দ্বিতীয় বাণিজ্যিক রাজধানী হতে পারে দক্ষিণবঙ্গে

মংলা বন্দর আধুনিকায়নে নানা উদ্যোগ

দেশের অন্যতম প্রধান নৌবন্দর মংলাকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই বন্দরকে ব্যবসাবান্ধব করার পাশাপাশি যশোরের বেনাপোল, সাতক্ষীরার ভোমরা ও চুয়াডাঙ্গার দর্শনা বন্দরকে ঘিরে দক্ষিণবঙ্গকে দেশের দ্বিতীয় বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন ব্যবসায়ীরা। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সাথে যশোরের ব্যবসায়ীদের এক মতবিনিময় সভায় এসব বক্তব্য উঠে আসে।

মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর এ কে আজাদ ব্যবসায়ীদের জানান, সরকার চায় মংলা বন্দরকে বেশিমাত্রায় ব্যবহার  উপযোগী করতে। ব্যবসায়ীরা এই পোর্ট ব্যবহারে এগিয়ে আসলে তা এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তিনি জানান, বর্তমানে বন্দরের ৪টি শেডে ৬০ হাজার টন পাট ও সার রাখা যায়। তবে দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম রপ্তানি পণ্য পাটের জন্য পৃথক কন্টেইনার শেড দরকার মন্তব্য করে তিনি জানান, বিএডিসির সারের জন্যও শেড নির্মাণ করা হবে। বন্দরে পৃথক আরো ২টি কন্টেইনার ইয়ার্ড করা হবে, যেখানে নিজস্ব ক্রেন দিয়ে জাহাজ থেকে মালামাল সরাসরি ইয়ার্ডে নেয়ার ব্যবস্থা থাকবে। বন্দরে আরো ২টি হেভি জেটিরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

মংলা বন্দরের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান জানান, বন্দরের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। লাইট, ওয়াচ টাওয়ার ও দেওয়াল তৈরি করা হয়েছে। খুব শিগগিরই পোর্টে সিসিটিভি বসানো হবে। প্রতিবছরের শুরুতে ইউএস কোস্টগার্ড মংলা বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করে থাকে এবং তারা এখানকার নিরাপত্তায় সন্তুষ্ট। তিনি জানান, জাহাজ থেকে মোটরগাড়ি খালাসের সাথে জড়িত চালকদের কঠোর নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনে গাড়ি খালাসের সময় সিকিউরিটি স্টাফদের সেখানে নিয়োজিত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৫ জন ড্রাইভারকে মংলা পোর্টে অবাঞ্ছিত করা হয়েছে।

কমোডর এ কে আজাদ আরো বলেন, মংলার সাথে খুলনার ৪৩ কিলোমিটারের রেললিংক হতে যাচ্ছে। এজন্য পশুর নদীর ওপর পৃথক রেলওয়ে ব্রিজ দরকার হবে। এতে মংলা বন্দরের সাথে যশোর হয়ে উত্তরবঙ্গের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে এবং চট্টগ্রামের চেয়ে কম খরচে ব্যবসায়ীরা এ পথ ব্যবহার করে লাভবান হবেন। ইতিমধ্যে মংলা বন্দরে জাহাজের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। ২০০৯ সালে ১২৮টি, ২০১০-এ ১৯০টি, ২০১১-তে ২৭২টি এবং এ বছর এরই মধ্যে ২৩৪টি বিদেশি জাহাজ মংলা বন্দরে এসেছে বলে পোর্ট চেয়ারম্যান জানান।

যশোরের ব্যবসায়ী নেতারা মংলা বন্দরের বেশকিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করে তা নিরসনের দাবি জানান। যশোর শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, আমরা দক্ষিণবঙ্গের মানুষ ঘরের পোর্ট ব্যবহার করতে চাই। ইতিমধ্যে মংলা বন্দর ব্যবহার শুরুও করেছি। সময় ও অর্থ সাশ্রয় ব্যবসায়ীদের স্বাভাবিক চাওয়া। এই বন্দরের ব্যয়ও কম। তবে ল্যান্ডিং বিল পরিশোধে সময়ক্ষেপণ, শুল্কায়ন ও রাস্তার অব্যবস্থাপনা সমস্যা নিরসন হলে দেশের প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোল, সমুদ্র বন্দর মংলা, ভোমরা ও হিলি স্থলবন্দরের মাধ্যমে দক্ষিণবঙ্গ খুব শিগগিরই দেশের দ্বিতীয় বাণিজ্যিক রাজধানী হিসাবে গড়ে উঠবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সভাকক্ষে গত বুধবার দুপুরে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় যশোর শিল্প ও বণিক সমিতির ২৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেন। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (উন্নয়ন ও প্রকৌশল) কামরুল ইসলাম, সদস্য (পরিচালন) আলতাফ হোসেন, সদস্য (অর্থ) আব্দুল মান্নান, সচিব হেলালউদ্দিন ভুঁইয়া, খুলনা কস্টমসের যুগ্ম কমিশনার হোসেন আহমেদ প্রমুখ।

NewImage

শনিবার, ৭ জুলাই ২০১২, ২৩ আষাঢ় ১৪১৯