বিশ্বব্যাংক বলছে বাংলাদেশ এ বছরে দারিদ্র্য কমার লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে
দু’বছর আগেই এমডিজি সাফল্য অর্জন
অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিশ্বব্যাংকের মতে দারিদ্র্য নিরসনে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। দারিদ্র্য বিমোচনে জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) দু’বছর আগেই লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে দেশটি। চলতি বছরের শেষ নাগাদ এ লক্ষ্য অর্জন হবে। গত এক দশকের দারিদ্র্য হারের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি এসব মন্তব্য করেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ পোভার্টি এ্যাসেসমেন্ট শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ সময় তিনি বলেন, দারিদ্র্য হার কমার এ প্রবণতা
এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের সাফল্য ধরে রাখতে প্রশাসনকে স্থানীয় পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। কেননা ১৫ কোটি মানুষের এ দেশে প্রতিটি বিষয় ঢাকা থেকে নির্ধারিত হয়। এটা দুর্নীতিপরায়ণ, অসম্ভব, অস্বচ্ছ ও অদক্ষ ব্যবস্থা। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় শাসন ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করতে কঠোর সিদ্ধান্তে আসা দরকার।
সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর জোহানেস ঝুটের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম ও পিপিআরসির এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ডেন জোলিফি এবং ড. ইফাত শরিফ।
দারিদ্র্য হ্রাসের অর্জন ধরে রাখার ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রাখার ক্ষেত্রে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। মানবসম্পদকে উপযুক্ত করে তুলতে হবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকলেও তা আমরা আদায় করতে পারছি না। এটাকে কাজে লাগাতে হবে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের মূল্যায়নে তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত মূল্যবান সমীক্ষা। গত চার বছরে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও এশিয়ার ১৪টি এবং আফ্রিকার ১০টি দেশ ৬ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে এটা অত্যন্ত আনন্দদায়ক।
বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের ৫৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০১৫ সালে তা কমিয়ে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। গত এক দশকে ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে বাংলাদেশে দারিদ্রের হার ধারাবাহিকভাবে কমে এসেছে। ২০০০ সালে যেখানে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৩০ লাখ, ২০০৫ সালে তা কমে সাড়ে ৫ কোটি এবং ২০১০ সালে তা আরও কমে ৪ কোটি ৭০ লাখে নেমে এসেছে। সুতরাং সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার এ দুটো লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ সঠিক পথেই রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০১৫ সাল নাগাদ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ২ শতাংশ পয়েন্ট কমে আসবে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের হার তখন দাঁড়াবে ২৬ শতাংশের কাছাকাছি।
প্রধানত দুটি কারণে বাংলাদেশ এই সফলতা অর্জন করেছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এর একটি হলো- শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি। সরকারী-বেসরকারী সব ক্ষেত্রেই শ্রমের মজুরি বেড়েছে গত এক দশকে।
আর অন্যটি হচ্ছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে এসে ‘নির্ভরশীল লোকের’ সংখ্যা কমে যাওয়াও এই সাফল্যের একটি কারণ। এ ক্ষেত্রে বলা হয়েছে আগে যে পরিবার মাত্র একজন লোকের ওপর নির্ভরশীল ছিল; সেই পরিবারে এখন উপার্জনক্ষম লোকের সংখ্যা একাধিক হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত দশ বছরে (২০০০-২০১০) প্রতিবছর ১৮ লাখ অতিদরিদ্র (হতদরিদ্র) মানুষ তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের মাধ্যমে ওই সীমা থেকে বেরিয়ে এসেছে। আর দারিদ্র্যসীমা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে ১৬ লাখ মানুষ।
এই এক দশকে মূল ধারার বাইরে বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে আয় (কৃষিকাজ, রিকশা-ভ্যান চালনা ইত্যাদি পেশায়) প্রতিবছর দশ শতাংশ হারে বেড়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে কোন খারাপ পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশে যদি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হারেও প্রবৃদ্ধি হয়, তারপরও ২০১৫ সালে এমডিজির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ শতাংশ পয়েন্ট কমে আসবে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১০ সালের খানা জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এর মধ্যে ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ অতিদরিদ্র বা হতদরিদ্র। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০ সালে বাংলাদেশের ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল। তখন হতদরিদ্রের হার ছিল ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
