গণিতশাস্ত্র অনেকের কাছে কঠিন মনে হলেও অনুপাত, সমানুপাত ও তৎসংশ্লিষ্ট ১৪টি নতুন সূত্র উদ্ভাবন ও প্রমাণ করতে সমর্থ হয়েছেন মোঃ সাজ্জাদ আলম। তার সূত্রগুলো প্রথমে ঢাকা সায়েন্স ল্যাবরেটরি, সেখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ এবং সর্বশেষ বাংলাদেশ গণিত সমিতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সঠিক বলে প্রমাণিত করে। বর্তমানে পাটিগণিতে অনুপাত ও সমানুপাত বিষয়ক তিনটি সূত্র রয়েছে। এ অনুপাতের পরিধি এত ব্যাপক যে, সকল অংক সমাধানের জন্য এ তিনটি সূত্রই যথেষ্ট নয়। এমন অনেক অঙ্ক আছে যা এগুলোর সাহায্যে সমাধান করা যায় না। এ ধরনের অঙ্ক প্রচলিত পদ্ধতিতে এক চলক বিশিষ্ট গাণিতিক খোলা বাক্যের সাহায্যে সমাধান করা হয় যা কম্পিউটারের গং ঊীপবষ এ ব্যবহার উপযোগী নয়। এ সঙ্কট নিরসনে সাজ্জাদ আলমের আবিষ্কৃত সূত্রগুলোর মাধ্যমে অংকগুলো সমাধান করা হলে কম্পিউটারের গং ঊীপবষ ব্যবহারের উপযোগী হবে। পাশাপাশি সূত্রগুলো প্রয়োগ করে ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা অনুশীলনী ১১.২-এর অঙ্কগুলো অপেক্ষাকৃত সহজে ও স্বল্প সময়ের মধ্যে সমাধান করতে পারবে।
গণিতশাস্ত্রের এই ক্ষুদে উদ্ভাবক সাজ্জাদ আলম কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের ভাটিয়া গাংপাড়া গ্রামের মোঃ আলী আক্কাছ ও গৃহিণী জোছনা আক্তারের বড় ছেলে। তার বাবা কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে নিরাপত্তা প্রহরী পদে চাকরি করেন। সামান্য মাসিক আয় দিয়ে কোনরকমে স্ত্রী, একমাত্র মেয়ে ও ২ ছেলেকে নিয়ে দিনাতিপাত করছেন। নিত্যদিন সংসারের অভাব অনটন লেগেই থাকে, তবুও তিনি অনেক কষ্টে সন্তানদের মানুষ করে চলেছেন।
২০১১ সালে সাজ্জাদ সূত্রগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ গণিত সমিতিতে পাঠিয়েছিল। পরে সমিতির পক্ষ থেকে সূত্রগুলো সম্পর্কে রিভ্যুয়ারের মতামত চাওয়া হয়। ২০১২ সালে সাজ্জাদের সূত্রগুলো কোনরকম সংশোধন পরিমার্জন ছাড়াই সঠিক বলে প্রমাণিত হওয়ায় ‘গণিত পরিক্রমা’র একবিংশ খ-ে তা প্রকাশ করা হয়।
স্থানীয় দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ অধ্যয়নরত সাজ্জাদ আলম তার প্রযুক্তিজ্ঞান কাজে লাগাতে ভবিষ্যতে সফটওয়ার নিয়ে কাজ করতে চান। তিনি মনে করেন, এতে দেশের আইটি সেক্টরকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার কাজে সহায়ক হবে। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় তার সৃজনশীল গবেষণাকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। এ জন্য তার দিগন্তপ্রসারী গণিতচর্চায় সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক ও সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।
বাংলাদেশ গণিত সমিতির সাবেক সভাপতি ও ‘গণিত পরিক্রমা’র সম্পাদক প্রফেসর এম শামসুর রহমান বলেন, গণিতশাস্ত্রে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকের উপযোগী মৌলিক উপাদান হিসেবে কাজ করবে। বিদ্যালয় থেকে উচ্চতর পর্যায় পর্যন্ত গণিত শিক্ষার বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। -মাজহার মান্না