বিদ্যুত উৎপাদনে দশ হাজার মেগাওয়াটের মাইলফলক – আজ আলোক উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদ্যুত খাতের অসমাপ্ত উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়নে আবারও মহাজোট সরকারকে নির্বাচিত করার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। পুনরায় দায়িত্ব পেলে মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়া হবে। সোমবার তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হলে রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, বিদ্যুত খাতের উন্নয়নে সরকার গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। নির্বাচনী ইশতেহারে ২০১৩ সালের শেষে সাত হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনের কথা ছিল। কিন্তু সেখানে একই সময়ে দেশের স্থাপিত ক্ষমতা দাঁড়াবে ১০ হাজার ৯৮৯ মেগাওয়াট। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ এখন ডেভেলপমেন্ট স্টার। সংবাদ সম্মেলন দেখানো হয় কেন্দ্র, উৎপাদন ক্ষমতা, সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীসহ বিদ্যুতের সব সূচক উর্ধমুখী। গত পাঁচ বছরে বিদ্যুত উৎপাদনের স্থাপিত ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে ১০ হাজার মেগাওয়াটের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। এ উপলক্ষে আজ সন্ধ্যায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র এবং হাতিরঝিলে আলোক উৎসব উদযাপন করবে বিদ্যুত বিভাগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলোক উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানে কয়লাভিত্তিক সাতটি বিদ্যুত কেন্দ্রের ফলক উন্মোচন করবেন শেখ হাসিনা। ইনু বিগত বিএনপি-জামায়াত জোটের সমালোচনা করে বলেন, ওই সময় হাওয়া ভবনের সঙ্গে কমিশন বাণিজ্যে বনিবনা না হওয়ায় দেশে বিদ্যুত কেন্দ্র হয়নি। এর বিপরীতে বর্তমান সরকারের এ ধরনের কোন নজির নেই। বেগম খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রীর হাতে কোন জাদুর কাঠি নেই যে, ক্ষমতায় এলেই দেশের পরিস্থিতি বদলে যাবে। বিদ্যুত খাতকে বর্তমান সরকার ১০ হাজার মেগাওয়াট স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতায় উন্নীত করেছে। বেগম জিয়া এখন আলোর মধ্যে বসে দেশের বিদ্যুত খাতের সমালোচনা করছেন। বিগত বিএনপি সরকারের সময় দেশে ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হতো বলে তিনি সকলকে স্মরণ করিয়ে দেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, এক সময় হেনরী কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান লিগাট্রাম প্রসপারিটি ইনডেক্স বাংলাদেশকে ডেভেলপমেন্ট স্টার হিসেবে উল্লেখ করে তাদের ২০১৩ সালের প্রতিবেদন দিয়েছে। ওই ইনডেক্সের মতে, বাংলাদেশ উন্নয়নের দিক থেকে চলতি বছর ভারতের থেকে তিন ধাপ এগিয়ে গেছে। বিদ্যুত খাতের উন্নয়নের কারণে বিশ্ব মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি অর্জন (জিডিপি) ছয় এর ওপরে থেকেছে। অনেকে ভর্তুকি নিয়ে কথা বললেও সামগ্রিকভাবে দেশের ভর্তুকি জিডিপি প্রবৃদ্ধির ৫ ভাগের নিচে রয়েছে কিনা তা দেখার পরামর্শ দেন। উপদেষ্টা বলেন, বিদ্যুত খাতের ভর্তুকি দেয়ায় অর্থনীতি নানাভাবে এগিয়েছে। বিআইডিএসের সাম্প্রতিক এক গবেষণার কথা উল্লেখ করে বলেন, বিদ্যুত খাতের ভর্তুকি দেয়ায় অর্থনীতিতে এক লাখ কোটি টাকা যোগ হয়েছে। বিশেষ করে শিল্পায়ন এবং কৃষি খাত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত পাওয়ায় এই অর্জন সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, উন্নয়নের এই ধারা এগিয়ে নিতে পারলে বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবেই। এই ধারা অব্যাহত রাখার জন্য বর্তমান সরকারকে আবার ক্ষমতায় আনতে হবে। তা না হলে অন্যরা ক্ষমতায় এলে আগের মতো দেশ পিছিয়ে যাবে। তিনি বলেন, বিগত বিএনপি সরকার তাদের পাঁচ বছর সময়কালে টঙ্গীতে মাত্র একটি ৮০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করেছিল। তারা আর কোন বিদ্যুত কেন্দ্রই নির্মাণ করতে পারেনি। তিনি বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার তাদের (১৯৯৬-২০০০) সময় পর্যন্ত যে বিদ্যুত রেখে গিয়েছিল তাও এক হাজার মেগাওয়াট কমিয়ে রেখে গিয়েছিল।
উৎপাদন ক্ষমতা এত বেশি হওয়ার পরও কেন কম উৎপাদন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণ চাহিদার চেয়ে উৎপাদন ক্ষমতা ২০ ভাগ বেশি রাখতে হয়। যাতে নিয়মিত মেরামতসহ কোথাও যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে কোন বিড়ম্বনা তৈরি না হয়। এর পরও দেশে বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। বিতরণ লাইন নির্মাণ হলে বেশি বিদ্যুত উৎপাদন হবে। বিদ্যুত, জ্বালানি এবং খণিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের বিশেষ এই অর্জনকে স্মরণীয় করে রাখতে আলোক উৎসব উদ্যাপন করা হচ্ছে। জনগণের কাছে জবাবদিহি এবং একইসঙ্গে জনগণকে জানানোর জন্য এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুত দিতে চেয়েছিলাম। অনেকে একে অসম্ভব বলেছে কিন্তু আমরা এখন তাই সম্ভব করে দেখাতে চাই। এ জন্য ২০১৮ সাল নাগাদ আরও ১২ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সংবদ সম্মেলনে বিদ্যুত সচিব মনোয়ার ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার যখন দায়িত্ব গ্রহণ করে তখন দেশে বিদ্যুত উৎপাদন হতো তিন হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট। আর বর্তমানে ছয় হাজার ৬৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের রেকর্ড করেছে বাংলাদেশ। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগে পর্যন্ত মাত্র ২৭টি বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপিত হয়। যার মোট উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। আর বর্তমান সরকার প্রায় ৫ বছরে ৭০টি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি করেছে। যার মোট উৎপাদন ক্ষমতা হচ্ছে ৯ হাজার ৯০৯ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ৫৭টি অর্থাৎ ৪ হাজার ৭৭১ মেগাওয়াট উৎপাদনে এসেছে। অন্যগুলোও শীঘ্রই উৎপাদনে আসবে। তিনি আরও জানান, আগে বিদ্যুতের সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৪৭ ভাগ। এখন ৬২ ভাগ জনগণ এই সুবিধা ভোগ করছে। নতুন করে সেচ সংযোগ দেয়া হয়েছে ৭৩ হাজার ৭৩৪টি, বিতরণ লাইন স্থাপন করা হয়েছে ৩৯ হাজার ৪৮৩ কিলোমিটার। প্রতি জেলায় বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে গড়ে ৫৮ হাজার ৫০০ জন। এ ছাড়া ২০০৯ সালে মাথাপিছু বিদ্যুত উৎপাদন ছিল ২২০ কিলোওয়াট আওয়ার। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২১ কিলোওয়াট আওয়ারে। একই সঙ্গে সিসটেম লস ১৮ দশমিক ৮৫ থেকে কমিয়ে ১৪ দশমিক ৬১ করতে সক্ষম হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।