ঢাকা: রাজধানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন বা বিআরটিসির বাস যাত্রীদের টিকিট কেনার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার সময় শেষ হয়ে এসেছে। বাস এলেই টিকেটের জন্য আর দৌড়ঝাঁপও করতে হবে না। বিআরটিসির চালু করা এসপাস (স্মার্ট পাস) কার্ড ঘষে সহজেই চড়া যাবে বাসে। যাত্রীদের কাছেও ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিআরটিসির নতুন এই উদ্যোগ।
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে বিআরটিসি নির্দিষ্ট কিছু বাসে চালু করে এসপাস নামে ই-টিকিটিং পদ্ধতি। প্রাথমিকভাবে উত্তরা থেকে মতিঝিল ও মিরপুর থেকে মতিঝিল রুটের এসি বাসে এই পদ্ধতি চালু করা হয়। ফলে যাত্রীরা টিকিট না কিনে কার্ডে রিচার্জ করে সহজেই যেতে পারে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে।
বিআরটিসি সূত্রে জানা যায়, জাপান আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে চালু করা হয় এসপাস কার্ড। কার্ড কিনতে বাড়তি কোনো মূল্য ধরা হয়নি। কার্ড চালুর প্রথম দিকে ৫০ টাকা দিয়ে কার্ডটি সংগ্রহ করতে হতো। তবে কার্ডের সঙ্গে দেওয়া ৫০ টাকা দিয়ে ভ্রমণ করা যেতো।
পরবর্তী সময়ে কার্ড কিনতে ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু সেই পরিমাণ টাকা কার্ডের মধ্যেই রিচার্জ করা ছিল। ফলে যাত্রীরা ২০০ টাকার সমপরিমাণ স্থান ভ্রমণ করার সুযোগও পাচ্ছেন।
কার্ডের মূল্য বাড়ানো প্রসঙ্গে জাইকা মনোনীত এক কার্ড বিক্রেতা বাংলানিউজকে জানান, “৫০ টাকায় অনেকে হুজুগে কার্ড কিনেছেন। পরবর্তী সময়ে টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই আর সেই কার্ড ব্যবহার করছেন না। মূল্য একটু বেশি দিয়ে যারা কার্ড কিনবেন, তারা সবসময়ই কার্ড ব্যবহার করবেন। এজন্যই কার্ডের দাম বাড়ানো হয়েছে।”
বিআরটিসির পরিচালক (টেকনিক্যাল) কর্নেল এম এ করিম বাংলানিউজকে বলেন, “এসপাস কার্ডের মাধ্যমে যাত্রীরা অনেক বেশি উপকৃত হচ্ছেন। সবাইকে উদ্বুদ্ধ ও অভ্যস্ত করার জন্য আমরা কার্ডের কোনো মূল্য রাখছি না। যে পরিমাণ টাকা দিয়ে কার্ড কেনা হচ্ছে, সে পরিমাণ টাকায় ভ্রমণের সুযোগও থাকছে।”
তিনি আরো জানান, কার্ড পদ্ধতি চালু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ১৪ হাজার যাত্রী এটা ব্যবহার করছেন। গড়ে প্রতিদিন চার হাজার যাত্রী এই কার্ড ব্যবহার করে গন্তব্যে যাচ্ছেন। দিন দিন কার্ড ব্যবহাকারীদের সংখ্যা বাড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে এসপাস কার্ডের আওতায় রাজধানীতে ৩০টি এসি বাস ও ২২টি ডাবল ডেকার চালু আছে। ধীরে ধীরে এর সংখ্যা বাড়াবার পরিকল্পনা রয়েছে। অন্যান্য রুটেও বিআরটিসির বাসগুলোকে এসপাস কার্ডের আওতায় আনা হবে। পর্যায়ক্রমে ঢাকার বাইরেও এসপাস পদ্ধতি চালু করা হবে বলেও জানা যায়।
ট্রেন ভ্রমণেও কার্ডের এই পদ্ধতি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান বিআরটিসির পরিচালক (টেকনিক্যাল) কর্নেল এম এ করিম। তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে ট্রেনেও কার্ডের মাধ্যমে ভ্রমণের ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা আছে। এতে করে যাতায়াতে মানুষের দুর্ভোগ কমে যাবে। মনে করুন, উত্তরা থেকে কমলাপুর অথবা জয়দেবপুর থেকে উত্তরার ট্রেনে যদি এই পদ্ধতি চালু করা যায়, তাহলে যে কোন যাত্রী এয়ারপোর্ট ট্রেন স্টেশনে নেমে আবার একই কার্ড দিয়ে বাসে চড়েও গন্তব্যে যেতে পারবেন।”
আগামী মাসে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে বাড্ডা রুটের বিআরটিসি বাসে একই কার্ড পদ্ধতি চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছেও জানান তিনি।
এসপাস কার্ড ব্যবহারকারী জেরিন রাফা বাংলানিউজকে বলেন, “সত্যিই অনেক উপকার হয়েছে। রোদে দাঁড়িয়ে টিকেট কেনার ঝামেলা আর পোহাতে হয় না। টাকা শেষ হয়ে গেলে কার্ড রিচার্জ করে নিলেই সব ঝামেলা শেষ হয়ে যায়। এই সুবিধা সব বাসে দেওয়া হলে যাত্রীদের দুর্ভোগ অনেকটা লাঘব হবে।”
একই কথা বলেন খুরশিদ আলম নামে অন্য এক যাত্রী। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, “অনেক জায়গাতে বিআরটিসির কাউন্টার নেই। ফলে বাসে চড়া যায় না। কার্ড থাকায় এই সুবিধাটাও পাচ্ছি।”
এসপাস কার্ডের পাইলট প্রকল্পে টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিচ্ছে এনওয়েভ নামে একটি কোম্পানি। ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে তারা এই প্রকল্পে কাজ করার দায়িত্ব পায়। তবে সব ধরনের আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে জাইকা। এই বছরের শেষে এই জাইকার সঙ্গে বিআরটিসির চুক্তি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পটি চালু রাখতে জাইকার সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করা হতে পারেও বলে জানান বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ।
তারা জানান, “যাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে জাইকার সঙ্গে নতুন করে চুক্তির জন্য সব ধরনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। জাইকা অর্থায়ন করলেও এখানে ব্যবহৃত স্ক্র্যাচ কার্ড ও ডিভাইসগুলো ডিউটি ফ্রি করে ছাড়িয়ে আনার সব খরচ বিআরটিসি বহন করছে। ভবিষ্যতেও যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে এ উদ্যোগ চালু রাখার ব্যবস্থা করা হবে।”