এবার সচিবালয় থেকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সব দফতর নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হচ্ছে। নিজ ইউনিয়নে বসেই সরকারী সব তথ্য জানার সুবিধা পাওয়া যাবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এ জন্য দু’টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে ই-গর্বন্যান্সের আওতায় চলে আসবে গোটা দেশ। প্রকল্প দু’টি বাস্তবায়ন করতে ১৩ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার খরচ হবে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে প্রকল্প দু’টি বড় ভূমিকা পালন করবে। এর আগে সারা দেশের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়নে ইন্টারনেট সংযোগসহ (ব্রডব্যান্ড-ওয়ার্লেস) তথ্য সেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য এই তথ্য সেবা কেন্দ্রগুলোকেই কাজে লাগানো হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল চীন সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় ‘ডেভেলপমেন্ট আইসিটি-ইনফ্রা নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ গবর্নমেন্ট ফেস-২ (ইনফো-সরকার) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে সরকার টু সরকার চুক্তি করা হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় প্রকল্পের জন্য চীন সরকারের কাছে ১৩ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার অর্থ সহযোগিতা চেয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় বিটিসিএলয়ের বিদ্যমান টেলিকমিউনিকেশন অবকাঠামো ব্যবহার করে দেশের উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে। এরপর উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড অথবা ওয়ার্লেস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যন্ত সরকারী দফতরগুলোর ডাটা পাওয়া যাবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ ক্রয় কমিটি প্রকল্পের প্রথম পর্বের দরপ্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। দুই পর্বে প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। প্রকল্প দু’টি ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় ৪৮৫টি উপজেলার সব সরকারী দফতরকে নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত করা, প্রচলিত ডাটা সেন্টারের ক্যাপাসিটি বর্ধিতকরণ, ডিজাস্টার রিকভারি সেন্টার স্থাপন, বাংলাদেশ সচিবালয়ে ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক স্থাপন, প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে স্থাপিত সরকারি নেটওয়ার্কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। প্রকল্পের মধ্যে থাকবে ৮শ’ লোকেশন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং করার সুবিধা। ৩শ’ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হবে। সরকারের মাঠ পর্যায়ে যোগাযোগে ট্যাবলেট পিসি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ফলে মাঠ পর্যায় থেকেও ভিডিও কনফারেন্সিং, ই-মেইল বার্তা আদান-প্রদান, সরকারী ফরম পূরণ, নেটওয়ার্কভিত্তিক টেলিফোন হিসেবে ব্যবহারে বহুবিধ সুবিধা পাওয়া যাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশ তথ্যপ্রযুক্তিতে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
ইউএনডিপির অর্থ সহযোগিতায় ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষ থেকে দেশের ৪ হাজার ৫০১টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) তথ্য সেবাকেন্দ্রের (ইউআইএসসি) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। স্থানীয় সরকার বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই (এক্সসেস টু ইনফরমেশন) প্রকল্পের যৌথ উদ্যোগে তথ্য সেবাকেন্দ্র চালু করা হয়। এই সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে গ্রামের কৃষক-শ্রমিক, ছাত্রছাত্রী সব শ্রেণীপেশার মানুষ সুবিধা পেয়ে আসছে। ইন্টারনেটের আওতায় আসায় স্থানীয় সরকার পর্যায়ের কাজকর্মে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা অনেকটা নিশ্চিত হয়েছে। অনেক এলাকায় পুরোপুরি তথ্যকেন্দ্রগুলো সমস্যাসংকুল হয়ে পড়েছে। এরপর গ্রামের মানুষ প্রথম দিকে বিষয়টি জানার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছে। এতেও মানুষের তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞান অর্জন হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, ইউএনডিপির সহযোগিতায় সারা দেশের ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে ইন্টারনেট সংযোগসহ তথ্যকেন্দ্র স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে তিন বছর আগে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর এবং এটুআই প্রকল্পের কর্মকর্তাদের দাবি, কেন্দ্র থেকে জেলা সদর পর্যন্ত অনেক বিষয় ডিজিটাল পদ্ধতির আওতায় আনা হয়েছে। এখন উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত কানেকটিভিটির কাজ চলছে। কেন্দ্র থেকে দেশের ৬৪টি জেলা পর্যায়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি কথা বলা যাচ্ছে। আগামী দিনে উপজেলা পর্যায়ে ভিডিও কনফারেন্স নিয়ে যাওয়া হবে। ধাপে ধাপে ইউনিয়ন এবং গ্রোথ সেন্টারে ভিডিও কনফারেন্স করার সুবিধা তৈরি হবে। সরকার কৃষকের মধ্যেও কমপিউটার ও ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। কৃষক যাতে এর মাধ্যমে সুবিধা পেতে পারেন। কোন জমিতে কি ফসল ফলবে তার সেবাও ইন্টানেটের মাধ্যমে পেতে পারেন একজন কৃষক। এমন পদক্ষেপই হাতে নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবায় ইন্টারনেট সহায়তা বাড়ানোর জন্য প্রতিটি হাসপাতালে ওয়েবক্যাম, ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হবে। মানুষ যাতে ই-মেডিসিনের মাধ্যমে সহজেই স্বাস্থ্যসেবা পায়।