চিংড়ি অধ্যুষিত খূলনার পাইকগাছায় বিদেশে রপ্তানিযোগ্য চিংড়ির উৎপাদন ভালো হলেও মূল্য হ্রাস পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন চাষিরা। চলতি বছর ৪ হাজার মে.টন নির্ধারিত লক্ষ্য মাত্রার মধ্যে ইতোমধ্যে ৩ হাজার মে.টন (৭৫ শতাংশ) উৎপাদন হয়েছে। বাজার মনিটরিং, অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ও বিদেশে চিংড়ির চাহিদা না থাকা মূল্য হ্রাস পাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট চাষিরা।
সুত্রমতে, জেলার চিংড়ি অধ্যুষিত এ উপজেলায় ৮০’র দশকে শুরু হওয়া লবণ পানির চিংড়ি চাষ ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করায় গত ২৫ বছরে ব্যাপক সম্প্রসারণের মাধ্যমে গোটা উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে উপজেলায় ছোট, বড় মিলিয়ে প্রায় ৪ সহস্রাধিক চিংড়ি ঘের রয়েছে। যার আয়তন প্রায় ২০ হাজার হেক্টর, যা মোট কৃষি জমির দুই তৃতীয়াংশ। চাষ ব্যবস্থাপনায় উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হলেও অধিকাংশ চাষিরা এখনও রয়ে গেছে সনাতন পদ্ধতিতে। বিশেষজ্ঞদের মতে নিবিড়, আধানিবিড় কিংবা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে রোগ-প্রতিরোধসহ যেখানে হেক্টর প্রতি ৭ থেকে সাড়ে ৭শ কেজি উৎপাদন সম্ভব, সেখানে সনাতন পদ্ধতির চাষ ব্যবস্থাপনার কারনে উৎপাদন ২শ থেকে সর্বোচ্চ আড়ইশ কেজির মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। অপর দিকে এ ব্যবস্থাপনায় অতিরিক্ত ব্যয়সহ চিংড়ি ঘেরে রোগ বালাইয়ের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চলতি বছর সংশ্লিষ্ট মৎস্য অধিদপ্তরের নির্ধারিত ৪ হাজার মে.টন লক্ষ্য মাত্রার মধ্যে গত ৬ মাসে প্রায় ৩ হাজার মে.টন চিংড়ি উৎপাদন সম্পন্ন হলেও গত কয়েকমাস চিংড়ির বাজার মূল্য হ্রাস পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে চাষিরা। অনেক চাষিদের মধ্যে বিনিয়োগকৃত পুঁজি ফেরৎ আসা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
বর্তমানে ১৫ গ্রেডের প্রতি কেজি চিংড়ির মূল্য ৫৪০ টাকা যা মৌসুমের শুরুতেই ছিল ১১শ টাকা। ২০ গ্রেডের ৯০০ টাকার স্থলে নেমে এসেছে ৪৪০ টাকা। ৩০ গ্রেডের ৫৪০ টাকার স্থলে বর্তমান ৩৪০। ৪৪ গ্রেডের পূর্বের ৩৯০ টাকার স্থলে বর্তমান মূল্য দাড়িয়েছে ২৪০ টাকা। অর্থাৎ গড় কেজি প্রতি ২ থেকে ৩শ টাকা মূল্য হ্রাস পাওয়ায় উৎপাদন ভাল হলেও কাঙ্খিত মূল্য পাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট চাষিরা।
চিংড়িচাষি মোমিন সরদার বলেন, এ বছর চিংড়ির উৎপাদন ভাল হলেও বিক্রয়মূল্য কম থাকায় লাভ না হতেও পারে। ব্যবসায়ী আসমাউল জোয়াদ্দার বলেন, মৌসুমের শুরুতেই ১শ কেজি চিংড়ি ক্রয় করে যে লাভ পেতাম এখন ৫শ কেজি চিংড়ি কিনেও সে লাভ হচ্ছে না।
মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউট লোনা পানিকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আজাহার আলী বলেন, চিংড়ি ঘেরগুলোতে উন্নত চাষ ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধসহ বর্তমানের চেয়ে দুই গুণ বেশি চিংড়ি উৎপাদন সম্ভব।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এসএম শহীদুল্লাহ বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করার কারণে দিন দিন বিদেশে চিংড়ি চাহিদা কমে যাচ্ছে।