ব্যাংকিং খাতে আমানত স্থিতি ক্রমশ বাড়ছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রাহকরা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ৫ লাখ ১ হাজার ২৬০ কোটি ৮ লাখ টাকা আমানত হিসেবে জমা রেখেছে। এ ক্ষেত্রে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আমানত স্থিতির পরিমাণ ১৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়েছে।
এ সময়ে সার্বিক ব্যাংকিং খাতে আমানত স্থিতির প্রবৃদ্ধির বিপরীতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। হিসাব অনুযায়ী আমানত স্থিতির তুলনায় ঋণের প্রবৃদ্ধি এক শতাংশ কম রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সেপ্টেম্বর ভিত্তিক হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, আলোচ্য সময় পর্যন্ত গ্রাহকরা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ৫ লাখ ১ হাজার ২৬০ কোটি ৮ লাখ টাকা আমানত হিসেবে জমা রেখেছে- যা এযাবৎ কালের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ২৪ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
এ সময়ে ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক বা গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ করেছে ৪ লাখ ২ হাজার ৬০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। গত বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি ১৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
আমানত স্থিতির প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর তদারকি, সহনশীল মুদ্রানীতি এবং ঋণ শ্রেণীকরণে নতুন নীতিমালা চালু করায় ব্যাংক ব্যবস্থায় আমানতের পরিমান বাড়ছে। একই সঙ্গে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমছে।’
তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর আর্থিক অন্তর্ভূক্তিমূলক কর্মকান্ড বাস্তবায়ন বিশেষ করে কৃষি, এসএমই, নারী উদ্যোক্তা ও পরিবেশবান্ধব খাতে ঋণ বিতরণ ও আদায় এবং গ্রাহক সেবার মানোন্নয়ন আমানত স্থিতির পরিমাণ বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
বৈশ্বিক মন্দার মধ্যে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই পরিমাণ আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণ যে কোন বিবেচনায়ই ইতিবাচক বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান ও পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, উচ্চহারে প্রবাসী আয় প্রবাহের পাশাপাশি খাদ্যজাত পণ্যের আমদানি হ্রাস এবং মূল্যস্ফীতি কমে আসায় ব্যাংকিং খাতে তারল্য পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। এর ফলে আমানত স্থিতি বাড়ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চার ব্যাংক সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপলী ব্যাংকে গ্রাহকরা ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৯৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা আমানত হিসেবে জমা রেখেছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আমানত স্থিতি রয়েছে সোনালী ব্যাংকের। ব্যাংকটির এ সময় পর্যন্ত মোট স্থিতির পরিমাণ হচ্ছে ৫০ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা।
বেসরকারী মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৩ লাখ ১৯ হাজার ৬৫৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা স্থিতি রয়েছে। বেসরকারী খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে গ্রাহকরা ইসলামী ব্যাংকে সবচেয়ে বেশী আমানত রেখেছে। ব্যাংকটির সেপ্টেম্বর শেষে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।
এদিকে বিদেশী মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ২ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। আর সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলো ঋণ দেয়ার চেয়ে আমানত সংগ্রহ করেছে বেশি।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদেশী মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমানত স্থিতি রয়েছে স্ট্যার্ন্ডার্ড চার্টাড ব্যাংক। এ সময়ে ব্যাংকটির আমানতের প্রবৃদ্ধির হার ২৪ দশমিক ৩২ শতাংশ।
অপরদিকে বিশেষায়িত ৪ ব্যাংক মিলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট আমানত সংগ্রহ করেছে ২৩ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা যেখানে মোট আমানতের প্রবৃদ্ধি হার ১৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। একই সময়ে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ২৮ শতাংশ।
সরকারের বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ১৩ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা আমানত স্থিতির দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। ব্যাংকটি এ সময়ে আমানতের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। যেখানে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ।