গলাচিপা রাঙ্গাবালীতে কাঁকড়া চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনাগলাচিপা (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা রাঙ্গাবালীর সোনারচরে জলাশয়ে চালি ও নেট দিয়ে চার পাশ ঘিরে ফ্যাটেনিং পদ্ধতিতে কাঁকড়া চাষ এবং চাষ করা কাঁকড়া (ইনসেটে) -যাযাদিপটুয়াখালীর গলাচিপা ও রাঙ্গাবালীর উপকূলীয় এলাকায় কাঁকড়া চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সরকারি উদ্যোগ নেই। তবুও অল্প বিনিয়োগ ও ক্ষুদ্র আকারের পুকুরে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কাঁকড়ার ফ্যাটেনিং (একটি নির্দিষ্ট পুকুর ও জলাশয়ে বাঁশের চালি বা নেট দিয়ে চার পাশ ঘিরে অপরিপক্ব পুরুষ এবং স্ত্রী কাঁকড়াকে ১৫ থেকে ৩০ দিন খাবার দিয়ে বাজারজাত করা) এ পদ্ধতি অধিকতর জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে বাণিজ্যিকভাবে উদ্যোগ নিলে এতে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। অপরদিকে বিদেশে কাঁকড়া রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে।
বঙ্গোপসাগর অধ্যুষিত দুটি উপজেলার ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ তটরেখা ও তটরেখার ২০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে প্রাকৃতিকভাবে কাঁকড়া উৎপাদন হয়ে থাকে। কাঁকড়া চাষের প্রধান উপাদান লবণ পানি। উৎপাদনের জন্য লবণাক্ততার মাত্রা ১৫ থেকে ৩০ পিপিটি এবং পানির তাপমাত্রা ২২ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকা প্রয়োজন। এ এলাকার পানিতে অক্টোবর থেকে জুন মাস পর্যন্ত প্রয়োজনীয় পরিমাণ তাপমাত্রা ও লবণাক্ততা থাকে। রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজ, সোনারচর, চরকাশেম, চররুস্তুম, চরআন্ডা, চরতাপসী, চরহেয়ার, চরআশাবাড়িয়া, চরকানকুনি, চরমাদারবুনিয়া, চরকাউখালী, চরলতা, চরগঙ্গা, নতুন চরলক্ষ্মী ও গলাচিপার চরকাজল, চরবিশ্বাস, চরবাংলাসহ ৩০টি চর রয়েছে। যেগুলোর প্রত্যেকটিতে বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়া চাষ করা সম্ভব বলে গলাচিপা উপজেলা মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা মনে করছেন ।
চরমোন্তাজের সুধান চন্দ্র শীল ও চরলক্ষ্মী গ্রামের মোশারেফ সর্দার ছোট আয়তনের দুটি পুকুরে কাঁকড়া চাষ করে ৪২ হাজার টাকা লাভ করেছেন। তারা এ বছর আরো একটি করে পুকুর লিজ নিয়ে কাঁকড়া চাষ সমপ্রসারণ করেছেন। মোশারেফ সর্দার জানান, কাঁকড়া চাষে বেশি জমি ও বেশি পুঁজির প্রয়োজন হয় না। উপযুক্ত পরিচর্যা এবং পর্যাপ্ত খাবার দেয়া হলে প্রতি হেক্টরে দুই থেকে তিন টন কাঁকড়া উৎপাদন করা সম্ভব। চরমোন্তাজ কাঁকড়া ডিপোর মালিক আজাদ সাথী ও সুলতান শরীফ জানান, প্রতিবছর উপকূলীয় অঞ্চলে চাষ করা এবং প্রাকৃতিক উৎস থেকে একশ’ থেকে সোয়াশ’ টন কাঁকড়া আহরণ করা হয়। স্থানীয় বাজারে এর দাম প্রায় ৩ কোটি টাকা। অক্টোবর থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত কাঁকড়া আহরণের মৌসুম। এ সময়ে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ কাঁকড়া ধরায় নিয়োজিত থাকে। এরা প্রাকৃতিক উৎস থেকে কাঁকড়া আহরণ করে থাকে। এছাড়া বন বিভাগের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে এবং ডুবো চরগুলোতে প্রচুর কাঁকড়া পাওয়া যায়।
১৯৭৭-৭৮ সালে কাঁকড়া রপ্তানি শুরু হয়। তিন বছর বন্ধ থাকার পর ৮২-৮৩ অর্থবরে ফের রপ্তানি শুরু হয়। প্রথম দিকের ৯ বছরে তেমন উল্লেখযোগ্য লাভ হয়নি। বর্তমানে রপ্তানিকৃত মৎস্য সম্পদের মধ্যে কাঁকড়া দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। যে কারণে উপকূলীয় অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ কাঁকড়ার চাষে ঝুঁকে পড়েছে।