কেউ বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বেশি বেতনের কাজ ছেড়েছেন, কেউ উপেক্ষা করেছেন সেই হাতছানি—ব্রত তাঁদের দেশের উন্নয়ন; এবং দেশ তার ফল পেতে শুরু করেছে।
তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দেশের স্বপ্নযাত্রার সারথি হয়েছেন একদল পেশাজীবী তরুণ। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ ডিগ্রিধারী মেধাবী এই তরুণেরা রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের কর্মকর্তা। তাঁদের নিয়ে গড়ে উঠেছে বাপেক্সের ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ দল (থ্রি-ডি সাইসমিক সার্ভে টিম)। দলের সদস্যদের গড় বয়স ৩০-এর মতো।
তাঁদের কাজের ভিত্তিতেই দেশে একের পর এক নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হচ্ছে। বিদ্যমান গ্যাসক্ষেত্রে পাওয়া যাচ্ছে নতুন নতুন গ্যাসের স্তর। সেখান থেকে গ্যাস উত্তোলনও শুরু হচ্ছে। পাওয়া গেছে দুটি তেলক্ষেত্র। এর মধ্যে কৈলাসটিলায় আগামী বছরের এপ্রিল-মে মাসে তেলকূপ খনন শুরু করা হবে। আগস্ট মাসে সেখান থেকে তেল উঠবে।
বাপেক্সের এসব কাজের স্বীকৃতি মিলছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন মহল থেকেও। জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি আগামী বছর স্বাধীনতা পদক দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে বাপেক্সের নাম সুপারিশ করেছে।
নিবিড় অনুসন্ধান
ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপে উপগ্রহভিত্তিক ‘ট্র্যাকিং সিস্টেম’ (পৃথিবীর অবস্থান সাপেক্ষে অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ অনুযায়ী সুনির্দিষ্টভাবে কোনো স্থান নির্ধারণের পদ্ধতি) থেকে শুরু করে সর্বাধুনিক সব প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে ওই তরুণ দলের দক্ষ হাতে। ভূগর্ভে ডিনামাইট ফাটিয়ে শব্দসংকেতের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয় একেকটি গ্যাসক্ষেত্রের আট কিলোমিটার (আট হাজার মিটার) গভীরের প্রতি ইঞ্চি জায়গার উপাত্ত।
এই অনুসন্ধান জরিপ এতই নিবিড় ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর একটি কাজ যে, এর মাধ্যমে ভূগর্ভের প্রতি ইঞ্চি জায়গার তথ্য ৪৮ বার করে সংগৃহীত হয়। দক্ষতার সঙ্গে করে যাওয়া এই কাজ বাপেক্সকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে দিয়েছে। গ্যাসক্ষেত্রগুলোর প্রকৃত মজুদের চিত্র নির্দিষ্টভাবে জানা যাচ্ছে।
এ দেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের ১০০ বছরের ইতিহাসে রাষ্ট্রীয় কোম্পানির পরিচালিত ত্রিমাত্রিক জরিপ এই প্রথম।
কেন করা হয়
প্রযুক্তির অভাব, আর্থিক দৈন্য, সর্বোপরি রাষ্ট্রীয় অবহেলার কারণে বাপেক্সের আজকের সামর্থ্য গড়ে উঠতে অনেক সময় লেগেছে। তাই এর আগে রাষ্ট্রীয় কোনো গ্যাসক্ষেত্রে ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ করা যায়নি। ফলে বিদ্যমান ক্ষেত্রগুলোতেও গ্যাসের মজুদ সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা ও হিসাব ছিল না।
বাপেক্স ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ শুরু করার পর ইতিমধ্যে ছয়টি ক্ষেত্রের (রশীদপুর, কৈলাসটিলা, হরিপুর, তিতাস, বাখরাবাদ ও সালদা) মোট ১৩৭০ কিলোমিটার এলাকায় মাঠপর্যায়ের উপাত্ত সংগ্রহ শেষ করেছে। এরপর গবেষণাগারে ওই উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ইতিমধ্যে প্রথম তিনটি ক্ষেত্রের ফলাফলও ঘোষণা করা হয়েছে।
তাতে রশীদপুরে গ্যাসের মজুদ আগের হিসাবের তুলনায় বেশি পাওয়া গেছে। কৈলাসটিলা ও হরিপুরে গ্যাসের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে তেলের অবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। জরিপের ভিত্তিতে পেট্রোবাংলা ওই দুটি ক্ষেত্রকে তেলক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করেছে। জরিপের ফল অনুযায়ী কূপ খনন করে কৈলাসটিলায় নতুন দুটি স্তরে গ্যাস পাওয়া গেছে। এখন অন্য তিনটি ক্ষেত্রের উপাত্ত বিশ্লেষণের কাজ চলছে। এ বছরের মধ্যে এগুলোর ফলাফলও জানা যাবে।
কীভাবে করা হয়
কারিগরি ও ব্যবস্থাপনাগত দিক দিয়ে ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপকে বলা যায় এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। এই জরিপের প্রধান উপাদানগুলো হচ্ছে: উপগ্রহভিত্তিক ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করে ডিনামাইট বিস্ফোরণ এবং তার শব্দসংকেত থেকে পাওয়া উপাত্ত সংগ্রহের জন্য জিওফোন স্থাপনের সুনির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করা; বিস্ফোরক স্থাপনের জন্য নির্দিষ্ট দূরত্বে স্থানভেদে ১২ থেকে ১৬ মিটার গভীর গর্ত খনন; ৫০ মিটার পর পর ওই সব গর্তে বিস্ফোরক স্থাপন ও বিস্ফোরণ ঘটানো; ওই বিস্ফোরণের শব্দসংকেতের মাধ্যমে পাওয়া উপাত্ত ৫০ মিটার পর পর রেকর্ড করা; কম্পিউটারে সেই উপাত্তের মান যাচাই; প্রয়োজনে নুতন করে কোনো স্থানের উপাত্ত সংগ্রহ ও পুনরায় তা যাচাই করা এবং সবশেষে ওই উপাত্ত ল্যাবরেটরিতে বিশ্লেষণ করে ফলাফল বের করা।
বাপেক্সের তরুণ বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তা দলটি সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটির কারিগরি ও ব্যবস্থাপনাগত দিকগুলো পরিচালনা করে। পাশাপাশি তত্ত্বাবধান করে প্রায় এক হাজার ৩০০ অভিজ্ঞ কর্মীর উপরিউক্ত কায়িক শ্রম ও আধা দক্ষ শ্রমিকের কাজগুলো।
মার্কিন সেনাবাহিনীর অনুমতি
জাতিসংঘের অনুমোদন নিয়ে পৃথিবীব্যাপী ‘ট্র্যাকিং সিস্টেম’ তৈরি করে রেখেছে মার্কিন সেনাবাহিনী। সামরিক ও কৌশলগত প্রয়োজনে পৃথিবীর যেকোনো স্থান নির্ভুলভাবে নির্ণয় করার জন্য তারা এটি করে রেখেছে। এই পদ্ধতি ব্যবহার করেই তারা পৃথিবীর যেকোনো লক্ষ্যে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারে।
বাংলাদেশেও এ রকম ৪০টি স্থান রয়েছে, যেখানে ‘রিয়াল টাইম কিনেমেটিকস (আরটিকে)’ নামক যন্ত্র স্থাপন করে পৃথিবীর অবস্থান সাপেক্ষে যেকোনো স্থান নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা যায়, ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপের জন্য যা অপরিহার্য।
তবে এসব স্থান ব্যবহার করার জন্য মার্কিন সেনাবাহিনীর অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। তারা অনুমোদন দিলেই কেবল উপগ্রহ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য ‘আরটিকে’ নামক যন্ত্রে ধরা পড়বে এবং সেই তথ্য ব্যবহার করে স্থান নির্ধারণ করতে হবে। সাধারণত তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য মার্কিন সেনাবাহিনী এই অনুমোদন দেয়। বাপেক্সকেও সেই অনুমোদন নিতে হয়েছে। তবে শর্তও দিয়ে দেয় যে এই পদ্ধতি অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
২০১০ সালে শুরু
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ক্ষেত্রগুলোতে ত্রিমাত্রিক জরিপের কাজ শুরু হয় ২০১০ সালের মে মাসে।
কিন্তু বর্ষাকাল মাঠপর্যায়ে ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপের মাধ্যমে উপাত্ত সংগ্রহের উপযুক্ত সময় নয়। তার পরও রশীদপুর গ্যাসক্ষেত্রের ৫৩ বর্গকিলোমিটার এলাকায় তখনই জরিপ সম্পন্ন করা হয়। এরপর বর্ষাকালীন বিরতি শেষে পুনরায় কাজ শুরু করা হয় ওই বছরের ৫ অক্টোবর।
শুরুতে উপগ্রহভিত্তিক ‘ট্র্যাকিং সিস্টেম’ ব্যবহার করে গ্যাসক্ষেত্রের প্রকৃত অবস্থান নির্ণয় করা হয়। পাশাপাশি চলতে থাকে বিস্ফোরক আমদানি এবং তা সংরক্ষণের জায়গা (পিট ম্যাগাজিন) তৈরির কাজ। এরপর ক্ষেত্রটির মাঠপর্যায়ে চলতে থাকে জরিপ। অর্থাৎ কোথায় কোথায় গর্ত করে বিস্ফোরক বসানো হবে, কোথায়ই বা বসানো হবে জিওফোন।
