বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য-বিনিয়োগ সহযোগিতা চুক্তি (টিকফা) সই বাংলাদেশের জন্য আটকে নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস। ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনার শনিবার দেওয়া বক্তব্যর পরিপ্রেক্ষিতে আজ রোববার তিনি এ কথা বলেন।
ভারতে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণ শেষে দেশে ফিরে আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। পররাষ্ট্র সচিব আরো বলেন, টিকফা আলোচনার টেবিলে আছে। বাংলাদেশ এই আলোচনা চালিয়ে যেতে রাজি আছে।
টিকফা চুক্তি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাওয়া সম্ভব নয় এবং চার বছরে এই টিকফা সই না হওয়া নিয়ে মজিনা শনিবার হতাশা প্রকাশ করেন। এ মন্তব্য সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রথমত, একজন রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যর জবাবে আমি কোনো কথা বলবো না। তবে আমি এতটুকু বলবো যে টিকফা বাংলাদেশের জন্য আটকে নেই। টিকফা কেন আটকে আছে, তা তাকেই আপনাদের জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল- বলেও মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র সচিব।
তিনি বলেন, চুক্তি তো একটি সমঝোতা, এতে কেউ যদি অনঢ় হয়ে থাকে তবে তো সমস্যা। টিকফা চুক্তি তাহলে কোথায় আটকে আছে- এমন এক প্রশ্নের জবাবে কায়েস বলেন, চুক্তি তো এমন কোনো বিষয় নয় যে, আপনি একটি কাগজ নিয়ে এলেন আর আমরা সই করে দেবো। তিনি বলেন, খসড়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তারা আমাদের প্রস্তাব দিয়েছেন, এরপর আমরা দিয়েছি, সেখানটায় চুক্তিটি দাঁড়িয়ে আছি। তিনি আরো বলেন, আলোচনার যে জায়গায় এটি দাঁড়িয়ে আছে, এখন কেউ যদি বলে আর আলোচনা হবে না, এখন সই করুন, তাহলে তো হয় না।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এখনও এটি আলোচনার টেবিলে আছে, তাই এটি নিয়ে বাংলাদেশ এখনো আলোচনা চালিয়ে যেতে রাজি আছে।
বাংলাদেশের শ্রমমান ও শ্রমিক অধিকার সম্পর্কে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশ আইএলও’র যতগুলো কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও হয়তো ততগুলোতে সই করেনি। শ্রমিক অধিকারের প্রতি বাংলাদেশের ‘কমিটমেন্ট’ খুবই দৃঢ়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পণ্যের ওপর মার্কিন সরকার ১৬ থেকে ৩২ শতাংশ শুল্কারোপ করে। এক্ষেত্রে আমাদের পণ্য ১০০ ডলারে বিক্রি করতে হলে তার উত্পাদন খরচ ৬৮ ডলারের মধ্যে রাখতে হয়। যেটা যুক্তরাজ্য বা অন্য কয়েকটি দেশের জন্য দিতে হয় না। সচিব বলেন, এখন তারা যদি এই অতিরিক্ত শুল্ক না নেয় তাহলেই তো এদেশের শ্রমিকদের বেতন আরো বাড়ানো যাবে। কিছুদিন আগেই এদেশে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণ এবং প্রতিবেশি ভারতের তিনটি রাজ্য ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা জানিয়ে মিজারুল কায়েস বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সই হওয়া বিভিন্ন সমঝোতা ও চুক্তি ‘দ্রুততার সঙ্গে’ বাস্তবায়নের ওপর আমরা জোর দিয়েছি। তিনি বলেন, আমি ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে বলেছি, যে এসব বাস্তবায়ন না হলে তা দুই দেশেই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এসব চুক্তি ও সমঝোতা বাস্তবায়িত হলে তার সুফল দুই দেশের সরকারও পাবে।
তিনি বলেন, স্থল সীমান্ত চুক্তি নিয়ে ভারত এই সপ্তাহে একধাপ এগিয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিস্তা চুক্তি কবে হবে এমন কোনো দিনতারিখ নিয়ে আমরা কাজ করছি না। আমরা আশা করি চুক্তি হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সীমান্তে হত্যা কমে আসার তথ্য ভালো খবর, কিন্তু আমরা এটাকে শূণ্য দেখতে চাই। আমরা ভারতকে বলেছি, ‘সীমান্তে একটি মৃত্যুও গ্রহণযোগ্য নয়।’ এবারের বৈঠকে ভারত বন্দি বিনিময় চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের এ সম্পর্কিত কমিটি বৈঠক করে বিষয়টিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। ভারতের ১০০ কোটি ডলার ঋণের ব্যাপারে সচিব জানান, ৫টি প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশের কিছু উদ্বিগ্নতা রয়েছে। যা আগামী সপ্তাহে ভারতকে বিস্তারিত জানানো হবে।
তিনি জানান, ভারত আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পে হিমালয় থেকে উত্পন্নগুলোকে না রাখার সিদ্ধান্তে আমরা ধন্যবাদ জানিয়েছি। এছাড়া উত্তরপূর্ব ভারতে জলবিদ্যুত্ প্রকল্পে বাংলাদেশের বিনিয়োগের জন্য ভারত প্রস্তাব দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্ট বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ভারতের ব্যবহার করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আমরা বলেছি, আগে আশুগঞ্জে টার্মিনাল নির্মাণ শেষ করতে হবে। আশুগঞ্জের টার্মিনাল নির্মাণের জন্য সমীক্ষা করতে ভারতের একটি প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশে আসার কথা। ভারত নিজ অর্থে সেখানে এটি নির্মাণ করবে।
ভিন্ন এক প্রশ্নের জবাবে কায়েস বলেন, ভারতের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার মধ্যে রয়েছে দুই দেশের সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রশিক্ষণ ও সফর বিনিময়। এর বাইরেও সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরও এর অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে পররাষ্ট্র সচিবদের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
মিজারুল কায়েস জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিবদের নিয়মিত বৈঠক বছরে দুই বার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে হিসেবে আগামী ডিসেম্বরে পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা বৈঠকে বসবেন। এর আগেই হবে সচিবদের বৈঠক।