থ্রিজি লাইসেন্স- ২ মাসের মধ্যে যাচ্ছে বেসরকারি অপারেটরে

আগামী ২ মাসের মধ্যে তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল প্রযুক্তি (থ্রিজি) সেবা যাচ্ছে বেসরকারি অপারেটরে। এগুলো হচ্ছে- বাংলালিংক, গ্রামীণফোন, এয়ারটেল, সিটিসেল ও ওয়ারিদ। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করা হয়েছে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশনের (বিটিআরসি) নতুন চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস মানবজমিনকে বলেন, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে সচিব থাকা অবস্থায় বেসরকারি মোবাইল অপারেটরদের থ্রিজি লাইসেন্স দেয়ার কাজ অনেক দূর এগিয়ে নেয়া হয়েছে। আশা করি আগামী বছরের প্রথমদিকে থ্রিজি লাইসেন্স প্রাইভেট সেক্টরে দেয়া যাবে। তবে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ বলা যাবে না। বর্তমানে এ সুবিধা পাচ্ছে কেবল সরকার নিয়ন্ত্রিত মোবাইল অপারেটর টেলিটক। গত মাসের প্রথমদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থ্রিজির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। বেসরকারি মোবাইল অপারেটরদের ওই লাইসেন্স দেয়াকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন বলে জানান বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান। তার নেয়া ৫ চ্যালেঞ্জের মধ্যে এটা অন্যতম। অপর চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে- ভিএসপি লাইসেন্স ইস্যু, ভিওআইপি নিয়ে বদনাম ঘোচানো, ৮৫টি আইজিডব্লিউ, আইআইবি ও আইসিএক্স লাইসেন্স মনিটরিং ও স্যাটেলাইট প্রজেক্ট এগিয়ে নেয়া। এদিকে থ্রিজিকে জনপ্রিয় করতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় অপারেটরগুলোকে বাড়তি সুবিধা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য খসড়া নীতিমালায় প্রস্তাবিত মূল্যের চেয়ে কম দামে থ্রিজি লাইসেন্স দিতে যাচ্ছে তারা। প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের জন্য ‘বিড মানি’ ১ কোটি ডলার কমানোর প্রস্তাব রয়েছে খসড়া নীতিমালায়। এর আগে থ্রিজি খসড়া নীতিমালায় প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের জন্য বিড মানি (ন্যূনতম দর) ৩ কোটি ডলার নির্ধারণ করা হয়। সমপ্রতি টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে তরঙ্গ মূল্য নির্ধারণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে তা ২ কোটি ডলার প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি মাসে প্রাথমিকভাবে নীতিমালা চূড়ান্ত করে বিটিআরসিসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই এ নীতিমালা চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে। নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়ার পর বিটিআরসি নিলামের জন্য প্রস্তুতি নেবে। গত ২৮শে মার্চ থ্রিজি মোবাইল সার্ভিস লাইসেন্সের খসড়া নীতিমালা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় বিটিআরসি। এতে পাঁচটি অপারেটরকে লাইসেন্স  দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, থ্রিজি সংযোগ দিয়ে অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে ইন্টারনেট ব্যবহারসহ ভিডিও কল করা, মোবাইল ফোনে  টেলিভিশন দেখা, ভিডিও স্ট্রিমিং, রিয়েল টাইম  গেমিং, অডিও ভিডিও চ্যাটিং সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী হবে। এদিকে টেলিটক এরইমধ্যে তাদের থ্রিজি সেবার কাজ শুরু করেছে। টেলিটক জানিয়েছে, গ্রাহকরা এখন কেবল রাজধানীতে থ্রিজি সেবা পাবেন। পর্যায়ক্রমে ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম ও জানুয়ারিতে সিলেটে থ্রিজি সেবা দেয়া হবে। টেলিটক আশা করছে, প্রাথমিক পর্যায়ে রাজধানীর চার লাখ গ্রাহক পাবেন এ সেবা। ভিডিও কলের দাম একটু বেশি হলেও ব্যান্ডউইথ বিকাবে পানির দামে। ৫১২ কিলোবাইট গতির ১০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ বান্ডেলের দাম এক হাজার টাকা। ভিডিও এবং ভয়েস কল দুটির সঙ্গেই থাকছে দশ সেকেন্ডের পালস। তারা জানায়, এত কম দামে এশিয়ার কোথাও ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ বিক্রি হয় না। থ্রিজি সিমে ভয়েস কলে অননেটে (টেলিটক থেকে  টেলিটকে) প্রতি মিনিটে খরচ হবে ৬০ পয়সা। দশ সেকেন্ডের পালস ১০ পয়সা। অফপিক আওয়ারে এ খরচ দশ সেকেন্ডে ৫ পয়সা। অন্যদিকে অফনেটে (অন্য অপারেটরে) প্রতি দশ  সেকেন্ডের জন্য খরচ ১৬ পয়সা। ডেটার ক্ষেত্রে বান্ডেলের বাইরে এক পয়সায় পাওয়া যাবে ৫ কিলোবাইট ব্যান্ডউইথ। ২৫৬ গতির ক্ষেত্রে ৪ জিবির দাম পড়বে ৪শ’ টাকা। ৮ জিবি বান্ডেলের দাম ৭শ’ টাকা। মাসে আনলিমিটেড ব্যবহারের প্যাকেজের দাম এক হাজার ৫০ টাকা। ৫১২ কিলোবাইট গতির ক্ষেত্রে এক জিবি ২শ’ টাকা, দুই জিবি ৫শ’ টাকা, ১০ জিবি এক হাজার টাকা এবং আনলিমিটেড ব্যবহারের  ক্ষেত্রে ১৫শ’ টাকা।