দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দ্রুত কমছে

বিশ্বব্যাংকের সংবাদ সম্মেলন

 

বিশেষ প্রতিনিধি | তারিখ: ১৪-০৪-২০১৩

বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনটির জন্য বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রগতির চমৎকার একটি চিত্র দিল বিশ্বব্যাংক। বহুপক্ষীয় এই দাতা সংস্থাটি জানাল, গত এক দশকে (২০০১-২০১০) বাংলাদেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমেছে দেড় কোটি। অথচ এর ঠিক আগের দশকেই অর্থাৎ ১৯৯০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমেছিল মাত্র ২৩ লাখ।
দুই কারণে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দ্রুত কমছে। যেমন শ্রম থেকে আয় বাড়ছে এবং প্রতিটি পরিবারে কর্মযোগ্য মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। আগে একজনের ওপর নির্ভরশীল থাকত পুরো পরিবার, এখন একই পরিবারে একাধিক সদস্য কাজ করছেন।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ নিয়ে এসব তথ্যই তুলে ধরা হলো। সংস্থাটির প্রথম অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বিশ্বব্যাংকের করা গবেষণার তথ্য উপস্থাপন করে আরও জানালেন, স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আয়বৈষম্যও ছিল একটি বড় সমস্যা। গত দুই দশকে এ বৈষম্যও অনেক কমেছে। এর অর্থ হচ্ছে, প্রবৃদ্ধির সুফল আগের চেয়ে মানুষ বেশি পাচ্ছে। আঞ্চলিক বৈষম্য দেখা দিলেও সম্প্রতি তা কমে গেছে।
উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে মানব উন্নয়ন সূচকেও। বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের শক্তি ও সামর্থ্যের বড় উৎস এখন মানব উন্নয়ন সূচকে অগ্রগতি। সারা বিশ্বে ১৮টি দেশকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যারা ১৯৯০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে প্রত্যাশার তুলনায় অনেক ভালো করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশও আছে। মাতৃমৃত্যু কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্যদের কাছে এখন উদাহরণ।
উন্নত দেশগুলো প্রবৃদ্ধি অর্জনে হিমশিম খেলেও চার বছর ধরে বাংলাদেশে গড় প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ১ শতাংশ। তবে এসব তথ্যে আত্মতুষ্টির সুযোগ অনেক কম। কারণ, বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার এখনো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, প্রবৃদ্ধি হলেও তা বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান থেকে হচ্ছে না। বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের পরিমাণ বাড়লেও শ্রমশক্তির তুলনায় কর্মসংস্থান তৈরির হার একই জায়গায় স্থির। বিনিয়োগও কয়েক বছর ধরে ২৫ দশমিক ২ শতাংশে স্থির হয়ে আছে। অথচ কর্মসংস্থানের হার ২ শতাংশ বাড়ানো গেলেই প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশে উন্নীত হবে। আর তাহলেই ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ হওয়া সম্ভব।
কর্মসংস্থান বাড়াতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি অপরিহার্য। গোল্ডম্যান-স্যাকস ২০০৫ সালেই বাংলাদেশকে উদীয়মান ১১টি দেশের (নেক্সট ইলেভেন) তালিকায় রেখেছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, বিনিয়োগের জন্য পূর্ব এশিয়া খুবই ব্যয়বহুল, পাকিস্তান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ভারত অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত। আফ্রিকার দেশগুলোতে উৎপাদনক্ষমতা কম। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের যাওয়ার জায়গা এই বাংলাদেশই।
বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশের সামনে বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও কাজে লাগানোর সুযোগ অসীম সময়ের জন্য থাকবে না। দেরি করলে ‘নেক্সট ইলেভেনের’ অন্য ১০টি দেশ তা দখল করে নেবে। সুতরাং বিনিয়োগের বাধাগুলো দূর করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মূল বিষয় সুশাসন। বাংলাদেশে সুশাসনের অভাবই সবচেয়ে প্রকট। এদিকে নজর দেওয়ার পাশাপাশি আরও একটি ঝুঁকি দূর করতে হবে। এই ঝুঁকি সম্প্রতি তৈরি হয়েছে। উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাগুলো দূর করতে হবে। কেননা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই হচ্ছে এগিয়ে যাওয়ার অন্যতম পূর্বশর্ত।

সম্পাদক ও প্রকাশক: মতিউর রহমান
সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫
ফোন : ৮১১০০৮১,৮১১৫৩০৭-১০, ফ্যাক্স : ৯১৩০৪৯৬
ই-মেইল :info@prothom-alo.com