেরিন, বেক্সিমকো লিমিটেড ও গ্রামীণফান।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কোম্পানি হলো— দেশ গার্মেন্ট, বাংলাদেশ বিল্ডিং, জুট স্পিনার্স, লিগ্যাসি ফুট, অরিয়ন ইনফিউশন, আলহাজ টেক্সটাইল, সিএমসি কামাল, গোল্ডেন হারভেস্ট, দেশবন্ধু পলিমার ও পদ্মা অয়েল।
অন্যদিকে দাম কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কোম্পানি হলো— ডেল্টা লাইফ, আনলিমা ইয়ার্ন, পপুলার লাইফ, নর্দান ইন্স্যুরন্স, শ্যামপুর সুগার, মেট্রোস্পিনিং, ট্রাস্ট ব্যাংক, সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ, আইএফআইএল ইসলামী মি.ফা-১ ও আইসিবি এএমসিএল ২য় মি.ফা।