সেই জরিপ অনুযায়ী প্রতিটি স্থানে গর্ত করে স্থানটি চিহ্নিত করে রাখে ‘ড্রিলিং টিম’। এরপর ওই সব গর্তে বিস্ফোরক স্থাপন করে ‘লোডিং টিম’। এলাকাভেদে আধা কেজি থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত বিস্ফোরক স্থাপন করা হয়। ‘শ্যুটিং টিম’ বিস্ফোরক স্থাপন ঠিকমতো হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করে বিস্ফোরণ ঘটানোর প্রস্তুতি নিয়ে বেতারের মাধ্যমে যোগাযোগ করে ‘রেকর্ডিং ওয়াগন’-এর সঙ্গে।
রেকর্ডিং ওয়াগনটি স্থাপন করা হয় জরিপ এলাকার মাঝখানে। জরিপের কাজ এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে ওয়াগনের অবস্থানও পরিবর্তন করে মাঝখানে রাখা হয়। সেখানে সর্বাধুনিক সফটওয়্যারসমৃদ্ধ কম্পিউটারের সামনে বসেন দুই তরুণ বিশেষজ্ঞ। তাঁরা রেডিও-সংকেতের মাধ্যমে নির্দেশ দিলে শ্যুটিং টিম একেকটি গর্তে বিস্ফোরণ ঘটায়। সেই বিস্ফোরণের শব্দতরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে ভূগর্ভের আট কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত এবং চারপাশের নির্দিষ্ট এলাকায়। একেকটি বিস্ফোরণের শব্দতরঙ্গ মোট এক হাজার ৪৪০টি চ্যানেলের মাধ্যমে উপাত্তসংকেত পৌঁছে দেয় জিওফোন বা রিসিভিং পয়েন্টে।
এই পুরো প্রক্রিয়াটি রেকর্ডিং ওয়াগনে বসে পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেখানকার কম্পিউটারে উপাত্ত সন্নিবেশিত হয়। এবার তা পাঠানো হয় ‘বেইজ ক্যাম্প ১’-এ। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিসজ্জিত ওই ক্যাম্পে রাতভর চলে সংগৃহীত উপাত্তের মান যাচাই। কোনোটির মান খারাপ দেখা গেলে সেখানে আবার পরদিন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নতুন করে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। আর সব ঠিক থাকলে ওই উপাত্ত ঢাকার বিশ্লেষণ কেন্দ্রে বা গবেষণাগারে পাঠানো হয়।
ব্যয় কম, উন্নত মান
পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্রের মোট এক হাজার ২৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকার ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপের কাজে বাপেক্সের জন্য মোট বরাদ্দ ১৬৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এই টাকা বিদেশি কোম্পানির লাগে একটি ক্ষেত্র জরিপে। এ ছাড়া, এই জরিপ প্রকল্পের অনুমোদিত জনবল যা ছিল, বাপেক্স কাজ করেছে তার প্রায় অর্ধেক জনবল নিয়ে। যে সময় কাজের জন্য নির্ধারিত ছিল, তার চেয়ে কম সময়ে কাজ শেষ করেছে তারা। এ জন্য অবশ্য তরুণ দলের প্রতিটি সদস্যকে দিনে মাঠে, রাতে বেইজক্যাম্পে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। কিন্তু তাঁদের বেতন-ভাতা, থাকা-খাওয়ার সুযোগ-সুবিধা একেবারেই সাধারণ। বিশেষ করে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে তুলনা করলে এর ব্যবধান আকাশ-পাতাল।
বাপেক্সের এই তরুণদলের সামনে এখন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনেক প্রলোভন। তাদের সামনে হাতছানি আছে অর্থ-বিত্তের বিবেচনায় অনেক বড় চাকরির, উন্নত জীবনের। ত্রিমাত্রিক জরিপের বিশেষায়িত কাজ শেখা এসব তরুণের প্রতি বিশেষ নজর পড়েছে বিদেশি কোম্পানিগুলোর। কিন্তু তাঁরা প্রত্যেকে এখন পর্যন্ত তা উপেক্ষা করে চলেছেন।
আমেরিকান কোম্পানি শেভরন পরিচালিত সিলেটের জালালাবাদ ক্ষেত্রে ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটি। আগামী অক্টোবর-নভেম্বর মাসে এই জরিপ শুরু হবে।
