এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নÑ আকুকে প্রায় ৮৬.২৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করার পরও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ রয়েছে প্রায় ১১.৫৫ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আমদানি ব্যয় প্রবণতা আগের চেয়ে কমে এসেছে। এর ফলে আকু পেমেন্টের পরও রিজার্ভ ভালো অবস্থানে রয়েছে। এর আগে ৩১ অক্টোবর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে রেকর্ড সৃষ্টি হয়। এ সময় রিজার্ভ দাঁড়িয়েছিল প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে যে কোনো দেশে ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকতে হয়। বর্তমানে দেশের রিজার্ভ নিয়ে স্বস্তিতে আছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অথচ কয়েক মাস আগেও দেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন অর্থনীতিবিদরা। কিন্তু বর্তমানে এ আশঙ্কা অনেকটা কেটে গেছে। মূলত, বিদেশী বিনিয়োগ কমে যাওয়া ও পর্যাপ্ত সাহায্য-সহায়তা না আসায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়ে যায়। পাশাপাশি কয়েক মাস আগেও টাকার বিপরীতে ডলারের দর বৃদ্ধির ফলে আমদানি ব্যয় বেড়েছিল। আর এসব কারণেই মারাত্মক হুমকির মুখে ছিল দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মনে করছেন, রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকার ফলে লেনদেনের ভারসাম্যও (ব্যালান্স অব পেমেন্টে) স্থিতিশীল হবে। তারা আরও বলেন, রিজার্ভ ধরে রাখতে আমদানি ব্যয় কমনোর পাশাপাশি দেশে বিলাসী পণ্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই রিজার্ভ ১৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশী মুদ্রার গতিবিধি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ১ হাজার কোটি ডলারের ঘর অতিক্রম করে। রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স বৃদ্ধি পাওয়ার পর বেশ কিছুদিন রিজার্ভ ১ হাজার কোটি ডলারের ওপরেই থাকে। এমনকি আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধির পরও গত ৩ বছরে চারবার রিজার্ভ ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। বিশ্লেষকদের মতে, আমদানি ব্যয় আরও কমাতে হবে। কারণ আমদানি ব্যয় না কমালে রিজার্ভ ধরে রাখা সম্ভব নয়। এছাড়া, রিজার্ভের অন্যতম উৎস বৈদেশিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায়ও রিজার্ভের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এ অবস্থায় বিলাসী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি সরকারি ব্যয় কমানোর সুপারিশ করেছেন তারা। উল্লেখ্য, এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন হলো বহুপক্ষীয় ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে একটি আন্তঃআঞ্চলিক চলতি লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ইরান ও মালদ্বীপ এর সদস্য। ডলার ও ইউরোর মাধ্যমে আকুর বিনিময় বা লেনদেন নিষ্পন্ন হয়ে থাকে। এশিয়ার এ ৯টি দেশের মধ্যে আমদানি ও রপ্তানি করার লক্ষ্যে দেশগুলোতে যে লেনদেন হয় তা প্রতি দু’মাস পর পর পেমেন্ট করতে হয়। এরই অংশ হিসেবে বিগত দু’মাসের পেমেন্ট করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।