ফিরোজ মান্না ॥
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হচ্ছে জনশক্তি রফতানি। গত অর্থবছরসহ এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১৪ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছে। ১৯৭৬ সালে ৬ হাজার ৬৭ কর্মী রফতানির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু। জনশক্তি বাজারটি ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হয়েছে। ১৯৭৬ সাল থেকে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত ৩৬ বছরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সরকারী হিসাবে ৮০ লাখ ৭৪ হাজার ৭৮৮ বাংলাদেশী কর্মী কাজ করছেন। বেসরকারী হিসাবে এই অঙ্ক এক কোটি ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে নতুন নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টি হচ্ছে। ২০১৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত দেশ থেকে আরও প্রায় ৩ লাখ বাংলাদেশী চাকরি নিয়ে বিভিন্ন দেশে গেছেন। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দ্বিগুণ সংখ্যক কর্মী চাকরি নিয়ে যাবেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশের জনগণকে জনশক্তিতে রূপ দিতে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। দেশে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ কারিগরি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৩৬টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সরকারীভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। বেসরকারী পর্যায়ে অনেকা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে।
বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ডিজি সামছুন নাহার জনকণ্ঠকে জানান, ১৯৭৬ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৮০ লাখ ৭৮ হাজার ৭৮৮ বাংলাদেশী কর্মী বিভিন্ন দেশে চাকরি নিয়ে গেছেন। এ বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৩৭ কর্মী বিদেশ পাঠানো হয়েছে। টার্গেট নেয়া হয়েছে ৫ লাখ কর্মী বিদেশে পাঠানোর। কিন্তু এ সংখ্যা আরও অনেক বেড়ে যাবে। কারণ এর মধ্যে জনশক্তি রফতানির তিনটি নতুন বাজার সৃষ্টি হয়েছে। এই বাজারগুলো হচ্ছে-হংকং, ম্যাকাউ, থাইল্যান্ড। সুদানেও কর্মী পাঠানোর বিষয়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে।
বিএমইটির ডিজি বলেন, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সুদান, গ্রীস, লাইবেরিয়া, তানজানিয়া, এস্তোনিয়া, আজারবাইজান, নাইজেরিয়া, বোতসোয়ানা, সিয়েরালিওন, তাইওয়ান, স্পেন, পোল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, চেক রিপাবলিক, বেলজিয়াম, জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ পূর্ব ইউরোপের কয়েকটি দেশে শ্রমবাজার খোজা হচ্ছে। এসব দেশে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর নেতৃত্বে অনেক দেশ সফর করে ভাল সাড়া পাওয়া গেছে। আমি নিজে বিএমইটির পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দল নিয়ে জর্দান, নিউজিল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশ সফর করে ভাল সাড়া পেয়েছি। ওইসব দেশের কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এদিকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে অভিবাসন ব্যয় কমাতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে নেপাল ও ভারতসহ শ্রমিক রফতানিকারক দেশগুলোর সঙ্গে শীঘ্রই ধারাবাহিক আলোচনা শুরু হয়েছে। আর এতে সফলতা পাওয়া গেলে পরবর্তী সময়ে শ্রমশক্তি আমদানিকারক দেশগুলোর সঙ্গেও অভিবাসন ব্যয় কমাতে আলোচনা করবে সরকার। পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজটি করছে।