বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর উদ্ভাবন : এক টাকায় ৫ সেকেন্ডে ফরমালিন পরীক্ষা

 
 

বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর উদ্ভাবনএক টাকায় ৫ সেকেন্ডে ফরমালিন পরীক্ষা মো. আরিফুল হক, বাকৃবি প্রতিনিধি

খরচ মাত্র এক টাকা। সময় দরকার হবে পাঁচ সেকেন্ড। এমন অকল্পনীয় স্বল্প ব্যয় ও সময়সীমায় শনাক্ত হবে ফলমূল ও মাছ-মাংসে মেশানো বিষ ফরমালিন। ফরমালিন পরীক্ষার এই পদ্ধতির উদ্ভাবক বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফারুক বিন হোসেন ইয়ামিন।
বাংলাদেশি এই বিজ্ঞানীর উদ্ভাবিত কালার রিঅ্যাকশন পদ্ধতির মাধ্যমে মাছ ও ফলমূলে মিশ্রিত সব মাত্রার ফরমালিন সহজে, কম খরচে ও নির্ভুলভাবে শনাক্ত করা যাবে। উদ্ভাবকের দাবি, এত কম খরচে ও দ্রুত সময়ে ফরমালিন শনাক্তকরণের পদ্ধতি বিশ্বের আর কোথাও ব্যবহৃত হয় না। তাৎপর্যের বিষয় হলো, উদ্ভাবিত কিটটি রাসায়নিক দ্রবণ ও বহনে সহজলভ্য হওয়ায় বাজারে ক্রেতা নিজেই তার কেনা মাছ ও ফলমূলে ফরমালিন পরীক্ষা করে নিতে পারবে।
উদ্ভাবিত পদ্ধতি সম্পর্কে গবেষক হোসেন ইয়ামিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমানে সারা দেশে বিভিন্ন বাজার ও প্রতিষ্ঠানে ৮৭টি ফরমালিন শনাক্তকরণ কিট বঙ্ প্রচলিত রয়েছে, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। অন্যদিকে ওই সব কিটের নির্ভরযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। এ অবস্থায় জনস্বার্থের গুরুত্ব অনুধাবন করে আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ফরমালিন শনাক্তকরণের সহজলভ্য পদ্ধতি উদ্ভাবনে কাজ শুরু করি। প্রায় ছয় মাসের গবেষণা শেষে আমি সফল হয়েছি। আমার উদ্ভাবিত কিটটি মূলত বিশেষ রাসায়নিক দ্রবণ (সলিউশন)। কয়েকটি রাসায়নিক দ্রবণ ব্যবহার করে এই বিশেষ দ্রবণ তৈরি হয়েছে।’
ব্যবহার পদ্ধতি : যে মাছ বা ফলমূল পরীক্ষা করা হবে তা পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে কাচের টিউবে ১ থেকে ১.৫ মি.লি. নমুনা নিতে হবে। এরপর উদ্ভাবিত কিটের এক ফোঁটা বিশেষ দ্রবণ ওই নমুনায় যোগ করলে নমুনার রং যদি খড়ের রং (হালকা হলুদ) বা বর্ণহীন হয়, তবে বুঝতে হবে ওই খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন মেশানো আছে। আর ফরমালিন না থাকলে নমুনা মেশানো দ্রবনটি ফলের ক্ষেত্রে গোলাপি অথবা বেগুনি এবং মাছের ক্ষেত্রে সবুজ অথবা নীল রং ধারণ করবে। মাছ ও ফলমূলে ফরমালিনের মাত্রা যত বেশি থাকবে, রং তত দ্রুত পরিবর্তন হবে। শুধু ফরমালিন নয়, অনেক ফল বা মাছে মেশানো অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিকও এ পদ্ধতিতে শনাক্ত করা যাবে।
বিজ্ঞানী হোসেন ইয়ামিন আরো বলেন, ‘উদ্ভাবিত কালার রিঅ্যাকশন পদ্ধতিতে ফরমালিন শনাক্ত করতে সময় লাগবে ৫ থেকে ১০ সেকেন্ড এবং প্রতিটি পরীক্ষায় খরচ পড়বে মাত্র এক টাকা। এর সবচেয়ে উপকারী দিক হলো, একজন ক্রেতা বাজারে যাওয়ার সময় কিটটি পকেটে করে নিয়ে যেতে পারবে এবং নিজে তার ক্রয়কৃত মাছ ও ফলমূলে ফরমালিন আছে কি না, তা শনাক্ত করতে পারবে। ফলে খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতা সচেতন হবে এবং ফরমালিনমুক্ত মাছ ও ফলমূল বিক্রি করতে বাধ্য হবেন। সম্প্রতি ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে উদ্ভাবিত পদ্ধতি ব্যবহার করে সফলভাবে ফরমালিন শনাক্ত করা হয়েছে। দেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পদ্ধতিটি বাজারজাত করার জন্য আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। প্রশাসনিক আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে শিগগিরই প্রযুক্তিটি সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছি।’ পদ্ধতিটির প্যাটেন্ট করার পর বিশেষ দ্রবণের রাসায়নিকের নাম প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।

 
 
সম্পাদক : ইমদাদুল হক মিলন, উপদেষ্টা সম্পাদক : অমিত হাবিব, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের পক্ষে ময়নাল হোসেন চৌধুরী কর্তৃক প্লট-৩৭১/এ, ব্লক-ডি, বসুন্ধরা, বারিধারা থেকে প্রকাশিত এবং প্লট-সি/৫২, ব্লক-কে, বসুন্ধরা, খিলক্ষেত, বাড্ডা, ঢাকা-১২২৯ থেকে মুদ্রিত।
বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ : বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, প্লট-৩৭১/এ, ব্লক-ডি, বারিধারা, ঢাকা-১২২৯। পিএবিএক্স : ০২৮৪০২৩৭২-৭৫, ফ্যাক্স : ৮৪০২৩৬৮-৯, বিজ্ঞাপন ফোন : ৮১৫৮০১২, ৮৪০২০৪৮, বিজ্ঞাপন ফ্যাক্স : ৮১৫৮৮৬২, ৮৪০২০৪৭। E-mail : info@kalerkantho.com