বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস : এ বছর ৫ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস : এ বছর ৫ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
চলতি অর্থবছরে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ দেশজ মোট উৎপাদনের (প্রবৃদ্ধি) পূর্বাভাস দিল বিশ্বব্যাংক। এ বছর প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধি না হওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে দেশের সহিংস অস্থির রাজনীতি, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক টালমাটাল অবস্থাকে দায়ী করছে সংস্থাটি। 

গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ শীর্ষক অর্থনৈতিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সংস্থাটির প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন এ তথ্য জানান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মিশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান সালমান জাহিদী ও প্রধান জনসংযোগ কর্মকতা মেহরিন এ মাহাবুব।

প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধি অর্জিত না হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে জাহিদ হোসেন বলেন, কৃষি উৎপাদন না হওয়া, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও স্থানীয় রাজনৈতিক অবস্থার কারণে রপ্তানি খাতে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জিত না হওয়া, দেশজ ভোগ ও বিনিয়োগ চাহিদা কমে যাওয়া এবং উৎপাদনমুখী শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধির ধীরগতির কারণে এ বছর ৬ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। 

তবে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশে প্রেক্ষিতে সন্তোষজনক বলে উল্লেখ করেন জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ভারত ও চীন প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করার পরও সে হারে অর্জিত না হওয়ায় বাংলাদেশের বর্তমান অর্জিত প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক। সে বিবেচনায় বলা যায় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক। 

তবে বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহ অব্যাহত থাকা, বছরের শেষের দিকে রপ্তানি কিছুটা ইতিবাচক ধারায় ফেরা, সার্ভিস খাত এখনও ইতিবাচক ধারায় থাকা ও প্রতিবেশী ভারতে ৬ দশমিক ১ শতাংশ, পাকিস্তানে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ, নেপালে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ এবং চীনে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ অর্জিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধিকে স্পন্দনশীল ও ইতিবাচক মনে করে বিশ্বব্যাংক।

প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ না হওয়ার পেছনে মেশিনারি আমদানি না হওয়া, টালমাটাল বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে যাওয়ার কারণে প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে না। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় বৈদ্যুতিক অবস্থার উন্নতি হলেও তা অস্থির অবস্থার মধ্যেই রয়েছে। আগামীতে অর্থর্নীতিতে বড় ধরনের উন্নয়ন সাধন করতে হলে বিদ্যুতের বর্তমান পর্যায়ে উন্নীত হওয়া অবস্থার সঙ্গে আরও ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। 

আর্থিক খাতের অস্থিতিশীলতাও প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধি অর্জিত না হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সক্ষমতা কমে যাওয়া, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা ও পুঁজিবাজারের টালমাটাল অবস্থার কারণেও প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে।

অর্থনীতিতে কিছু নিম্নমুখী সূচকের পাশাপাশি অনেক ঊর্ধ্বমুখী দিকও রয়েছে। গত দশকে উল্লেখযোগ্য হারে বাংলাদেশের দারিদ্র্য কমে এসেছে। এখনও সে ধারা অব্যাহত আছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য আরেকটি সাফল্য হলো- পরিবারে রোজগার সক্ষম লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া। একই কারণে দেশে সম্পদের সুসম বণ্টনের ক্ষেত্রেও দেশ এগিয়েছে। এ ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহর, ধনী ও দরিদ্র ইত্যাদির মধ্যে বণ্টনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ধারা সৃষ্টি হয়েছে। এটা দেশের অর্থনীতির একটি টেকসই উদাহরণ হতে পারে।

২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধিতে কিছু কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও ২০২১ সাল নাগাদ মধ্য আয়ের দেশ হতে বাংলাদেশের সমূহ সম্ভাবনা আছে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে। দেশের যে শ্রমশক্তি আছে তাতে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হলেই বাংলাদেশের মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়া সম্ভব।

মাথাপিছু যে হারে আয় হচ্ছে সে হারে বিনিয়োগ হচ্ছে না। দেশজ উৎপাদনে বাংলাদেশের বেসরকারি বিনিয়োগ ২৫ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু মোট আয়ের পুরোটা বিনিয়োগে এলে জিডিপিতে বেসরকারি বিনিয়োগ হবে ৩১ দশমিক ৪ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বেসরকারি এ বিনিয়োগের পাশাপাশি সরকারকে বিদেশি বিনিয়োগও নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। যদিও দাফতরিক সক্ষমতা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ অর্জন করেছে।

শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠার জন্য জমি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস, শ্রম বাজারে নারীদের অভিগমনের মাত্রা কম ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয় বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বর্তমান মিশ্রভাব বিরাজ করলেও আগামীর জন্য এক অসীম সম্ভাবনা অপেক্ষা করছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চীন ও পশ্চিম এশিয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের শ্রম যেমন সস্তা তেমনি চীনের মতো দক্ষ। চীন ও পশ্চিমাঞ্চলে প্রায় দেড় কোটি শ্রমশক্তির স্থানান্তর হবে। বাংলাদেশ সে সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে এখানকার দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এর জন্য দেশের অবকাঠামো উন্নয়নসহ প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগকে জোরদার করতে হবে।