এই হিসেবে ২০০০ থেকে এক দশকে বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ পয়েন্ট হারে দারিদ্র্য কমেছে। এর মধ্যে ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত কমেছে গড়ে ১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আর ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কমেছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০ সালে দেশের মোট দরিদ্র মানুষের মধ্যে দশ শতাংশ বিদ্যুত সুবিধা পেত। দশ বছর পর ২০১০ সালে এ সংখ্যা বেড়ে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০০০ সালে দেশের কোন দরিদ্র মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহারের সামর্থ্য রাখত না। ২০১০ সালের হিসেবে দেশের ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ দরিদ্র মানুষ মোবাইল ফোনের সুবিধা পাচ্ছে। ২০০০ সালে ১ দশমিক ৮ শতাংশ দরিদ্র মানুষ টেলিভিশন দেখার সুযোগ পেত। দশ বছর পর তা বেড়ে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ হয়।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সোশ্যাল প্রোটেকশন টিমের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ইফাত শরিফ বলেন, গত তিন দশক ধরে বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে দারিদ্র্যের হার কমছে। এমনকি বিশ্ব অর্থনীতিতে সঙ্কটের মধ্যেও এই ধারা অব্যাহত ছিল। ২০০৭-০৮ সালে বিশ্বব্যাপী খাদ্য পণ্যের দাম অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় সবাই আশঙ্কা করেছিলেন, বাংলাদেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। আগের ধারাবাহিকতায় দারিদ্র্যের হার কমেছে। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বড় ধরনের সাফল্য দেখিয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের উন্নয়ন গবেষণা গ্রুপের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ডেন জোলিফি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় দরিদ্র মানুষের জন্য সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচী বড় অবদান রেখেছে। যদিও বাংলাদেশের ৪০ শতাংশ দরিদ্র মানুষ এই কর্মসূচীর সুবিধা এখনও পায় না; তারপরও এর অবদান গুরুত্বপূর্ণ। সব গরিব মানুষ সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধা পেলে বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচনে আরও বেশি সফলতা অর্জন করত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের সাফল্য ধরে রাখতে প্রশাসনকে স্থানীয় পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। কেননা ১৫ কোটি মানুষের এ দেশে প্রতিটি বিষয় ঢাকা থেকে নির্ধারিত হয়। এটা দুর্নীতিপরায়ণ, অসম্ভব, অস্বচ্ছ ও অদক্ষ ব্যবস্থা। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় শাসন ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করতে কঠোর সিদ্ধান্তে আসা দরকার।
সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর জোহানেস ঝুটের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম ও পিপিআরসির এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ডেন জোলিফি এবং ড. ইফাত শরিফ।
দারিদ্র্য হ্রাসের অর্জন ধরে রাখার ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রাখার ক্ষেত্রে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। মানবসম্পদকে উপযুক্ত করে তুলতে হবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকলেও তা আমরা আদায় করতে পারছি না। এটাকে কাজে লাগাতে হবে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের মূল্যায়নে তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত মূল্যবান সমীক্ষা। গত চার বছরে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও এশিয়ার ১৪টি এবং আফ্রিকার ১০টি দেশ ৬ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে এটা অত্যন্ত আনন্দদায়ক।
বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের ৫৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০১৫ সালে তা কমিয়ে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। গত এক দশকে ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে বাংলাদেশে দারিদ্রের হার ধারাবাহিকভাবে কমে এসেছে। ২০০০ সালে যেখানে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৩০ লাখ, ২০০৫ সালে তা কমে সাড়ে ৫ কোটি এবং ২০১০ সালে তা আরও কমে ৪ কোটি ৭০ লাখে নেমে এসেছে। সুতরাং সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার এ দুটো লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ সঠিক পথেই রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০১৫ সাল নাগাদ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ২ শতাংশ পয়েন্ট কমে আসবে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের হার তখন দাঁড়াবে ২৬ শতাংশের কাছাকাছি।
