শেয়ারবাজার: লেনদেন বেড়েছে ব্যাপকভাবে

ঈদের দীর্ঘ ছুটির পর প্রথম কার্যদিবসে গতকাল রোববার পুঁজিবাজারে লেনদেন ব্যাপকভাবে বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে মূল্যসূচক।
প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এ দিন মূল্যসূচক বেড়েছে ১২৭ পয়েন্ট বা তিন শতাংশ। লেনদেন হয়েছে প্রায় ৫২৬ কোটি টাকার।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক বেড়েছে ৩৬২ পয়েন্ট বা দুই দশমিক ৮২ শতাংশ। এই বাজারে দিন শেষে মোট লেনদেন দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা। দুই বাজারে সম্মিলিতভাবে এ দিন ৫৮১ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।
রমজান মাসে লেনদেনের সময়সূচিতে কিছুটা পরিবর্তন হলেও গতকাল থেকে আবার সকাল সাড়ে ১০ থেকে লেনদেন শুরু হয়। একটানা তা বেলা আড়াইটা পর্যন্ত চলে।
এদিকে গতকাল থেকে তালিকাভুক্ত কোম্পানি গ্রামীণফোনের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ারের ওপর থেকে বিক্রি নিষেধাজ্ঞা (লকইন) উঠে গেছে। এতে কোম্পানিটির লেনদেনযোগ্য শেয়ারের সংখ্যা বেড়ে গেছে। ফলে এখন থেকে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাজারের মূল্যসূচকের ঊত্থান-পতনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।
বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে জানান, ঈদের আগের কয়েক দিন বাজারে ঊর্ধ্বমুখী ধারা ছিল। ঈদ-পরবর্তী প্রথম লেনদেনে তারই ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা গেছে। ব্যক্তি-শ্রেণীর বড় বিনিয়োগকারীরাও বাজারে সক্রিয় রয়েছেন। এ ছাড়া পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নের বিষয়ে এক ধরনের আশার আলো দেখা যাচ্ছে, যা বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।
এ দিন ঢাকার বাজারে ২৭১টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ বা ২৪৩টিরই দাম বেড়েছে, কমেছে ২৪টির বা আট দশমিক ৮৬ শতাংশের আর অপরিবর্তিত ছিল চারটির। দিন শেষে লেনদেন আগের কার্যদিবসের চেয়ে প্রায় ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। ১৪ আগস্ট ঈদের আগের সর্বশেষ কার্যদিবসে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৬৩ কোটি টাকা। গতকাল তা সোয়া ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত চার মাসের ব্যবধানে এটিই ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন।
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে গতকাল খাতভিত্তিক মূল্য বৃদ্ধিতে শীর্ষে ছিল প্রকৌশল খাত। এ দিন এই খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম প্রায় পৌনে ছয় শতাংশ বেড়েছে। এরপর মূল্য বৃদ্ধির তালিকায় ছিল যথাক্রমে বিদ্যুৎ-জ্বালানি, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সাধারণ বিমা ও বস্ত্রখাত।
ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক গতকাল দিন শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় চার হাজার ৩৮৩ পয়েন্টে। গত ২ জুলাইয়ের পর এটিই ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচকের সর্বোচ্চ অবস্থান।
চট্টগ্রামের বাজারের সার্বিক মূল্যসূচক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ১৯৮ পয়েন্টে। এ দিন সেখানে ১৮৮টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়। এর মধ্যে ৮৪ শতাংশ বা ১৫৭টির দাম বেড়েছে, কমেছে ২৩টির আর অপরিবর্তিত ছিল আটটির দাম। দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল আগের দিনের চেয়ে ১৭ কোটি টাকা বেশি। ঈদের আগের সর্বশেষ কার্যদিবসে সিএসইতে ৩৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল।
সূচকে গ্রামীণফোনের প্রভাব: ডিএসইর হিসাবে, গ্রামীণফোনের শেয়ারের দরপতনের কারণে গতকাল সূচক কমেছে ৮ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট। কোম্পানিটির শেয়ারের এক টাকা মূল্য বৃদ্ধি বা দর হ্রাসের কারণে সূচকের ৩ দশমিক ৪৯ পয়েন্টের তারতম্য ঘটে। এর আগে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ারে লকইন থাকায় সূচকে এই প্রভাব ছিল দশমিক ৭৪ পয়েন্ট।
গ্রামীণফোনের শেয়ারের কারণে এ দিন সূচকে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও অধিকাংশ কোম্পানির মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে শেষ পর্যন্ত মূল্যসূচক ইতিবাচকই ছিল। এ দিন ডিএসইর সাধারণ সূচকের ঊর্ধ্বগতির পেছনে বড় ভূমিকা ছিল তিতাস গ্যাস, আইসিবি, বেক্সিমকো, পদ্মা অয়েল ও বিএসআরএম স্টিলের। এই পাঁচ কোম্পানি মিলে সূচকে যোগ করেছে ৩৪ পয়েন্ট।