শাবি শিক্ষার্থীর উদ্ভাবন ‘ইন্টেলিজেন্ট লেজার কন্ট্রোলার’

প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর, ২০১৩

শাবি শিক্ষার্থীর উদ্ভাবন ‘ইন্টেলিজেন্ট লেজার কন্ট্রোলার’

প্রযুক্তিগত গবেষণায় অসাধারণ এক সাফল্য পেয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থী সৈয়দ রেজওয়ানুল হক নাবিল ও তাঁর দল। অপটিক্যাল গবেষণার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও দামি একটি যন্ত্র সাশ্রয়ী দেশীয় প্রযুক্তিতে আরো আধুনিক ও নিরাপদ পদ্ধতিতে তৈরি করে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন তাঁরা। এই যন্ত্রটির নাম ‘ইন্টেলিজেন্ট লেজার কন্ট্রোলার’। এরই মধ্যে নাবিলদের তৈরি যন্ত্রটি শাবিপ্রবির নন-লিনিয়ার অপটিকস ল্যাবে ব্যবহার করে এর কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

অপটিক্যাল গবেষণাকাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও দামি যন্ত্র হচ্ছে ‘ইন্টেলিজেন্ট লেজার কন্ট্রোলার’। গবেষণাকাজে ব্যবহারের জন্য বিদেশ থেকে এটি আমদানি করতে ব্যয় হয় পাঁচ থেকে সাড়ে ছয় লাখ টাকা। এ ছাড়া গবেষণাগারে এটি ব্যবহারও করতে হয় অত্যন্ত সাবধানে। এর আয়ুও থাকে নির্দিষ্ট এবং কখন শেষ হবে তা আগেভাগে জানা সম্ভব হয় না। এসব সমস্যা সমাধান করে স্বল্প খরচে দেশীয় প্রযুক্তিতে ইন্টেলিজেন্ট লেজার কন্ট্রোলার’ তৈরি করেছেন শাবিপ্রবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সৈয়দ রেজওয়ানুল হক নাবিল।

থিসিসের অংশ হিসেবে গত জুন থেকে এ গবেষণা শুরু করেন তিনি। তাঁকে সাহায্য করেন একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রবি কর্মকার এবং দ্বিতীয় বর্ষের মারুফ হোসেন রাহাত। মাত্র আড়াই মাসের মধ্যে সাফল্য পান তারা। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এ লেজার কন্ট্রোলারের উৎপাদন খরচ মাত্র আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা।

গত সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চেতনা ৭১ চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের তৈরি ‘ইন্টেলিজেন্ট লেজার কন্ট্রোলার’ যন্ত্রটি তুলে দেন নাবিল ও তাঁর দল।

নাবিল বলেন, ‘এই যন্ত্রটি তৈরির সময় জাফর ইকবাল স্যার বিভিন্ন ধরনের টেকনিক্যাল বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা করেছেন।’

‘ইন্টেলিজেন্ট লেজার কন্ট্রোলার’ প্রজেক্টের তত্ত্বাবধায়ক ও পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক প্রফেসর ড. ইয়াসমিন হক বলেন, ‘ছেলেরা নিজেদের তাগিদ থেকে কাজ করছে। নিজেরা চেষ্টা করে এ রকম একটা সৃষ্টিশীল কাজ করতে পেরেছে। আমি তাদের এই সফলতায় আনন্দিত।’

নাবিল বলেন, ‘বিদেশ থেকে আমদানি করা লেজার কন্ট্রোলারের ভেতরে একটি দামি টিউব থাকে। যন্ত্রটি চালু করার পর এটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় থাকে তাই যন্ত্রটি বন্ধ করতে হলে আগে শূন্যতে নিয়ে আসতে হয়। হঠাৎ বন্ধ করে দিলে ভেতরের বাল্বটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু আমার তৈরি লেজার কন্ট্রোলারে এই ঝুঁকি নেই। কারণ ভুল নির্দেশনা দিলে যন্ত্রটি তা কার্যকর করবে না।’ নাবিল জানান, তাঁর ইন্টেলিজেন্ট লেজার কন্ট্রোলার ব্যবহারীকে জানিয়ে দেবে এটির আয়ু আর কতক্ষণ আছে। ফলে ব্যবহারকারী যন্ত্রটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধান ও মিতব্যয়ী হওয়ার সুযোগ পাবেন। এ ছাড়াও যন্ত্রটিতে মেমোরি, লেজার শাটার নিয়ন্ত্রণ, পাসওয়ার্ড প্রটেকশন, পাওয়ার কন্ট্রোল, ডাটা একিউজিশন, মোবাইলের মাধ্যমে লেজার নিয়ন্ত্রণ এবং সার্ভারে ডাটা আপলোডের ব্যবস্থাও আছে। নাবিল বলেন, দেশে নতুন নতুন গবেষণাগার হচ্ছে, সেখানে এই যন্ত্রটি ব্যবহার করা যাবে।

এর আগে দেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ট্রাকিং ডিভাইস তৈরি করে আলোড়ন তুলেছিলেন নাবিল। তার বাকি তিনটি থিসিসের মধ্যে রয়েছে ‘বোস্টার অ্যাঙ্গেল মেজারমেন্ট ডিভাইস’, ‘অপটিক্যাল চপার’ এবং ‘রুটেশনাল স্টেইজ কন্ট্রোলার’। এই তিনটি প্রজেক্টের কাজই তিনি শেষ করে ফেলেছেন এখন চলছে সেগুলোর পরীক্ষামূলক ব্যবহার।

থিসিসের বাইরেও নাবিল তাঁর সহপাঠীদের নিয়ে নিত্যনতুন আবিষ্কারের কাজ করে চলেছেন। সমমনা ১৫ জন তরুণ গবেষককে নিয়ে গড়ে তুলেছেন রোবটিক্স অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড ইন্টারফেসিং রিসার্চ গ্রুপ। গত ৯ মাসে তাঁরা সাতটি নতুন ডিভাইস তৈরি করেছেন। এর মধ্যে আছে সেপটিক ট্যাংকে গ্যাস বিকিরণে মানুষের মৃত্যু রোধে কার্বন মনোক্সাইড শনাক্তকারী যন্ত্র, অন্ধদের চলাফেরার জন্য যন্ত্র ইত্যাদি। এখন তাঁরা ব্যস্ত রোবট তৈরিতে। যে রোবট নিয়ে আগামী ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিতব্য প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন তাঁরা।