এই জরিপ করে দেওয়ার জন্য শেভরন বাপেক্সের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিল। প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, ২৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালানোর কথা। তাতে বাপেক্স রাজিও হয়েছিল। কিন্তু পরে শেভরন প্রায় ৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় জরিপ কাজটি সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেয়। তাতে যে সময় লাগবে, তা বাপেক্সের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ, নিজেদের বিদ্যমান ও নতুন কয়েকটি ক্ষেত্রে ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ চালানোর কর্মসূচি তারা অগেই করে রেখেছে।
এখন শেভরনের জরিপটি করছে জিওকাইনেটিক্স নামের একটি বিদেশি কোম্পানি। কোম্পানিটি সম্প্রতি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাংলাদেশ থেকেও তিন বছরের জন্য একজন পার্টি চিফ এবং আরও কিছু লোক নিয়োগের। তাতে পার্টি চিফের এক মাসের যে বেতন-ভাতা ধরা হয়েছে, তা বাপেক্সের ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপদলের পার্টি চিফের এক বছরের সমান।
বাপেক্সের বর্তমান জরিপদলটিতে একাধিক তরুণ রয়েছেন, বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী জিওকাইনেটিক্সে পার্টি চিফ হিসেবে যোগ দিতে পারেন। কিন্তু তাঁদের কেউই সেখানে যাচ্ছেন না।
বাপেক্সের ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপদলের প্রত্যেক তরুণ এখন যেকোনো উন্নত দেশে বা বিদেশি কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। কিন্তু তাঁদের প্রত্যেকের স্বপ্ন এখন দেশের স্থলভাগে এবং পর্যায়ক্রমে স্থলভাগ ছাড়িয়ে দেশের সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান। দেশের স্বার্থেই তাঁদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্র তৈরি করে দিতে হবে।
পেট্রোবাংলায়, বাপেক্সে অতীতেও অনেক দক্ষ ও মেধাবী তরুণ ছিলেন। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা ব্যক্তিগত যোগ্যতা-দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন। কিন্তু তাঁদের বেশির ভাগই এখানে টিকে থাকতে পারেননি। কারণ, মেধা-যোগ্যতা অনুযায়ী তাঁদের জন্য সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের কোণঠাসা করা হয়েছে। কাজের পরিবেশ বিষিয়ে তোলা হয়েছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে।
এসব কারণেও বাপেক্স পিছিয়ে ছিল। বাপেক্সের বর্তমান তরুণ পেশাজীবীরা যেন তেমন পরিস্থিতির শিকার না হন। তা হলেই এই খাতে দেশ এগিয়ে যাবে। সমৃদ্ধ হবে।
আইওসি ছেড়ে বাপেক্সে
এই জরিপ দলের প্রধান (পার্টি চিফ) মেহেরুল হোসেন ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর আইওসিতে কাজ শুরু করেন। সেখানে তিনি চারটি ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপে অংশ নেন। এরপর এসে যোগ দেন বাপেক্সে।
অনেকেই যেখানে দেশি কোম্পানি ছেড়ে আইওসিতে চাকরি নিতে আগ্রহী, সেখানে তিনি আইওসির চাকরি ছেড়ে দেশি কোম্পানিতে এলেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর চাকরি করার পর আমার বাবা বললেন, বিদেশি কোম্পানির জন্য অনেক কাজ করেছ। এখন দেশের জন্য কিছু করো। তাই বাপেক্সে চাকরি নিয়েছি।’
মেহেরুল বলেন, তিনি মনে করেন, তাঁর বাবার প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। এই দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি আনার জন্য কাজ করতে হবে তাঁদের প্রজন্মকে। মেহেরুলের বাবা মো. আবু বকর হাওলাদার ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। বরিশালের কামারখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনি।
জরিপ দলের অন্য সদস্যরা বলেন, তাঁদের স্বপ্ন হচ্ছে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দেশকে স্বয়ম্ভর করে তোলা। শুধু স্থলভাগে নয়, তাঁরা সমুদ্রবক্ষেও ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ চালানোর স্বপ্ন দেখেন।