বাংলাদেশ নিয়ে আশাবাদএ অর্জন ধরে রাখতে হবেআমরা লক্ষ্য করেছি দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববাসী বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে আসছে। এ প্রতিবেদনটি প্রমাণ করবে তাদের এতদিনের ধারণা আসলে ভুল ছিল। যা বাংলাদেশের জন্য নিঃসন্দেহে গৌরবের।অনস্বীকার্য যে, বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনাময় একটি দেশ। বাংলাদেশের সম্ভাবনা, প্রাপ্তি, উন্নয়ন নিয়ে প্রায়ই আমরা আশাব্যঞ্জক কথা শুনতে পাই। বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাবিস্নউ মজিনা বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেকবারই প্রশংসাসূচক কথা বলেছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনেও এ তথ্যটি ফুটে উঠেছে। বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে প্রতিবেদনে। যা গতকালের যায়যায়দিনে প্রকাশিত হয়েছে। সংস্থাটির বিশ্ব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০১৩-এ বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে যে অল্প কয়েকটি দেশ মানবোন্নয়ন সূচকের পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ‘ভালো করেছে’ তাদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। আমরা লক্ষ্য করেছি দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববাসী বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে আসছে। এ প্রতিবেদনটি প্রমাণ করবে তাদের এতদিনের ধারণা আসলে ভুল ছিল। যা বাংলাদেশের জন্য নিঃসন্দেহে গৌরবের। স্বাধীনতার এ দীর্ঘদিনে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য অর্জনের জন্য কম লড়াই করেনি। কিন্তু দেশবিরোধী চক্রের নানামুখী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের কারণে বারবার উন্নয়নের এ ধারা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকারের সুচিন্তিত আত্মকর্মসংস্থানমূলক প্রকল্প করে তারা নানা ক্ষেত্রে সফলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। পড়াশোনা শিখে এখন আমাদের যুবকরা শুধু চাকরির পেছনে ছোটে না। যার সুযোগ আছে সে নির্বিঘ্নে কাজে নেমে পড়ছে। একজনের সাফল্য দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছে আরেকজন। এভাবেই কর্মসংস্থানের স্রোতধারা ছড়িয়ে পড়ছে দেশব্যাপী। হাঁস-মুরগি, মৎস্য চাষ, দুগ্ধ খামার এবং কৃষিভিত্তিক বিভিন্ন প্রকল্প করে সফল হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। একটি উৎসকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি পরিবার উপার্জনের পথ খুঁজে পাচ্ছে। এটা এখন বাংলাদেশের আশাব্যঞ্জক বাস্তবতা। প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, দুরবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে বাংলাদেশের মানুষ বাড়তি পরিশ্রম করায় এবং চাকরির সুবাদে নারীরা সন্তান লালন-পালনে বেশি অর্থ ব্যয় করতে পারায় দারিদ্র্য কমেছে। বিশ্বব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসা বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্লেষণাত্মক মন্তব্য তার যৌক্তিক বলে ধরে নেয়া যায়। বিশ্ববাসীর সামনে দেশের মানোজ্জ্বল করায় আমরা সংস্থাটিকে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে পারি। আমরা জানি, বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীদের অন্যতম হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বব্যাংক। স্বাধীনতার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উন্নয়নে নানাভাবে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে বিশ্বব্যাংক ও বিদেশি অনেক দাতা সংস্থা এবং দানশীল রাষ্ট্রগুলো। তারই ফল হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান অগ্রযাত্রা। আমরা যদি সঠিক ধারায় এগিয়ে যেতে পারি, তাহলে এ অগ্রযাত্রা আরো বেগবান হবে। তথ্যমতে, বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে নানামুখী প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কৃষি খাতে মোটা অঙ্কের ভর্তুকি দিয়ে ইতোমধ্যে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তুলেছে। নিজস্ব অর্থায়নে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসবই উন্নয়ন কর্মকা- প্রমাণ করে আমরা আর আগের অবস্থানে নেই। এ দেশের রয়েছে বিশাল জনসম্পদের একটি বড় অংশ বিদেশে শ্রমবিনিয়োগের মাধ্যমে অর্জিত অর্থে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখছে। দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সূচকে এসব প্রক্রিয়া অবশ্যই ইতিবাচক নির্দেশক। তবে দেশটিকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে উন্নীত করতে সংস্থাটি ইতোপূর্বে বাংলাদেশকে কিছু পরামর্শ দিয়েছিল। এবার সংস্থাটি এর পাশাপাশি উল্লেখ করেছে, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে দরিদ্র, তরুণ ও নারীবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণও বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। আমরা মনে করি, শুধু প্রতিবেদনের দিকে তাকিয়ে আত্মতৃপ্তি লাভের কোনো সুযোগ আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের থাকা উচিত নয়। কারণ, যেসব প্রকরণ ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিশ্বব্যাংক তার প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে সেগুলো এখন উন্নয়নের ধারায় থাকলেও এগুলো যাতে চলমান থাকে তার প্রক্রিয়া সরকারকে গ্রহণ করতে হবে। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায়ও এগুলো সমগুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত বলেই আমরা মনে করি। এছাড়া বিশ্বে দেশের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে সরকারকে এমনই উদ্যোগ নেয়া উচিত যা উন্নয়নের কোনো বিষয়ের সঙ্গেই সাংঘর্ষিক নয়। পাশাপাশি দেশ থেকে মানবাধিকার সংরক্ষণ, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমন এবং দুর্নীতির মূলোৎপাটনে সক্রিয় হতে হবে। প্রশাসন গতিশীল করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আইনের শাসন যেন কোনো অবস্থায়ই ভুলুণ্ঠিত না হয় সেদিকে যত্নবান হওয়া দরকার। কেননা, এসব অপশক্তি একটি দেশকে যে কোনো সময় উচ্চতর আসন থেকে মাটিতে টেনে নামাতে সক্ষম।