প্রধানত দুটি কারণে বাংলাদেশ এই সফলতা অর্জন করেছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এর একটি হলো- শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি। সরকারী-বেসরকারী সব ক্ষেত্রেই শ্রমের মজুরি বেড়েছে গত এক দশকে।
আর অন্যটি হচ্ছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে এসে ‘নির্ভরশীল লোকের’ সংখ্যা কমে যাওয়াও এই সাফল্যের একটি কারণ। এ ক্ষেত্রে বলা হয়েছে আগে যে পরিবার মাত্র একজন লোকের ওপর নির্ভরশীল ছিল; সেই পরিবারে এখন উপার্জনক্ষম লোকের সংখ্যা একাধিক হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত দশ বছরে (২০০০-২০১০) প্রতিবছর ১৮ লাখ অতিদরিদ্র (হতদরিদ্র) মানুষ তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের মাধ্যমে ওই সীমা থেকে বেরিয়ে এসেছে। আর দারিদ্র্যসীমা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে ১৬ লাখ মানুষ।
এই এক দশকে মূল ধারার বাইরে বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে আয় (কৃষিকাজ, রিকশা-ভ্যান চালনা ইত্যাদি পেশায়) প্রতিবছর দশ শতাংশ হারে বেড়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে কোন খারাপ পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশে যদি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হারেও প্রবৃদ্ধি হয়, তারপরও ২০১৫ সালে এমডিজির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ শতাংশ পয়েন্ট কমে আসবে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১০ সালের খানা জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এর মধ্যে ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ অতিদরিদ্র বা হতদরিদ্র। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০ সালে বাংলাদেশের ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল। তখন হতদরিদ্রের হার ছিল ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
এই হিসেবে ২০০০ থেকে এক দশকে বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ পয়েন্ট হারে দারিদ্র্য কমেছে। এর মধ্যে ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত কমেছে গড়ে ১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আর ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কমেছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০ সালে দেশের মোট দরিদ্র মানুষের মধ্যে দশ শতাংশ বিদ্যুত সুবিধা পেত। দশ বছর পর ২০১০ সালে এ সংখ্যা বেড়ে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০০০ সালে দেশের কোন দরিদ্র মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহারের সামর্থ্য রাখত না। ২০১০ সালের হিসেবে দেশের ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ দরিদ্র মানুষ মোবাইল ফোনের সুবিধা পাচ্ছে। ২০০০ সালে ১ দশমিক ৮ শতাংশ দরিদ্র মানুষ টেলিভিশন দেখার সুযোগ পেত। দশ বছর পর তা বেড়ে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ হয়।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সোশ্যাল প্রোটেকশন টিমের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ইফাত শরিফ বলেন, গত তিন দশক ধরে বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে দারিদ্র্যের হার কমছে। এমনকি বিশ্ব অর্থনীতিতে সঙ্কটের মধ্যেও এই ধারা অব্যাহত ছিল। ২০০৭-০৮ সালে বিশ্বব্যাপী খাদ্য পণ্যের দাম অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় সবাই আশঙ্কা করেছিলেন, বাংলাদেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। আগের ধারাবাহিকতায় দারিদ্র্যের হার কমেছে। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বড় ধরনের সাফল্য দেখিয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের উন্নয়ন গবেষণা গ্রুপের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ডেন জোলিফি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় দরিদ্র মানুষের জন্য সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচী বড় অবদান রেখেছে। যদিও বাংলাদেশের ৪০ শতাংশ দরিদ্র মানুষ এই কর্মসূচীর সুবিধা এখনও পায় না; তারপরও এর অবদান গুরুত্বপূর্ণ। সব গরিব মানুষ সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধা পেলে বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচনে আরও বেশি সফলতা অর্জন করত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শুক্রবার, ২১ জুন ২০১৩, ৭ আষাঢ় ১৪২০