৮ বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক

৮ বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলকএম মামুন হোসেন

চার-ছয় বছর বয়সের শিশুদের ২ বছর মেয়াদি প্রস্তুতিমূলক শিক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্যে দেশে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। তার প্রাথমিক শিক্ষা হবে প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ৮ বছর মেয়াদি। প্রথম শ্রেণিতে লটারির ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার মানসিক নির্যাতন এবং শারীরিক শাস্তি দেয়া যাবে না। এই বিধান লঙ্ঘনকারী ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা অর্থদ- অথবা ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদ- অথবা উভয় দ-ে দ-িত হবেন।
প্রাথমিক পর্যায়ে সব শিশুর শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক হবে এবং তা শিশুর অধিকার বলে গণ্য হবে। তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণিতে বছরে দুটি অর্থাৎ অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক বা সমাপনী পরীক্ষার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে। একাডেমিক বছর শেষে বার্ষিক পরীক্ষার পরিবর্তে পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক সমাপনী সার্টিফিকেট (পিএসসি) পরীক্ষা এবং অষ্টম শ্রেণিতে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি)/ জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষকতার ক্ষেত্রে এইচএসসি পাস এবং ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষকতার ক্ষেত্রে স্নাতক পাস হতে হবে। বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং এবতেদায়ী মাদ্রাসায় শিক্ষক নির্বাচনের লক্ষ্যে একটি স্থায়ী বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে।
এসব বিধান রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম ‘শিক্ষা আইন-২০১৩’-এর খসড়া। জাতীয় শিক্ষানীতির সুপারিশের আলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই আইন প্রণয়ন করছে। সম্প্রতি খসড়া শিক্ষা আইনের ওপর জনমত যাচাইয়ের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে (িি.িসড়বফঁ.মড়া.নফ) প্রকাশ করা হয়েছে। এই খসড়ার ওপর সুশীলসমাজ, রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সর্ব স্তরের মানুষের মতামত, সুপারিশ এবং পরামর্শ আগামী ২৫ আগস্টের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ই-মেইলে (রহভড়@সড়বফঁ.মড়া.নফ, ৎধভরয়০২১২৫৯@ুধযড়ড়.পড়স, ষধথিড়ভভরপবৎ@সড়বফঁ.মড়া.নফ) জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
৬৫টি ধারাসংবলিত ২৫ পৃষ্ঠার খসড়া আইনে আরো বলা হয়েছে, প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণির শিক্ষাক্রম এবং পাঠ্যবই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণয়ন করবে। বোর্ডের অনুমতি ছাড়া শিক্ষাক্রমে অতিরিক্ত কোনো বিষয় বা পাঠ্যবই অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। এই বিধান লঙ্ঘন করলে দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অনধিক ২ লাখ টাকা জরিমানা অথবা ৬ মাসের কারাদ- অথবা উভয় দ- দেয়া হবে। প্রাথমিক স্তরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এবং সব ক্ষুদ্র-জাতিসত্তার জন্য স্ব স্ব মাতৃভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার সব ধারায় (সাধারণ, মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেন) বাংলা, ইংরেজি, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা, বাংলাদেশ স্টাডিজ, গণিত, পরিবেশ পরিচিতি, তথ্যপ্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অটিস্টিক, শারীরিক এবং মানসিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আইনে অটিস্টিক, শারীরিক এবং মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের বৃত্তিমূলক কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির জন্য ৫ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ কোটা সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে।
প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের সাধারণ, কিন্ডারগার্টেন, মাদ্রাসা, কারিগরি এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা, ইংরেজি মাধ্যম ও বিদেশি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশি কোনো শাখাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধিত হতে হবে। নিবন্ধন ছাড়া এ ধরনের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন বা পরিচালনা করা হলে, তা বন্ধ করে দেয়া হবে। একই সঙ্গে এর জন্য দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা অর্থদ- অথবা ৬ মাসের কারাদ- অথবা উভয় দ- দেয়া হবে। প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং এবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কোনো প্রতিষ্ঠান স্থাপন বা পরিচালনা করতে পারবে না।
উল্লেখ্য, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম সভায় শিক্ষা আইন প্রণয়নের জন্য শিক্ষা সচিবের নেতৃত্বে আইন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন অধিদপ্তর-দপ্তরের প্রতিনিধি সমন্বয়ে ১৯ সদস্যবিশিষ্ট শিক্ষা আইন প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির প্রথম সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবকে (নিরীক্ষা ও আইন) আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি ১২টি সভা করে শিক্ষা আইনের খসড়া প্রস্তুত করে। ওয়ার্কিং কমিটি শিক্ষা আইন প্রণয়ন করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং দপ্তরের মতামত গ্রহণ করেছে।